সারা বিশ^ আজ করোনা সংক্রমনে অস্থির। উন্নত দেশ বা উন্নয়নশী দেশ কিংবা দরিদ্র দেশ সবখানেই করোনার আতংকে আতংকিত। হাসপাতালগুলোয় ঠাই নাই ঠাই নাই অবস্থা। মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। আক্রান্তদের হাসপাতালে বিছানা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মেঝেতে সুয়েও অক্সিজেনের অভাবে এ চরাচরকে গুড বাই জানাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি করোনাকালে মাতৃমৃত্যু বাড়িয়েছে সারা বিশে^। করোনা রোগিদের সেবা দিতে গিয়ে মাতৃসেবা দেয়া সম্ভব হয় নি চিকিৎসদের। আবার লকডাউন চলার কারনে মায়েরাও চিকিৎসকদের স্বরনাপন্ন হতে পারেন নি। ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বেড়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতির মাঝে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের নিয়ে সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনে বসে। ২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত চলা এ সম্মেলনে সমাপনি বক্তব্যে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গোব্রেয়াসুম বলেন, ‘ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবেলায় বৈশি^ক মহামারি চুক্তি স্বাক্ষরের এখনই সময়’। তিনি আরো বলেন, ‘জাতিসংঘের নানা সংস্থা বর্তমানে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। এ ধরনের সংকট মোকাবেলায় নমনীয় ও টেকসই তহবিল প্রয়োজন’।
বিশ^জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে দেশে নতুন রোগ ব্যাধি দেখা যাচ্ছে। করোনার মত মরনব্যাদিও সারাবিশে^ ছড়িয়ে পড়েছে। জনবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য বিশে^র দেশগুলো সমন্বিত তহবিল গঠন করেছে। সেক্ষেত্রে মহামারি বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের বক্তব্যে যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। এজন্য বিশে^র বিভিন্ন দেশকে এগিয়ে আসা উচিৎ। যদিও করোনায় আক্রান্ত অনেক দেশেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে অন্য আক্রান্ত দেশ।
আশার কথা হচ্ছে, করোনার ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে গণচীন, ভারত, ইংল্যান্ড সহ আরো বেশ কিছু দেশ ভ্যাকসিন তৈরী করে দেশে দেশে সরবরাহ করছে। তবে ভ্যাকসিন নেবার পরও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। নইলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকবে। তবে আশার কথা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঝুকি থাকবে না। সে কারনে সম্মেলনে অংশ গ্রহনকারী মন্ত্রীরা মনে করেন, করোনা ভাইরাস দমনে দেশ গুলোর স্বক্ষমতা বাড়াতে গবেষকদের আরো বেশি উচ্চাকাংক্ষী হতে হবে। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক গবেষনার ক্ষেত্রে জেনেটিক সংকেত ব্যবহার করার জন্য বিশ^ স্বাস্থ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা ভাইরাসের নতুন ধরনগুলোকে গ্রিক অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হবে। এতে বৃটেনে শনাক্ত হওয়ার (বি. ১.১.৭) প্রজাতিকে আলফা, দক্ষিন আফ্রিকার (বি. ১.৩৫১) প্রজাতিকে বিটা, ব্রাজিলের (পি.১) প্রজাতিকে গামা ও ভারতের (বি. ১.৬১৭.২) প্রজাতিকে ডেল্টা নামে ডাকা হবে।
তবে মানবিক বিপর্যয় রোধে টেকসই তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। আগামী ২৯ নভেম্বর বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪ সদস্য দেশের মন্ত্রীরা মহামারি রোধে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে বৈঠক করবেন। তবে গত ৭৩ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র দু’টি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। একটি হচ্ছে ২০০৩ সালে স্বাক্ষরিত ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবেকো কন্ট্রোল’ দ্বিতীয়টি ২০০৫ সালে স্বাক্ষরিত ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশন’। তবে করোনাকালীন মানবিক নিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য ভবিষ্যতে তহবিল গঠন হবে কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। তবে তহবিল গঠনের ব্যাপারটি সময়োপযোগি প্রস্তাব। তাই বিষয়টি নিয়ে সদস্য দেশগুলোর ভাবা উচিৎ।