নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হলো রাজশাহীর চারঘাট গণহত্যা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে পৌরসভা চত্ত্বরে চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
দিনের শুরুতেই ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকসেনাদের হাতে নির্মমভাবে যারা শহীদ হন তাদের স্মরণে চারঘাট পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ। এরপর পৌরসভা চত্ত্বরে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনোয়ার হোসেন, চারঘাট পৌর মেয়র একরামুল হক, পৌর আ'লীগের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, পদ্মা বড়াল থিয়েটারের সভাপতি এখলাক হোসেন লাভলু, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল-মামুন তুষার, সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক রানা প্রমুখ।
চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম বলেন, শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমান সরকার একাত্তরের ঘাতক ও রাজাকারদের ফাঁসি কার্যকর করে শহীদদের আত্মাকে শান্তি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৩ এপ্রিল রাজশাহীর চারঘাট গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় তিন শতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। সেই থেকে দিনটি চারঘাট গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
চারঘাট গণহত্যা নিয়ে কথা হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। তারা জানান, একাত্তরে চারঘাট পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ক্যাম্প। ১৩ এপ্রিল দুপুরে পাক হানাদার বাহিনী ২০ থেকে ২৫টি গাড়িতে করে সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করলে মুক্তিযোদ্ধারা তা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন।
কিন্তু পাক সেনাদের ভারি অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা সে দিন প্রাণপণে যুদ্ধ করেও টিকতে পারেননি। এ সময় চারঘাট বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হায়েনাদের গুলি বর্ষণে মুক্তিযোদ্ধাসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি শহীদ হন। বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পদ্মার পাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানেও তাদের ঘিরে ফেলে হায়েনারা।
এরপর তাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়। হানাদার বাহিনী সমবেত জনতার মধ্য থেকে নারী ও শিশুদের বের করে দিয়ে শুধু পুরুষদের কয়েকটি লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দেয়। এরপরই গর্জে ওঠে মেশিনগান। প্রাণ হারান থানাপাড়া ও এর আশপাশের গ্রামগুলোর প্রায় দুই শতাধিক পুরুষ।
প্রতিবছর এই ১৩ ই এপ্রিল চারঘাটবাসী শ্রদ্ধা ভরে সরণ করে বীর শহীদদের। সরকারী ও বেসরকারি ভাবে দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে করোনার কারণে এবার এই দিবস সংক্ষিপ্ত পরিসরে উদযাপন করা হচ্ছে।