বাজারে আসতে শুরু করেছে সোনারগাঁয়ের লিচুর। প্রচন্ড খরার কারণে এবার লিচুর ফলনে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ছোট বড় প্রায় তিনশত লিচু বাগানে এবার আশানুরূপ ফলন হয়নি। ফলে বাগান মালিক ও লিচু ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। ব্যাবসায়িদের কেউ কেউ ঋণ নিয়ে লিচু বাগান কিনে থাকেন। বাগানের লিচু বিক্রি করে সেই ঋণ পরিশোধ করার কথা থাকলেও অনেকেই তা পরিশোধ করতে পারবেনা।
বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখাগেছে, বাগান চাষীরা তাদের বাগানে লিচু পাহারায় ব্যস্ত সময় পার করার কথা থাকলেও এবার ডিলে-ঢালা ভাবে বাগান পাহারা দিচ্ছে। অনেক বাগানে আবার পাহারাও বসায়নি। সোনারগাঁয়ের লিচু বাজারে প্রথম আসার কারণে ক্রেতার কাছে এ লিচুর কদর থাকে বেশ। চাষীরা দেশী প্রজাতির লিচু বাজার বিক্রি করতে শুরু করছে। বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে থোকা থোকা পাকা লিচু। লিচুর এই সৌন্দর্য দেখতে বাগানে ভীড় করছে অনেকেই। প্রতিবছর বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এখান থেকে লিচু নিয়ে যাওয়ার জন্য বাগানে বাগানে আসলেও এবার করোনা ভাইরাস ও টানা লকডাউনের জন্য অনেক পাইকার আসতে পারছেনা। আবার যারা আসছে তারা লিচু কিনতে অনীহা প্রকাশ করছে। দামও তুলনামূলকভাবে কম হাকাচ্ছে।
সোনারগাঁয়ে সাধারণত তিন ধরনের লিচুর চাষ করা হয়। এগুলো হলো পাতি লিচু, কদমী লিচু ও বোম্বাই (চায়না-৩) লিচু। সোনারগাঁয়ের পাতি লিচু সুস্বাদু ও বাজারে আগাম আসে। এ কারণে এ লিচুর চাহিদা অনেক বেশি। বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে, যেসব গাছে লিচু এসেছে সেগুলোর শাঁস কম, আকারে বেশ ছোট। খরার কারণে অধিকাংশ লিচুই গুটি অবস্থায় ঝরে গেছে। আর যেগুলো আছে সেগুলোও বড় হচ্ছে না। আবহাওয়ার কারণে সোনারগাঁয়ের লিচু দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক আগে পাকে। উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভা জয়রামপুর, ষোলপাড়া, ভট্টপুর, সাতভাইয়াপাড়া, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, গোবিন্দপুর, পানাম, হাড়িয়া, গাবতলী, নোয়াইল, দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, বৈদ্যেরবাজার, তাজপুর, সাদীপুর, ইছাপাড়া, দুলালপুর, বারদী, সেনপাড়া, বালুয়া দীঘিরপাড়সহ প্রায় ৫০ টি গ্রামে রয়েছে এ লিচু বাগান।
সোনারগাঁও প্যেরসভা এলাকার লিচু চাষী মোঃ মশিউর রহমান জানায়, তিনি মোট ৫ বিঘা জমিতে লিচু চাষ করেছেন। প্রতিবছর ৭/৮ লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি করলেও এবার তার অর্ধেক দাম পাবেন কিনা সন্দেহ। এ বছর কদমী লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে আর দেশি লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে।
বালুয়াদিঘীর পাড় গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী সিরাজ জানান, এবার খরার কারণে লিচু ফুলেনি, শাঁস কম, আকারে বেশ ছোট তাই লিচু উৎপাদন কম হয়েছে। গত বছর এই বাগানের লিচু ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছি এবছর তা ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবো কিনা জানিনা। তার উপরে আবার সারা দেশে করোনার কারণে মানুষ আর আগের মতো লিচু কিনে খাবেনা। সবদিক দিয়ে লিচু চাষীদের এবার লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সোনারগাঁ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুনিরা আক্তার জানান, এ বছর প্রচন্ড খরা ও আবহাওয়াগত পরিবর্তণ হওয়ার কারণে কিছু গাছে লিচুর মুকুল কম এসেছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় লিচু কিছুটা কম ধরেছে।