শেরপুরের নালিতাবাড়ী ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা খলচান্দা, কোচ পাড়া এলাকায় পাকা ধান খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে বন্য হাতির দল।
গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে তখন পাকা বোরো ধান ক্ষেতে হামলা চালায় বন্য হাতির দল। এ সময় হাতির দল ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে শেষ করে ফেলে ধান ক্ষেত। মাত্র কয়েকদিন পড়েই এসব ধান কৃষকের গোলায় ওঠতো। কিন্তু তা আর হল না। ধান কাঁটার এমন সময় কৃষকের এই অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেল। অনেকেই হাতি আতঙ্কে পাহাড়ের ঢালে আবাদি এসব ধান পাহাড়া দিচ্ছে এলাকার কৃষকরা এবং পাহাড়ি অঞ্চলে হাতি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তারা। কেউ কেউ আবার হাতির আক্রমণের ভয়ে কাঁচা ধান কেটে ফেলছে। তবুও থেমে নেই বন্য হাতির দল। পাহাড়িবাসী যখন রাত জেগে ক্লান্ত হয়ে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ে তখন পাহাড় থেকে নেমে আসে এই হাতিরা।
স্থানীয়রা জানায়, এসব বন্য হাতি খুব হিংস্র। ঢাক ডোল পিটিয়ে মশাল জ্বালিয়ে হৈ হুল্লুর করে হাতির দলকে তাড়া করলেও এখন আর ভয় পায় না তারা। পাল্টা আক্রমণ করতে আসে মানুষকে। যুগ যুগ ধরে পাহাড়িবাসী হাতির সাথে যুদ্ধ করে আসছে। তবুও থামছে না হাতির আক্রমণ। ক্ষেতের ধান যখন ঘরে ওঠার সময় হয় তখনি হাতির অত্যাচার বৃদ্ধি পায়। আবার গাছে ফল পাকার সময় হলেও হাতির দল নেমে আসে লোকালয়ে। তান্ডব চালায় গাছপালা ও বাড়িঘরে। ধ্বংস করে দেয় সব।
এদিকে রোববার ও সোমবার ( ২৫-২৬ এপ্রিল) রাতে পাহাড়িবাসী মনে করেছিল হাতির দলটি গত কয়েক দিনের তাড়া খেয়ে ভারতের গহীন অরণ্যে চলে গেছে। এটা নিশ্চিত হয়ে খলচান্দা গ্রামের কোচ পরিবারগুলো রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। সুনসান নিরবতায় ৫০/৬০ টি বন্য হাতি দলবদ্ধভাবে ভারতীয় সীমা ঘেষাঁ আবাদি পাকা বোরো ধানে হামলা চালায়। আশপাশে কোনো বাড়িঘর না থাকায় হাতির আক্রমণের শব্দ কারো কানে পৌঁছায়নি। তাই ইচ্ছেমতো হাতি পাকা ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে ধ্বংস করে দেয় সব। রাত পোহালে কৃষক ক্ষেতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে যায়।
এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপেন্দ্র কোচ পরিবার। মুক্তিযোদ্ধা গোপেন্দ্র কোচের সন্তান বাঁধন কোচ, সে ৬০ শতাংস জমি আবাদ করে বহু কষ্টে। বুনো হাতির দল সমস্ত ক্ষেতের ধান খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে। ফসলের মধ্যে আবাদি এই জমির ধানই ছিল তাদের পরিবারের একমাত্র ভরসা। এখন তাদের অন্যত্র কাজ করে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হবে বলে তিনি জানান।
তাছাড়া খোকন কোচ এর ৬০ শতাংস, শ্রীকান্ত কোচের ৫০ শতাংস, সুকুমার কোচের ২৫ শতাংশ, বকুল কোচের ২০ শতাংস জমির ধান হাতি সাবাড় করেছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ এই পরিবারগুলো জানান।
বাঁধন কোচ (২৫) বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা এসব ধান কাটতাম। এরমধ্যে আজকে রাতেই শেষ। এমন হলে আমরা কেমনে চলবো। চলার মতো আমাদের কোনো উপায় নেই। সারা বছরই হাতি আমাদের এমন ক্ষতি করছে। তাই সরকারের কাছে দাবি হাতির আক্রমণ থেকে তারা রেহাই পেতে চান।
পরমেশ্বর কোচ (২৮) বলেন, হাতির অত্যাচারে আমরা ঘুমাতে পারছি না। সব শেষ করে দিচ্ছে। হাতির আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে তিনি সোলার বাতির জন্য দাবি জানান সরকারের কাছে।
পোড়াগাঁও ইউনিয়নের উদ্যোক্তা মোরশেদ বলেন, বন্য হাতির দল দল বেধে পাহাড়ী এলাকায় ফসলের ক্ষেতে নেমে ধান খেয়ে সাবাড় করেছে। ফসলের ক্ষতি করেছে। এজন্য প্রশাসন হতে ৭৫ জন কৃষকের মাঝে ৫ লিটার করে তেল দেওয়া হযেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা উপজেলায় পাঠিয়েছি।
নালিতাবাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, এলাকা পরিদর্শন করেছি। মশাল জ্বালাতে তেল দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে।