করোনা সংক্রমনের আতঙ্কের মাঝেই বিশ্ব শ্রমিক দিবস বিদায় হলো। সারা বিশ্বের সীমিত পরিসরে পালিত হল শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে দিবসটি। করোনার ছোবলে বেকারত্বের অভিশাপে নিপতিত শ্রমিকশ্রেণী কাজ হারিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম সাহসী শ্রমিক আজ দিশেহারা। বাংলাদেশের অবস্থা একই। মার্কেট শপিং মল খোলা থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ। সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা তাই চেষ্টা করেছিল পহেলা মে গাড়ি চালাতে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তারা তা আর পারেনি। তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরিবহন শ্রমিকদের উত্তেজিত না হয়ে ধৈর্যধারণের আহ্বান জানান। ৫ মে চলমান লকডাউন শেষ হলে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু করা হতে পারে। যদি সত্যি চালু হয় তবে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানী থেকে অসংখ্য মানুষ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বেন। ঢাকার করোনার সংক্রমণ তাদের মাধ্যমে গ্রামে সংক্রমিত হবার পথ সুগম হবে। তেমনি ভাবনা থেকে আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ রেখে নগরীর গণপরিবহন চালু করা হচ্ছে। নতুন ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে পর্যন্ত চলবে এ লকডাউন। অর্থাৎ ঈদের পর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে লকডাউন।
লকডাউনে দরিদ্র অসহায় কর্মহীন মানুষ প্রতিদিন অনেক কষ্টে দিন পাড়ি দিচ্ছেন। সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা সাহায্য প্রদান অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৭০ লক্ষ অসহায় মানুষের জন্য ৯১২ কোটি ৫০ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ উদ্বোধন করছে করেছেন গত ২ মে। প্রত্যেক দরিদ্র অসহায় মানুষ তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ২ হাজের ৫০০ টাকা পেয়ে যাবেন। যা তাদের চলমান সময়ের জীবন-জীবিকার সহায়ক হবে। বৈষয়িক এ সংকট কাটাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যস্ত। মানুষ মানুষের জন্য হতে চাহতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। যার যার সামর্থ্য অনুসারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে ভারতীয় করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এটা এতটাই বেশি সংক্রমণ সক্ষম যে কেউ আক্রান্ত হয়ে খুব দ্রুত অন্যরাও আক্রান্ত হবেন। এজন্য সীমান্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া হলেও যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা বিশেষ ব্যবস্থায় আসছেন। গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভোমরা বন্দর হয়ে দেশে ফিরেছেন ৪০১ জন। বাংলাদেশ থেকে গেছেন ৪০ জন। দুজনের মাঝে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত বেনাপোল দিয়ে ১৮ জন করোনা পজিটিভ নিয়ে ভারত থেকে ফিরেছেন। তাদের যশোরের জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এর মধ্যে ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে যশোর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে তা ভারতীয় ভেরিয়েন্ট কিনা জানার জন্য। আশা করা যাচ্ছে দু-একদিনের মধ্যে তা জানা যাবে। ভারতে করোনা দেশটিকে দিশেহারা করে ফেলেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন লাখে লাখে। মারা যাচ্ছেন হাজারে হাজারে। অক্সিজেন সংকটে আক্রান্তের নিকটজনরা অসহায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাহায্যে এগিয়ে এলেও মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই। তাই বাংলাদেশের সাবধান হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও করোনা হাসপাতালগুলো সক্ষমতা বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অবশ্য আসার কথা আবুল খায়ের গ্রুপ ইতোমধ্যে তাদের নিজস্ব প্ল্যান্ট তৈরি করে অক্সিজেন বিনে পয়সায় হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য সরবরাহ করছে। দেশের অন্যান্য অক্সিজেন প্ল্যান্ট ব্যবসায়ী ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্যদিকে গ্রোভ বায়োটেক লিমিটেড করোনার প্রতিষেধক হিসেবে বঙ্গভেক্স তৈরি করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা কাউন্সিলে মানবদেহে প্রয়োগের জন্য তারা ইতোমধ্যে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। এ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো তৎপরতার কথা শোনা না গেলেও এখন আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুতই অনুমতি মিলবে। সফল হলে প্রতি মাসে এক কোটি ডলার বঙ্গভেক্স প্রস্তুত করা সম্ভব বলে জানিয়েছে গ্লোভ বায়োটেক লিমিটেডের কর্তৃপক্ষ। এবং এক ডোজেই করো না প্রতিষেধক হিসেবে যথেষ্ট।
পবিত্র ঈদুল ফিতর এগিয়ে আসছে। আর মাত্র কয়েকদিন কর্মদিবস রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি সহ অন্যান্য ছুটির ফাঁদে এখন বাংলাদেশ। সাথে করোনা সংক্রমনের আতঙ্ক। তারপরও কেউ ঘরে বসে নেই। ঈদের কেনাকাটায় মার্কেট শপিং মলগুলোতে প্রচ- ভিড় দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা বা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা কোনো কিছুরই বালাই নাই। এত ভিড়ের পরও দোকানিরা বলছেন বেচা-বিক্রি আশাপ্রদ না। ক্রেতারা বলছেন, সব কিছু দামী বেশি। অন্যদিকে অনলাইন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা খুশি। তাদের বেচা-বিক্রি করোনার কারণে তাদের বেচা বিক্রি বেড়েছে।
করোনা আতঙ্কের মাঝে উৎসব-আনন্দে মানুষ গা ভাসাচ্ছে। ঈদের নামাজ ঈদগাহে না পড়ে মসজিদে পড়ার আহ্বান জানিয়েছে ধর্মমন্ত্রণালয়। তাই সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাবধান হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার। সরকার যতই লকডাউন ঘোষণা করুক নিজেরা সচেতন না হলে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা আক্রান্তের হার ও মৃত্যু কমলেও করোনা কিন্তু বিদায় নেয়নি। একটু অসচেতনতার সুযোগে সবাইকে বেসামাল করে দিতে পারে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশই তার প্রমাণ। ভারতের অবস্থাই ভাবুন। তাদের উৎসব আর বিধানসভার নির্বাচনের কারণে কতটা বিধ্বস্ত হয়ে উঠেছে তারা।