ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় প্রায় সোয়া লক্ষ লোকের বসবাস। দেশের অন্যান্য স্থানের সাথে এখানকার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ।
মনপুরায় যাতায়াতের প্রধানত তিনটি রুট রয়েছে। একটি হলো ঢাকা থেকে হাতিয়াগামী লঞ্চ, দ্বিতীয়টি হাজীর হাট থেকে তজুমদ্দিন উপজেলায় সি-ট্রাক। তৃতীয়টি হলো সাকুচিয়ার জনতা বাজার থেকে চরফ্যাশনের বেতুয়া পর্যন্ত ছোট লঞ্চ অথবা ট্রলার। এ ছাড়া মাষ্টার হাট ও রিজির খাল থেকে নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাটে যাত্রী নিয়ে যাওয়া-আসা করে আরও দুটি ট্রলার।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকারঘোষিত লকডাউনের কারণে হাতিয়াগামী বড় লঞ্চগুলো বন্ধ রয়েছে। সরকারিভাবে পরিচালিত সি-ট্রাক চলে দিনে একবার। ফলে সাকুচিয়ার জনতা বাজার দিয়েই ছোট লঞ্চে বাসিন্দাদের চলাচল করতে হয় জেলা সদর কিংবা অন্য যায়গায়। এ সুযোগে এই রুটে চলাচলকারী ছোট লঞ্চগুলো মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত লকডাউনের আগেও এই ছোট লঞ্চগুলোতে জনপ্রতি ভাড়া ছিল ৮০ টাকা, যা বাড়িয়ে বর্তমানে করা হয়েছে ১২০ টাকা। এতে মনপুরা উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষকে প্রতিদিনই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কেউ অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে যাত্রীদের সঙ্গে লঞ্চের স্টাফরা খারাপ ব্যবহার করেন। বাধ্য হয়েই যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
গত বুধবার মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিম মিঞার নেতৃত্বে সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় এই রুটে চলাচলকারী এমভি মাসুমা লঞ্চের কেরানি মো. ফরিদ মিয়াকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে এই রুটে জনপ্রতি ৮০ টাকা করে ভাড়া নির্ধারণ করে দেন ইউএনও। এতেও বন্ধ হয়নি ছোট লঞ্চগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
তারা উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই যাত্রীদের কাছ থেকে ১২০ টাকা করে ভাড়া আদায় করে যাচ্ছে। যাত্রীদের কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে না চাইলে খারাপ ব্যবহারসহ হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তারা।
মনপুরা উপজেলার বাসিন্দা মো. মেহেদীসহ একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার তারা চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাট থেকে মনপুরার উদ্দেশে এমভি সিরাজুল ভূঁইয়া নামের লঞ্চে ওঠেন। লঞ্চটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কেরানি ১২০ টাকা করে ভাড়া আদায় শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, কয়েকজন যাত্রী মিলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করলে তারা লঞ্চ ঘুরিয়ে পুনরায় ঘাটে নিয়ে আসে। পরে লঞ্চের যাত্রীদের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা-কাটাকাটির পর ১০০ টাকার কমে লঞ্চ ছাড়বে না বলে জানিয়ে দেয় লঞ্চের স্টাফরা। বাধ্য হয়ে ১০০ টাকা দিয়েই যাত্রীদের মনপুরায় পৌঁছাতে হয়।
ভুক্তভোগী সাধারন যাত্রীরা জানান, মনপুরার জনতা বাজার লঞ্চ ঘাট থেকে চরফ্যাশন বেতুয়া লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ। যেখানে লকডাউনের আগেও ৮০ টাকা ভাড়া ছিল। লকডাউনের সুযোগ নিয়ে সরকারী স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে মন মত ভাড়া বৃদ্ধি করে যাত্রীদের কাছ থেকে ১২০ টাকা আদায় করছে। সাধারন জনগন ভোলা জেলা প্রশাসক, চরফ্যাশন, মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি কামনা করছেন। লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষের শোষনের হাত থেকে চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার মানুষ যেন অচিরেই মুক্তি পেতে পারে তার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী যাত্রীরা জোর দাবী করছেন।
ভ্রাম্যমান আদালত বেঁধে দেওয়া ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামিম মিঞা বলেন, ‘চরফ্যাশন-মনপুরা রুটের ছোট লঞ্চগুলো চলাচলের অনুপযোগী। তারপরও আমরা মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিষয়টি এড়িয়ে যাই। এর মধ্যে তারা যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে, যা অমানবিক। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। আগামী রোববার বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করার কথা রয়েছে। তারপর আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলেও তিনি জানান।’