মাদক ও যুবসমাজ নিয়ে লিখার জন্য খাতা কলম তথ্য, কম্পিউটার নিয়ে বসলাম এমন সময় আমার এক শিক্ষক বন্ধুসহ কয়েক জন শিক্ষক ফোন করে বললেন স্যার আমাদের সিঁকি ভাগ ঈদ বোনাসের কথা একটু লিখুন, কবে পরিবর্তন হবে বেসরকারী শিক্ষকদের সিঁকিভাগ ঈদ বোনাস। যখন কলামটি লেখা শুরু করি তখন গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাস নিয়ে বেসামাল, ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৬ শ ৪৪ জনেরও বেশী মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ কোটি ৫০ লাখ ২৫ হাজার ১ শ ৫০ জনের উপরে মানুষ। সুস্থ্য হয়েছেন ১৩ কোটি, ২৫ লাখ ১৮ হাজার ১ শ ৪৭ জন মানুষ। কোটি কোটি মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।বাংলাদেশে ১১ হাজার ৭ শ ০৫ জনেরও বেশী মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৫শ ৯৬জনের উপরে মানুষ। সুস্থ্য হয়েছেন ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩২ জন মানুষ।
গত বছর সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে একদিনের বেতন দান করেছেন। এনজিও, সমাজসেবক, জনপ্রতিনিধিসহ অনেকে নিজ উদ্দোগে ত্রান সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। বেসরকারী স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীগণও গত বছর একদিনে বেতন দান করেছেন প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন। এ সময় শিক্ষকদের দাবী নিয়ে লিখা ঠিক হবে কি? নিজের বিবেকের কাছে বার বার প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছিল।
ঠিক এ সময় শিক্ষক নেতারা বিভিন্নভাবে বেসরকারী শিক্ষকদের জন্য শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবী অব্যাহত রেখে প্রধান মন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। স্মারক লিপি প্রদান কনেছেন। তাই ওই বন্ধুদের কথা রাখতে আজকের লিখাটি শুরু করলাম। মহান ও নিবেদিত পেশা হিসেবে শিক্ষকতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই মনে করা হয় শিক্ষকদের। পাঠদানে আত্ম-নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত থাকা সুপ্ত মেধা জাগ্রত করা, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজের অর্থ ব্যয়ে দেশ সেরা হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকও দেশে বিরল নয়। এ জন্যই সমাজে শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, শিক্ষার্থীরাও যুগে যুগে স্মরণ রাখেন।
বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। দেশের টিকসই উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর, শিক্ষা বান্ধব সরকার। কিন্তু বেসরকারী শিক্ষকদের বেলায় এত অনিহা কেন ? বছরের পর বছর চলে আসছে বেসরকারী শিক্ষকদের সিঁকিভাগ ঈদ বোনাস, প্রায় ১৭ বছর ধরে অব্যাহতভাবে চলছে। ২০১৪ ইং সালের ২২ জানুয়ারী এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বেসরকারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ঈদ বোনাস শিক্ষদের বেতন স্কেলের ২৫ ভাগ এবং কর্মচারীদের বেতন স্কেলের ৫০ ভাগ ঈদ বোনাস দেয়া নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু শতভাগ ঈদ বোনাস না হাওয়ায়, শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায়
বাড়িভাড়া ফেরত দিলেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সামান্য বেতনের কর্মচারীসহ অনেক সহকারি শিক্ষকবৃন্দ। তারা আজ দলে দলে ওই টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিচ্ছেন।
অনেক শিক্ষক ঈদ বোনাসের টাকা ক্ষোভ করে সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার কথা ফেসবুকে লিখছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, ২০৪১ ইং সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে যুক্ত হবে কিন্তু আমাদের সিঁকিভাগ ঈদ বোনাসের কোন পরিবর্তন হয় নি।
এ বোনাসের কথা শিক্ষকসমাজ তার প্রিয় মানুষটির নিকট বলতে পারেন না। এমনকি আত্মীয় স্বজন পরিবার পরিজন, সমাজের কারো কাছে লজ্জায় বলতে পারেন না, বিপদে পড়ে যান। ছেলে মেয়েরা বলে বাবা তুমি ঈদ বোনাস পেয়েছ, আমাদের কখন নতুন জামা কিনে দিবে, ঈদের বাজার করবেন কবে ? বাসার পার্শ্বের সবাই দামী দামী নতুন নতুন জামা কাপড়, কিনেছে। প্রিয়তমা স্ত্রী বলেন, আমার নতুন শাড়ী, ছোট ভাই বোন, শালক শালিকাদের ঈদ বোনাস তো আছে। ওই শিক্ষকের জন্মদাতা মা ও বাবা শুধু শিক্ষক ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তোমার কি হয়েছে বাবা, তোমার মুখ কেন শুকিয়ে যাচ্ছে, সাহারি ও ইফতারি তুমি ভাল করে খাচ্ছো না কেন? কি হয়েছে তোমার ঈদ আসলে মানুষ খুশি থাকে আর প্রতি ঈদে তুমি মুখভার করে থাক কেন?। এ সময় কথা শুনে ওই শিক্ষক আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তখন মা শাড়ীর আঁচল দিয়ে ওই শিক্ষকের চোখ মুখ মুছিয়ে বলেন, আমরা দুয়া করে দিলাম তোমার সব চিন্তা দূর হয়ে যাছে, আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন।
এ কলামটি আমি লিখার সময় প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিজেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। কয়েকটি টিসু ভিজে গেছে, রুমাল একাধিক বার রুমাল ভিজে গেছে, আপনারও হয় তো কলামটি পড়ার সময় কান্না ধরে রাখতে পারবেন না। কিন্তু সেদিন শিক্ষক সমাজ আনন্দিত হব যে দিন সরকার আমাদের সরকারী শিক্ষকদের মত ঈদ বোনাস প্রদান করবেন, সুযোগ সুবিধা দিবেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার পর পেয়েছেন বৈশাখীভাতা ও বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সুবিধা ! কিন্তু সে খুশি বেশীদিন টিকেনি সরকার নতুন প্রজ্ঞাপন করে ৪ শতাংশ বেতন কেটে নিয়েছেন ফলে সকল শিক্ষক কর্মচারীর বেতন কমে গেছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কেউই পদমর্যাদা অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া পান না। বরং বাড়ি ভাড়া পান ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, যা নিতান্তই অপ্রতুল। একটি ‘জাতীয়লজ্জা’ বেসরকারি শিক্ষকবৃন্দই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র পেশাজীবী যারা স্কেলের সিঁকিভাগ (২৫ শতাংশ) উৎসবভাতা পান, বাড়ী ভাড়াপান মাত্র ১০০০ টাকা, এ টাকা দিয়ে বাড়ী তো দূরের কথা বর্তমানে একটি রুমও ভাড়া পাওয়া যায় না। আর প্রাপ্ত ঈদ বোনাস দিয়ে শিক্ষকদের আনন্দ উৎসব তো দূরের কথা ঠিকভাবে দিনটি পালন করতে পারেন না। ছেলে মেয়েদের নতুন পোশাক,উন্নত খাবার তৈরী করা যেন অসম্ভব ব্যপারে হয়ে দাঁড়ায় শিক্ষক সমাজের কাছে। তাই শিক্ষক সমাজের পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস, ৫০ ভাগ বাড়ী ভাড়া প্রভূতি দাবী সরকারের মেনে নেয়া প্রয়োজন। আজ বেসরকারী শিক্ষক সমাজ ঈদ বোনাস, বাড়ী ভাড়াসহ জাতীয়করণ নিয়ে আন্দোলন করছেন, সাংবাদিক সন্মেলন, স্মারকলিপি, ফেসবুকে তাদের দাবীর কথা জোরালোভাবে লিখছেন, অনেকে মান, অভিমান, ক্ষোপ করে অনেক কথা লিখছেন যা শিক্ষক হিসেবে কেউ এ ধরণের ভাষা দেখতে চান না। কিন্তু বেসরকারী শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয় ভাত দে নইলে মান চিত্র খাব। শিক্ষকেরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক সন্মেলন করছেন, স্মারকলিপি প্রদান, সমাবেশ করছেন, কিন্তু এগুলি করো নজরে আসে না।
দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে সরকারী ছুটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, দেশে লকডাউন চলছে। এর মাঝে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ কমিটি নেতারা শতভাগ ঈদ বোনাসের জন্য প্রধান মন্ত্রীর নিটক দাবী করেছেন। ঈদের আগেই বেসরকারী শিক্ষক সমাজ যেন শতভাগ ঈদ বোনাস পান তার জন্য প্রধান মন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন করেছেন। যারা সত্য, বস্তনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেন ওই সাংবাদিক বন্ধুরা কিছু লিখছেন এদের সংখ্যা কম। শিক্ষকদের পান থেকে চুন খোসলেই লিখা হয় মিথ্যা, তথ্য সন্ত্রাস করে বিশাল বিশাল শিরোনাম করে সংবাদ স্থান পায় প্রিন্ট, অনলাইন, ও টিভি মিডিয়ায়। কিন্তু তথাতথিত হলুদ সাংবাদিকদেরও শিক্ষক সমাজের দাবী, ২৫ ভাগ ঈদ বোনাস, ১০০০ টাকা বাড়ী ভাড়ার ব্যপারে কিছুই লিখেন না। এব্যপারে তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। কারণ সিঁকিভাগ ঈদ পায় শিক্ষকেরা, তারা আবার ওই সব হলুদ সাংবাদিকদের কিভাবে খুশী করবেন। দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকযে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা জাতীয়করণ করা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কোন ব্যাপারই নয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আওতায় আসলে সরকারের প্রায় ৭শ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। এ টাকা বিনিয়োগ করা বর্তমান সরকারের জন্য কোন অসম্ভব কিছুই নেই। আমি মনে করি সরকারের জন্য এ বিনিয়োগ হবে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগে সরকারের প্রচুর লাভ হবে। দেশের জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পরিণত হবে উন্নত দেশে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট সবিনয়ে আবেদন জানাতে চাই, আপনি উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য আমরা শিক্ষক সমাজ আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনি শিক্ষকদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। যেমন সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছেন। আপনি পারবেন দেশের সব এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক- উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে। শিক্ষক সমাজ আপনার কাছে আজীবন ঋণী থাকবেন।
বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দেশে মানুষগড়ার কারিগরদের নিয়ে কারো যেন টেনশন নেই! এমপিওভুক্তগণ পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল, বাড়ীভাড়া ও উৎসব ভাতা পান না। তারা পদোন্নতি, সেচ্ছায় অবসর, বদলি সুবিধাসহ অসংখ্য বঞ্চনার শিকার। তার পরেও বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আয় কর, ৪ ভাগ বেতন কেটে নেওয়া। সোনালী ব্যাংক, জনতাসহ বিভিন্ন ব্যাংক কতৃপক্ষ আয় কর রির্টান জমা, টিন নম্বর ছাড়া মাসিক বেতন বিল জমা নেননি বলেই সকল শিক্ষক সমাজ আয় কর জমা দিয়েছেন যা অব্যাহতভাবে চলছে। যে শিক্ষক সমাজের নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা, যারা সিঁকিভাগ ঈদ বোনাস পান, বাড়ী ভাড়া পান ১০০০ টাকা, তাদের আবার আয় কর দিতে হবে কেন ? মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বিষয়টি একটু ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করাচ্ছি শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে। আপনি তো একদিন আন্দোলনরত বেসরকারী শিক্ষক সমাজের নিকট বলেছিলেন আমি ও আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে শিক্ষক সমাজেকে তাদের দাবী নিয়ে আর আন্দোলন করতে হবে না। তাদেরকে ক্লাস রুম থেকে রাস্তায় আসতে হবে না।
শিক্ষকতার মহানব্রতের গর্বিত অংশীদার হিসেবে আমি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে মনে করি, পেশাগত প্রাণের দাবি আদায়ে নেতিবাচক কর্মসূচি বা কোনো রূঢ় বাস্তবতার দিকে আমাদের নেতৃবৃন্দ যাবেন না বরং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলে শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হবে। দেশের বেসরকারি স্কুল কলেজ মাদ্রসা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কেননা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে অবশ্যই জাতীয়করণের আওতায় আনতে হবে। যদিও বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের উদ্যোগ নিয়ে কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলছে। জানা যায়, এ পর্যন্ত বহু স্কুল- কলেজ জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
উপজেলা সদরে অবস্থিত এবং যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সুবিধা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণে প্রাধান্য রেখে ঘোষনা করেছেন সরকার তার সুফল অচিরে পেতে যাচ্ছে শিক্ষক সমাজ। কিন্তু এসব নিয়ম-নীতি শিক্ষার মান উন্নয়নে তেমন ফলপ্রসু হবে বলে মনে হয় না।। উন্নত রাষ্ট্র পরিণতকরণে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিতষ্ঠান জাতীয়করণ করতে সরকারকে অত্যন্ত বাস্তবমুখী ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে মানুষের আয়-রোজগার। শিক্ষায় প্রবেশ করেছে সৃজনশীলতা। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়। সকল মহলের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে সরকারের নিজস্ব কিছু মূল্যায়ন আছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
পাশাপাশি আমার কিছু পরামর্শ সরকারের বিবেচনার জন্য পেশ করলাম। বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকযে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা জাতীয়করণ করা সরকারের কোন ব্যাপারই নয়। এসব শিক্ষা প্রতিতষ্ঠান জাতীয়করণের আওতায় আসলে প্রতিবছর সরকারের প্রায় ৭ শ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এ টাকা বিনিয়োগ করা বর্তমান সরকারের জন্য সম্ভব। আমি মনে করি সরকারের জন্য এ বিনিয়োগ হবে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগে সরকারের প্রচুর লাভ হবে। দেশের জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পরিণত হবে উন্নত দেশে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা‘র নিকট সবিনয়ে আবেদন জানাতে চাই, আপনি উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য শিক্ষক সমাজ আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আপনি শিক্ষকদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আপনি পারেন দেশের সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণ করতে। কেননা আপনি একসাথে দেশের ২৬ হাজার ১শ ৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণ করেছেন এবং এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগকৃত ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকুরী সরকারী করা হয়েছে, প্রতি বছর জানুয়ারী মাসের প্রথম তারিখে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ এবং প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারী এসএসসি ও সমমান এবং ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা গ্রহন করেন এবং ৬০দিনের মধ্যে ফলাফল ঘোষনা করা হচ্ছে যতে বেসরকারী শিক্ষক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। যা ইতঃপূর্বে কোন সকার প্রধান করতে পারেননি। এত বড় সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করায় আপনাকে শিক্ষক সমাজ শুধু ধন্যবাদ জানান নি আপনার জন্য প্রতিনিয়ত আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছেন, আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছেন। অবশ্য এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল অপ্রকাশিত, এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আপনি পারবেন দেশের সব এমপিওভুক্ত স্কুল কলেজ মাদ্রসা জাতীয় করণ করতে লাখ লাখ পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটাতে। আর এ সাহসী কাজের জন্য শিক্ষক সমাজ আপনার কাছে আজীবন ঋণী থাকবে। আমাদের সবারই জানা আছে, শিক্ষাক্ষেত্রে সাংবিধানিক দায় হলো সবার সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ। অথচ পক্ষপাতদুষ্ট ও খ-িত জাতীয়করণের দোলাচালে চলছে অস্থিরতা। জাতীয়করণের দাবিতে কলেজ শিক্ষকের মৃত্যু, আদালতে রিট বা এমপিওভুক্তির জন্য অনশন কাম্য নয়। মানুষ গড়ার কারিগরদের এমপিওভুক্তির নামে দেওয়া হয় ‘অনুদান’। কাজেই, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষকদের পেশাগত বঞ্চনার অবসানে দেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ জরুরি। দুঃখজনক হলেও সত্য, শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণ না হবার জন্য দায়ী কেন্দ্রে শিক্ষক সংগঠনগুলোর দলীয় লেজুড়বৃত্তি। ফলে কোনো দাবির পেছনে যৌক্তিকতার চেয়ে বিবেচনায় থাকে দাবিটি কারা করেছে ? সঙ্গে চলে আসে দু’ধরনের ব্যাখ্যা ও অবস্থান। তখন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিগুলো হয়ে যায় রাজনৈতিক। তবে আশার কথা, বর্তমানে শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘এক ঘোষণায় সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় অভিন্ন। কেননা, ‘দল যার যার শিক্ষকস্বার্থে সব শিক্ষক একাকার’। শিক্ষকতার মহানব্রতের গর্বিত অংশীদার হিসেবে আমি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে মনে করি, পেশাগত প্রাণের দাবি আদায়ে নেতিবাচক কর্মসূচি বা কোনো রূঢ় বাস্তবতার দিকে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ যাবেন না বরং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলে শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হবে।
প্রধান মন্ত্রীকে শিক্ষা ক্ষেত্রে আর একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করে হবে। সে সাথে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে বেসরকারী শিক্ষকদের জন্য সুযোগ্য প্রধান মন্ত্রী জন নেত্রী, মানবতার মাতা, শিক্ষক মাতা শেখ হাসিনা পারেন ২৫ ভাগ ঈদ বোনাস থেকে শতভাগ ঈদ বোনাসের ঘোষনা দিতে। এ ঘোষনা জন্য বেসরকারী শিক্ষক সমাজ আপনাকে তথা বর্তমান সরকারকে আজীবন শ্রোদ্ধাভরে স্মরন করবেন।
লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক