তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কাছে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের ডিমান্ড নোটের (অগ্রিম) টাকা জমা রয়েছে। নতুন আবাসিক গ্যাস সংযোগের আবেদন করে গ্রাহকরা ডিমান্ড নোট জমা দিয়েছিল। কিন্তু নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় ওসব টাকা পড়ে রয়েছে। জ্বালানি বিভাগ গত বছরের ডিসেম্বরে এ সম্পর্কিত একটি নির্দেশনা জারি করে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে তিতাসকে আদেশ দেয়। কিন্তু ওই আদেশের চার মাস পেরিয়ে গেলেও তিতাস এখনো আবেদনকারীদের টাকা ফেরত দেয়নি। বরং তিতাস সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন সংযোগের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত বদলালে ওসব গ্রাহক গ্যাস সংযোগ পেতে পারেও। ওই কারণেই ডিমান্ড নোটের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তিতাস গ্যাস এবং জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য তিতাসের কাছে ৫৬ থেকে ৫৮ হাজারের মতো গ্রাহকের ডিমান্ড নোটের টাকা জমা রয়েছে। দূরত্বসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ডিমান্ড নোটের টাকার পরিমাণ নির্ভর করে। গ্রাহকপ্রতি গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা রয়েছে। আর তিতাসের কাছে থাকা ডিমান্ড নোটের সব মিলিয়ে অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা। জ্বালানি বিভাগ গত বছরের ডিসেম্বরে এক আদেশে তিতাসকে দুটি বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। প্রথমটি হলো- যারা ডিমান্ড নোট পেয়ে টাকা জমা দেয়নি তাদের আবেদন বাতিল করা। দ্বিতীয়ত, যারা টাকা জমা দিয়েছেন দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাদের ওই টাকা ফেরত দেয়া। তবে তিতাস জ্বালানি বিভাগের প্রথমটি নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করলেও দ্বিতীয় নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেনি। তবে দ্বিতীয় আদেশটি বাস্তবায়নের বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে অনলাইনের মাধ্যমে কোনো বিকল্প উপায় ব্যবহার করে গ্রাহককে তার টাকা ফেরত দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু পরে তার আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এখন টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে জ্বালানি বিভাগ নতুন আর কোনো নির্দেশনা দেয় কিনা তিতাস সেদিকে তাকিয়ে আছে।
সূত্র জানায়, তিতাস রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত রয়েছে। গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকেও সংস্থাটি শীর্ষে। সাড়ে ২৮ লাখের বেশি গ্রাহকের কাছে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সরবরাহ করছে তিতাস। কিন্তু সংস্থাটির বিরুদ্ধে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া, বকেয়া, গ্রাহক ভোগান্তিসহ নানা ধরনের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। দেশে গ্যাস সংকটের প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। তারপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে আবারো আবাসিকের সংযোগ চালু করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের পর আবারো জ্বালানি বিভাগ থেকে অলিখিতভাবে বিতরণ কোম্পানিকে আবাসিকের নতুন আবেদন নিতে নিষেধ করে দেয়া হয়। পরে ২০১৯ সালে লিখিতভাবে আবাসিক সংযোগ স্থগিত রাখার আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গত ৮ বছরে তিতাস গ্রাহকের কাছ থেকে ডিমান্ড নোটের টাকা জমা নিয়েছে। ফলে ওই সময়ের মধ্যে ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেয়া গ্রাহকদের টাকা দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটির কাছে পড়ে আছে। সরকার মূলত ২০১৯ সালের ২১ মে গ্যাস সংযোগ বন্ধ নিয়ে এক আদেশ জারি করে। ওই আদেশে আবাসিক, সিএনজি ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় নতুন গ্যাস সংযোগ না দিতে নির্দেশনা জারি করা হয়। আর ওই সময়ের আগে যারা ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়েছিল তাদের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশনা দেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
এদিকে এ প্রসঙ্গে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী ইকবাল মোহাম্মাদ নুরুল্লাহ জানান, ডিমান্ড নোটের টাকা নিয়ে তিতাস আসলে ইচ্ছা করেই চুপ রয়েছে। কারণ গ্যাস নিয়ে যদি কখনো সরকার সিদ্ধান্ত বদলায়, তাহলে ওই গ্রাহকরা একটা সুযোগ পাবে। অনেক সময় দেখা যায় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে গ্রাহকদের জন্য তেমন ধরনের সুযোগ তৈরি হয়। ফলে আবেদনকারীরা একটা সুযোগ পেয়েও যেতে পারে। ওই কারণেই এখনো টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। ডিমান্ড নোট নিয়ে জ্বালানি বিভাগ তিতাসকে আদেশ দিয়েছে। মূলত আদেশে দুটি বিষয় ছিল। তিতাস প্রথমটি বাস্তবায়ন করেছে। দ্বিতীয়টি গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে জ্বালানি বিভাগের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান জানান, ডিমান্ড নোটের টাকা ফেরত দেয়া নিয়ে জ্বালানি বিভাগ অনেক আগেই তিতাসকে চিঠি দিয়েছে। তিতাস ওই চিঠি অনুযায়ী একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। তবে এখনো কেন গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়নি, সেটি জ্বালানি বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হবে। মন্ত্রণালয় থেকে ডিমান্ড নোটের টাকা অনলাইনে কিংবা বিকাশে ফেরত দিয়ে দিতে বলা হয়েছে। কারণ নতুন করে সরকারের গ্যাস সংযোগ দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতেই হবে। ওই টাকা আটকে রাখা যাবে না। যেহেতু আর গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না, তাই যারা গ্যাস ব্যবহার করতে চায় তাদের এলপিজি ব্যবহার করতে হবে।