বাজার ও শপিংমল খোলা রেখে আবারও বাড়লো লকডাউন। ২৯ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত চলা লকডাউন শুরুর আগেই চলমান লকডাউন ভেঙে পড়েছে।পথে পথে যানজট ও জনযটে নাকাল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।শুধু বাস বাদে সব পরিবহনই রাস্তায় চলছে।পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশরা অনেক স্থানে চেকপোস্ট তুলে নিয়েছে। বাঁধভাঙ্গা ¯্রােতের মতোই রাজধানীতে সারাদেশ থেকে আসা জন ¯্রােত ঢুকতে। সেখানে নেই কোন স্বাস্থ্য বিধি মানার তোয়াক্কা।ফলে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগী সংক্রমণ।অক্সিজেন সংকটে হাসপাতালগুলোয় রোগী ও স্বজনদের আহাজারিতে ভরে উঠেছে।মৃত্যুর সাথে পাল্লা দিয়ে কেউ বিজয়ী হচ্ছেন আবার কেউ দুনিয়াকে গুডবাই জানাচ্ছেন।মৃত্যুর এ মিছিল থামছে না। তাই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে লকডাউন। ধর্ম মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ঈদুল ফিতরের নামাজ ঈদগাহে না গিয়ে মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পড়ার আহ্বান জানিয়েছে। অথচ যে আমজনতার কল্যাণের জন্যই আহ্বান তারা নিঃশঙ্কচিত্তে পথে-ঘাটে ঘুরছেন।
লকডাউনের এই দুর্বিসহ চলমান সময় অসহায় দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের সাহায্য করছে সরকার। সারাদেশে জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সংশ্লিষ্টদের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।চালু করা হয়েছে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলে খাদ্য পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা।কিন্তু তারপরও মানুষকে ঘরবন্দি রাখা যাচ্ছে না। তারা তাদের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাচ্ছেন।নিজে সংক্রমিত হচ্ছেন পরিবারের অন্যান্যের সংক্রমিত করছেন।করোনার নিষ্ঠুর ছোবল থেকে বাঁচতে পারছেন না। করোনা চিকিৎসায় রাজধানীতে যে বিশেষ হাসপাতালগুলো চালু রয়েছে সেখানে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। সোজ্জা খালি থাকলেও আইসিইউ সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর এরইমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতালগুলোতে আর্থিক অনিয়ম সন্ধান পেয়েছে।কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ এর মতোই স্বাস্থ্যখাতের কর্তা ব্যক্তিরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। অবশ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইতোপূর্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ হাসপাতালে পুকুর চুরির খবর দেশবাসী দেখেছে।কিন্তু কি আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা আর কারো দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
তবে আশার কথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্তার অভিযোগ থাকলেও এই করোনাকালে তাদের মানবিক হয়ে ওঠার দৃষ্টান্ত দেখছে সারা দেশবাসী। তারা সারাদেশেই অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাহায্যের হাত প্রশস্ত করেছে। তবে চট্টগ্রামের পুলিশের মানুষের জন্য ভিন্ন রকম আয়োজন সবার দৃষ্টি কেড়েছে।নগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তানভীরের নির্দেশে ১৮ এপ্রিল থেকে নগরের ১৬টি থানায় বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করা হয়েছে। এ সেবার জন্য থানাগুলোতে এখন ৪৮ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। নগরীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অক্সিজেন প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করলেই পৌঁছে যাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার। এ বিষয়টি ব্যাপক প্রচারণায় না এলেও ভুক্তভোগীরাই উদ্যোগ থেকে সেবা পাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে । অন্যদিকে নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে মাসব্যাপী চালু করা হয়েছে ইফতার অ্যান্ড সেহারি শপ। বিনামূল্যে ইফতারি ও সেহরীর জন্য এ ব্যবস্থা ১৪ এপ্রিল থেকে চালু করেছে পুলিশ। হাসপাতালে অবস্থানরত রোগীদের স্বজন ও আশপাশের দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ গুলো সারিবদ্ধ ভাবে এই ইফতার ও সেহরী নিচ্ছেন। প্রথমে নগর পুলিশ এ উদ্যোগ নিলেও এখন সামর্থ্যবান মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবী বেশ কিছু সংগঠন যুক্ত হয়েছে। তারা ইফতার ও সেহরি তৈরি থেকে তা বিতরণ পর্যন্ত কাজ করছে। এমন উদ্যোগ সারাদেশব্যাপী হলে অধিক মানুষ উপকৃত হবে।
আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত করোনার ছোবলে দিশেহারা হাসপাতালের শোজ্জা, অভাব অক্সিজেনের। প্রতিদিন দু লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মরছে হাজারে হাজার। স্থল সীমান্তের একটা বড় অংশই ভারতের সাথে আমরা যুক্ত। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশে ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ। আকাশ পথ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। শুধু বলা হয়েছে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ কেবল মাত্র তারাই বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন, বেনাপোল ও আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে। তবে তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। দেশে ফেরার জন্য ২৬ তারিখে কলকাতা উপহাইকমিশন কার্যালয়ের ৩০০ আবেদন জমা পড়েছে। কমিশন ভেবেচিন্তে বাছাই করে তাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করবে, কারণ করোনা ভাইরাসের নেগেটিভ সনদ দিয়ে ভারতে গিয়ে পজিটিভ হয়ে বাংলাদেশ ফিরছেন কেউ কেউ। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে গত ১৫ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে বাংলাদেশে এসেছেন ৩৮০১ জন। এর মধ্যে ১২ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ভারত ফেরত এ রোগীদের নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন তাদের দেহে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট রয়েছে। এরইমধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান ১০জন করোনা রোগী। এদের মধ্যে ভারত ফেরত রয়েছেন ৭জন। তাদের সবাইকে আবার পুলিশ চিহ্নিত করে তাদের নিজ নিজ জেলার হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করছে। তবে এরমধ্যে আর তারা কতজন সংক্রমিত করেছেন তার কোনো হিসাব নেই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, ভারতে আশঙ্কাজনকহারে করোনা নতুন বেরিয়েছে ছড়াচ্ছে। ডবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট ভাইরাসের কথা শোনা যাচ্ছে।ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশটির অন্তত ৪টি রাজ্যের এ ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। নতুন ভেরিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশ চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট এ দেশে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। সীমান্তে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভারত থেকে যারা আসবেন তাদের দুই সপ্তাহ বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।
শুধু যাদের করোনা নেগেটিভ আসবে তাদের ছেড়ে দিতে হবে। এ ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিত করা না গেলে বাংলাদেশকে চরম খেসারত দিতে হবে।
দেশে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ এর পেছনে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভেরিয়েন্ট সক্রিয় ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এ ছাড়া দেশে মিলেছে নাইজেরীয় ভেরিয়েন্টও। কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ভারতীয় ট্রিপল মিউটেন্ট ভেরিয়েন্ট, যা প্রতিবেশী দেশটিকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। দেশটির করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু তালিকায় বিশ্বের শীর্ষে উঠে আসার পেছনে এ ভেরিয়েন্ট সক্রিয় বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এ নিয়ে আতঙ্কিত বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলছেন, ট্রিপল মিউট্যান্ট ভেরিয়েন্টের ভাইরাস দেশে ঢুকলে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে ভয়াবহ। বিপর্যয় নেমে আসতে পারে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থায়। কাজেই সবাই নিজে নিজে সাবধান হয়ে নিজে বাঁচুন। অন্যকে বাঁচান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন নিজে নিরাপদ হোন, অন্যকে নিরাপদ রাখুন।