খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মোঃ আলীমুজ্জামান মিলন যোগদানের পর থেকে খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেন এর নির্দেশনা মোতাবেক দিঘলিয়া নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুবুল আলম এর তত্বাবধানে দিঘলিয়া ভূমি অফিসকে ভেতর ও বাইরে থেকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সর্বাত্বকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিগত ছয় মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের একান্ত প্রচেষ্টা এবং উপজেলা পরিষদের সহযোগিতার মাধ্যমে বেশ কিছু দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
এসময় মোঃ আলীমুজ্জামান মিলন দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ছয় মাস আগে ভূমি অফিস ছিল পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট একটি জরাজীর্ণ ভবন। যেখানে ৫ জন সহকারী, ১ জন সার্ভেয়ার, ২ জন প্রসেস সার্ভার,১ জন চেইন ম্যানসহ সকলের বসার জায়গারই সংকুলান হতো না। আবার প্রত্যেক সহকারীর রয়েছে শত শত কেস নথি যেগুলো রাখার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আলমিরা, তাক, এবং সেগুলো রাখার জায়গা ছিলনা। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় নথিগুলো সিঁড়ি,সিঁড়িঘর, আর করিডরে অযতেœ আর অবহেলায় পড়ে থাকতো। সেবা প্রার্থীদের অনেক সময় উপজেলায় এসে ভূমি অফিস খুঁজে পেতেই কষ্ট হতো। তিনি আরও বলেন, সহকারীদের কাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং নথিগুলো যতœ করে রাখার প্রয়াসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা - এর পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা এবং উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় একটি পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনের পরিবর্তে আমাদের এখন হয়েছে একটি ৯ লক্ষ বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবন।
তিনি আরও বলেন, ভূমি অফিসের সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ বিষয় হল রেকর্ড সংরক্ষণ ও পুরাতন নথি সমূহ সুবিন্যাস্তভাবে রাখা। যাতে করে প্রয়োজনে সহজেই এগুলো খুঁজে বের করা যায়। আর এসবের জন্য প্রয়োজন একটি সুপরিসর রেকর্ডরুম। পুরাতন অবিন্যাস্ত,নোংরা,ধুলায় ভর্তি ছোট্ট রেকর্ড রুমের পরিবর্তে আমরা দোতালার দুটি কক্ষের সমান একটি সুপরিসর রেকর্ডরুম স্থাপন করছি; যেখানে বড় বড় দশটি তাকে ভূমি তথ্য থরে থরে সাজানো থাকবে।প্রতিটি নথির বান্ডিলে সালওয়ারি ক্রমানুসারে ট্যাগ লাগানো থাকবে যাতে করে খুব সহজেই আমরা নথি, রেজিস্টার খুঁজে পেতে পারি। আমাদের তাকগুলো চলে এসেছে। এই লকডাউনে আমাদের দু’জন ডেডিকেটেড সহকর্মী নথি বিন্যাসের কাজ করে চলেছেন।আশা করি এই রোজার মাসেই আমাদের রেকর্ডরুমের কাজ শেষ হবে।
নামজারি বা রেকর্ড সংশোধন বর্তমানে ভূমি অফিসের অন্যতম প্রধান সেবায় পরিণত হয়েছে। দিঘলিয়াবাসীর দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিগত ছয় মাসে আমার সকল সহকর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় আমরা প্রায় চার হাজার মামলা নিষ্পত্তি করেছি। ফলে ছয় মাস আগে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা যা ছিল বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।আশা করি চলমান লকডাউন শেষ হবার এক/দেড় মাসের মধ্যে সকল পেন্ডীং মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবো। যেহেতু দিঘলিয়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের পাশাপাশি খুলনা সিটির প্রায় অর্ধেক এলাকার ভূমি সেবা আমাদের অফিস থেকে প্রদান করা হয়। তাই আমাদের কাজের চাপ একটু বেশি। কাজের চাপকে মাথায় নিয়েই আমরা মানুষের সেবা দিতে বদ্ধপরিকর।
প্রতিদিনই আগত সেবা প্রার্থীদের সাথে আমি নিজে কথা বলে তাদের নাম রেজিস্টারভুক্ত করে নির্দিষ্ট তারিখে তাদেরকে সেবা প্রদান করে থাকি। যাতে করে কেউ হয়রানির স্বীকার না হয়। যাদেরকে সেবা দিতে পারি না তাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে থাকি।আমাদের ভূমি অফিসকে একটি জনবান্ধব ভূমি অফিসে পরিণত করাই আমাদের লক্ষ্য।
সেবা প্রার্থীদের অপেক্ষা বা বসার জায়গায় কোন ফ্যান ছিল না। সেখানে আমরা ফ্যানের ব্যবস্থা করেছি। বসার জায়গার পাশেই উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হচ্ছে ওয়াশব্লক। আমাদের অফিসের সামনের ছোট্ট জায়গাটাতে আমরা একটু ওয়াকওয়ে ও একটু বাগান করার প্রয়াস নিয়েছি যাতে করে লোকজনের অপেক্ষার সময়টা ভাল কাাটে।
জেলা প্রশাসক খুলনার নির্দেশে আমরা উপজেলার খাস জমি সমূহ চিহ্নিত করে এরইমধ্যে প্রায় ১৫.০০ একর জমি অবৈধ দখলমুক্ত করেছি এবং এসকল জমি ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত প্রদান, হাজীগ্রামে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রস্তাব, কবরস্থানের জন্য বরাদ্দ প্রদান, শিশু পার্ক স্থাপন এর জন্য সংরক্ষণ এর কাজ চলছে বলে জানান দিঘলিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ আলীমুজ্জামান মিলন। সর্বশেষ, দিঘলিয়া বাসীকে উদ্দেশ্য করে মোঃ আলীমুজ্জামান মিলন ভূমি বিষয়ক যে কোন সেবা বা পরামর্শের জন্য সম্মানের সাথে দিঘলিয়া উপজেলা বাসীর সেবায় নিয়োজিত থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।