সাম্প্রতিক সময় পোলট্রি ফিডর দাম বেড়ে গেছে। তাতে বিপাকে পড়েছে দেশের হাজার হাজার খামারী। সম্প্রতি ৫০ কেজি ব্রয়লার মুরগির খাদ্যের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা আর লেয়ারের দাম ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ৭৫ টাকা। প্রতি টন পোলট্রি খাদ্যের দাম বর্তমানে ৪১ হাজার টাকা, যা গত বছর ছিল ৩১ হাজার টাকা। এমনিতেই করোনার ধাক্কায় পোলট্রি খামারীরা ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা। তার মধ্যেই মহামারির প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর নতুন লকডাউনে দেশের পোলট্রি খাত আবারো ক্ষতির মুখে পড়েছে। আর এর মধ্যেই হঠাৎ করে বেড়ে গেছে পোলট্রি ফিডের দাম। বর্তমানে প্রতি টনে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছর এক টন পোলট্রি ফিডের দাম ছিল ৩১ হাজার টাকা। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে পোলট্রি ফিডের দাম বাড়লে লকডাউনে মুরগির দাম কমছে। এমন অবস্থায় অনেক খামারীই লোকসানের কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে। বিগত ২০২০ সালের লকডাউনে দেশে ৩০-৩৫ শতাংশ পোলট্রি ফার্ম বন্ধ হয়ে যায়। আর করোনায় সব মিলিয়ে পোলট্রি খাতে ক্ষতি হয় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ব্রিডার্স ইন্ডাস্ট্রি খাতে ৪৫৮ কোটি টাকা, ফিড শিল্পে ৭৫ কোটি টাকা, বাণিজ্যিক পোলট্রি (ডিম ও মাংস) খাতে ৫০৩ কোটি টাকা, প্রসেসড ইন্ডাস্ট্রিতে ৩১ কোটি টাকা ও ওষুধ মিনারেল প্রিমিক্সসহ অন্যান্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৮৩ কোটি টাকা। করোনাকালে এমনিতেই খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা উৎপাদন মূল্যই পাচ্ছে না। তার মধ্যে পোলট্রি ফিডের দাম বস্তাপ্রতি ৫০-৭৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ ভুট্টার মৌসুমে ফিডের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই বলে পোলট্রি খাত সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন।
এদিকে দেশের পোলট্রি খাতের বিদ্যমান অবস্থা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান জানান, পোলট্রি ফিড তৈরির উপকরণ ভুটা ও সয়াবিনসহ সবকিছুর দাম ৩০-৩৫ শতাংশ বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে মুরগির মাংস ও ডিমের মূল্য বাড়েনি। বেশি দাম দিয়ে খাবার কিনে ফার্মে মুরগি পালন করা খামারীদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। যদিও বিশ্বব্যাপীই খাদ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু তার ফলে লোকসান গুনতে গিয়ে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ জানান, লকডাউনে প্রান্তিক খামারিরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়ে সেজন্য ভিন্ন চিন্তা করা হচ্ছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে পণ্য বাজারজাতের ব্যবস্থা করা হবে। সেজন্য পরিবহণ ও বিক্রির ব্যবস্থায় সব ধরনের সহায়তা করা হবে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করে দিতে পারলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তাছাড়া পোলট্রি খাদ্যের বাজারের ওপরও সরকারের নজরদারি রয়েছে। সিন্ডিকেট করে মূল্য বাড়ানো হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ নিয়ে পোলট্রি খাতের সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।