বিরলে অভিনব কায়দায় চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করে দেয়ার এবং ভিকটিমকে আটক করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ইউপি সদস্য মিলনসহ ০৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারক সদস্যরা মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার পর ভিকটিমকে মোবাইল ফোনে মোটরসাইকেল উদ্ধার করে দেয়ার নামে অর্থ আদায় করে ভিকটিমকে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে মুক্তিপণের নামে অর্থ আদায়ের ঘটনায় বিরলসহ পার্শ্ববর্তী বোচাগঞ্জ উপজেলায় বিষয়টি এখন টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।
বোচাগঞ্জ উপজেলার জিনগাঁও (হাটরামপুর) গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন দুলাল এর স্ত্রী জেসমিন আক্তার এজাহারে জানান, গত ৩০ এপ্রিল শুক্রবার স্থানীয় হাটরামপুর বাজার জামে মসজিদের বাহিরে ১৫০ সিসি বাজাজ পালসার কালোর গায়ে লাল রংয়ের স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল রেখে জুমার নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে তাঁর স্বামী দেখেন মসজিদের বাহিরে রাখা নিজের ব্যবহৃত ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের মোটরসাইকেলটি নাই। এরপর বাড়ীর লোকজনকে জানিয়ে মোটরসাইকেলটি খোঁজাখুঁজি করার আনুমানিক ০১ ঘন্টা পর একই উপজেলার বড়গাঁও গ্রামের মমতাজুর রহমানের পুত্র নাবিল পরিবহণের সুপারভাইজার জনি (২৭) ভিকটিম দুলালের বাসায় এসে মোটরসাইকেলটি ৭০ হাজার টাকা হলে উদ্ধার করে এনে দেয়ার প্রস্তাব দেয় এবং বলে ঠাকুরগাঁও হতে তার বন্ধু বাদশা মোবাইলে তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জনির কথা তেমন কর্ণপাৎ না করায় রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টায় বিরল উপজেলার রাজারামপুর ইউপি’র খোঁজাপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিমের পুত্র জাহিরুল (৩২) ০১৭৭২৭৯১৮৮০ নম্বর থেকে বাদীর মোবাইল নম্বরে কল করে ২০ হাজার টাকা নিয়ে দ্রুত বোচাগঞ্জ থানার সামনে গেলে চুরি হওয়া মোটরসাইকেল বের করে দিবে বলে জানায়। বাদী ও ভিকটিমের মনের অবস্থা ভালো না থাকায় ভিকটিম সাজ্জাদ হোসেন দুলাল ও ভাগিনা তহিদুল ইসলাম রাত ১১ টায় জাহিরুলের প্রলোভনে বোচাগঞ্জ থানার সেতাবগঞ্জ রেলগেটের সামনে গেলে বিরল উপজেলার রাজারামপুর ইউপি’র মেধাকান্দর গ্রামের আবদুল কুদ্দুস এর পুত্র সুজন (২৮) ও বিজোড়া ইউপি’র বল্লভপুর (চৌমহনী বাজার) গ্রামের মহিউদ্দিন আহম্মেদ এর পুত্র স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল ইসলাম মিলন (৩৫)সহ তাদের সহযোগী ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী দুলাল ও তহিদুলকে ছোরা, চাকু ও অস্ত্রের মুখে জোর পূর্বক মোটরসাইকেলে উঠিয়ে অপহরণ করে বিরলের চৌমহনী বাজারে মিলন মেম্বারের মিল চাতালের গোডাউন ঘরে আটক ও জিম্মি করে রাখে। সুজন পিস্তল দিয়ে ভিকটিম দুলালকে গুলি ও হত্যা করার ভয় দেখিয়ে দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুলালকে তাঁর স্ত্রীকে টাকা দেয়ার জন্য ফোন দেয়ার জন্য বলে। এ সময় সুজন দুলালের মোটরসাইকেলটি চুরি করে ১ লক্ষ টাকা বিক্রি করেছে তাই আর উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলে প্রকাশ করে। এছাড়াও সুজন এলাপাথারী লাথি, কিল, ঘুষি মারে এবং জাহিরুল দুলালের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। ইউপি সদস্য মিলন ভাগিনা তহিদুলকে গলা চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে এবং হোন্ডা হর্নেট ১৬০ সিসি মোটরসাইকেল ও ০২ জনের সঙ্গে থাকা ৪ টি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। সংঘবদ্ধ চক্রটি দুলাল ও তহিদুলকে মোটরসাইকেল উদ্ধার করে দেয়ার নামে অপহরণ করে ইউপি সদস্য মিলন এর চৌমহনী বাজারের মিল চাতালের গোডাউন ঘরে আটক করে রেখে মারডাং ও হত্যার চেষ্টা করে মুক্তিপণ দাবি করে ভিকটিম দুলালকে জিম্মি করে রেখে ভাগিনা তহিদুলকে সাথে নিয়ে তাঁর হাটরামপুরের বাসা থেকে চাঁদাস্বরূপ ৬০ হাজার টাকা আদায় করে। অতঃপর দুলাল ও তাঁর পরিবারের সকলকে শাসিয়ে মোটরসাইকেল চোর চক্রের অভিযুক্ত সদস্যরা বলে প্রকৃত ঘটনা বিরল থানা পুলিশকে যেন না বলা হয়, নচেৎ খুন জখম করবে। পরদিন ০১ মে শনিবার দুপুর ১২ টায় ভিকটিম দুলালকে বিরল থানায় নিয়ে এসে থানা কর্তৃপক্ষকে বলে তাহারা মোটরসাইকেল চোর দলের সন্ধান পেয়েছে। দুলালকে মোটরসাইকেল উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলে। সুকৌশলে মোটরসাইকেল চুরি ও চুরি হওয়া মোটর সাইকেল উদ্ধার এর নামে অপহরণ ও জিম্মি করে অর্থ আদায় এবং সঙ্গের মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় বিরলসহ পার্শ্ববর্তী বোচাঞ্জ উপজেলায় ঘটনাটি টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়।
এব্যাপারে সাজ্জাদ হোসেন দুলালের পরিবার মোটরসাইকেল, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিমের সিআইডি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
এ ব্যাপারে থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ শেখ নাসিম হাবিব জানান, চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। বাদীর এজাহার মামলা হিসাবে রুজু করা হয়েছে। বিরল থানার মামলা নং ০৩, তারিখঃ ০৩.০৫.২০২১। আসামি আটক ও পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।