করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে পরিকল্পনার কথা বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা কথা বলা হয়েছে বাজেটে।
প্রস্তাবিত বাজেটে করোনা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাস্থ্যখাতে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা জিডিপির ০.৯৫ শতাংশ।
গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ২৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। যা ছিল জিডিপির প্রায় এক দশমিক শুন্য দুই শতাংশ। আগের অর্থবছরের তুলনায় এবার তিন হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ১১ শতাংশ।
এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাজেট ঘোষণাকালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছিল না। তখন স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে তা তিন হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ২৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। দুই অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় সোয়া এক বছর ধরে বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
এর বাইরে শুধুমাত্র করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও একই পরিমাণ টাকা জরুরি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশের ৫০তম বাজেটে উপস্থাপন করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তাঁর তৃতীয় বাজেট।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার বা মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।
‘৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা তাঁর লিখিত বক্তব্যে টিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, কোভিড ১৯ মহামারি হতে জনজীবনের সুরক্ষার জন্য সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এর আওতায় ন্যাশনাল ডেপলয়মেন্ট অ্যান্ড ভেকসিনেশন প্ল্যান করা হয়েছে। দেশে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার কথা উল্লেখের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি, আলোচনা, টিকা উৎপাদনের কথাও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘মোট ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার আওতায় আনার জন্য ভাগ ভাগ করে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণকে টিকা দেওয়া হবে এবং প্রতিমাসে ২৫ লাখ করে টিকা দেওয়া হবে। ইপিআই ও সিডিসি (কম্যুনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল) এর সমন্বয়ে এ ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি ও দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয় গত ৮ এপ্রিল। সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ংঁৎড়শশযধ.মড়া.নফ ওয়েব পোর্টাল এর মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের সাহায্যে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির জন্য রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাকসিন সনদ ও ভ্যাকসিন কার্ড প্রদান করা হচ্ছে।
টিকার জন্য ৪০ বছর বা তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীকে প্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যা মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। হাসপাতালভিত্তিক মোট এক হাজার পাঁচটি ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। গত ৩১ মে পর্যন্ত দেশে ৫৮ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ৩৬ লাখ ১০ হাজার ৬৩৫ জন পুরুষ এবং ২২ লাখ ১১ হাজার ৫২২ জন নারী।