এখন সারা দেশে যে লকডাউন চলছে, এর অংশ হিসাবে স্পিডবোট সার্ভিস বন্ধ থাকার কথা। সোমবার সকালে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে একটি স্পিডবোট যাত্রী নিয়ে অবৈধভাবে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাংলাবাজারে যাওয়ার সময় ফেরিঘাটের কাছে বালুবোঝাই বাল্কহেডের (ছোট আকারের মালবাহী জাহাজ) সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। দুর্ঘটনায় ২৭ যাত্রীর প্রাণহানি হয়েছে। পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয় এবং তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৫-১৬ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার ওই স্পিডবোটে যাত্রী ছিল ৩৫ জন। অভিযোগ রয়েছে, তুলনামূলক ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ এসব নৌযান প্রায়ই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। প্রশ্ন হলো, এসব ক্ষেত্রে যাদের নজরদারি থাকার কথা, তারা কী করছেন? জানা গেছে, বালুবোঝাই বাল্কহেডটি ঘাটের কাছাকাছি স্থানে নোঙর করা ছিল। নোঙর করা বাল্কহেডের সঙ্গে যাত্রীবাহী স্পিডবোটটির যেভাবে সংঘর্ষ হয়েছে, তাতে স্পিডবোট চালকের দক্ষতা ও স্পিডবোটের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু সময় বাঁচাতে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়েই এসব নৌযানে চড়ে, সেহেতু এসব নৌযানের ফিটনেস ও অন্যান্য বিষয়ে স্পিডবোট মালিকদের বিশেষ নজর দেওয়ার কথা। বস্তুত কোনো স্পিডবোট অবৈধভাবে এবং অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করলে এর দায় সংশ্লিষ্ট মালিকদের ওপরই বর্তায়। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই দেশের বিভিন্ন নদীতে ছোট বড় শত শত নৌযান চলাচলের বিষয়টি উদ্বেগজনক। জানা গেছে, অদক্ষ চালকদের দিয়ে চালানো হচ্ছে ট্রলার, যেগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন নদী পার হচ্ছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। সব মিলে দেশের নৌপথ দিন দিন মানুষের চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো নৌপথে আধুনিক মানসম্পন্ন নতুন নৌযান চালাতে অনেকে আগ্রহী হলেও সিন্ডিকেটের বাধার মুখে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মান্ধাতা আমলের নৌযানেই মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে নৌপথ পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। এসব সমস্যা দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে নৌদুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসাবে ত্রুটিপূর্ণ নৌযান, মাস্টার-চালক ও ইঞ্জিন অপারেটরের অদক্ষতা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন বাস্তবায়নে উদাসীনতাকে দায়ী করা হয়েছে। আমরা আশা করব, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সোমবারের নৌদুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করা হবে এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।