হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিরাম চেষ্টা করছেন, এটা যেমন সত্য; তেমন সত্য- সরকার প্রতিবছর দেশীয় উৎস থেকে যেহারে ঋণ নিচ্ছে, তা অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার জন্য ইতিবাচক নয়। কারণ সুদ যে হারে বেড়েছে, তা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে কর আদায়ের হার অত্যন্ত কম। বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায় ১০ শতাংশের কম। অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে হলে জিডিপির তুলনায় করের অন্তত ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ থাকা উচিত। তিনি বলেন, করের হার বাড়াতে পারলে ঋণ কমবে। আর উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানো ভালো পদক্ষেপ নয়। এতে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ ১১ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৩ কোটি এবং সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে এই ২ লাখ ১০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এছাড়া এই পরিমাণ ঋণ জিডিপির ৩৫ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ। এ হিসাবে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ ৮৪ হাজার ৭৭০ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭৫ হাজার ১০৭ টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে ৯ হাজার ৬৬৩ টাকা। এরপর আগামী অর্থবছরে আরও ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। ফলে ঋণের স্থিতি আরও ১৩ হাজার ৬০ টাকা বাড়বে। এই ঋণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কারণ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে ঋণ নেওয়া হয়, তার বিপরীতে সরকারকে বছরে ১০ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। এ কারণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে ৬৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। যা দুটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের চেয়েও বেশি। এক্ষেত্রে ঋণ না কমলে এই টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যেত। সরকার ঠিকমতো ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না বলেই এর দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে। তুলনামূলকভাবে বিদেশি ঋণ অনেক সাশ্রয়ী। কিন্তু সরকার সহজ পথ হিসাবে বেছে নেয় বেশি সুদের অভ্যন্তরীণ উৎসকে। এতে আর্থিক খাতে চাপ বেড়ে যায়। বর্তমানে দেশে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের (ব্রডমানি) পরিমাণ ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমানত ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা এবং জনগণের হাতে নগদ টাকা ১ লাখ ৮৪ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। আবার আমানতের মধ্যে মেয়াদি আমানত ১১ লাখ ৫৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা এবং তলবি আমানত ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।
এই যখন নাগরিকদের জীবন-জীবীকা-অর্থনৈতিক অবস্থা। তখন প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তার সাথে বাস্তবতার সামাণ্যতম মিল নেই। অধিকাংশ সূচক অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় যে পরিসংখ্যান ব্যবহার করছে, সেগুলো তৈরি করা হয়নি। এমনকি বাজেট বক্তৃতায় করোনার কথা বলা হলেও বরাদ্দের দিক থেকে বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। করোনার ভ্যাকসিন কেনায় এবারের বাজেটে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটিও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় নেই। কিভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে, তা বলা হয়নি। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সেখানে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও ব্যয়ের সক্ষমতা ও গুণগত মান নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন নির্মাণ হয়েছে। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে সরকারি সংস্থা বিবিএসের কাছে তথ্য চাইলেও পাওয়া যায় না। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে, এটি তার চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে জিডিপির ২৫ শতাংশ বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে যা ধোয়াশা ব্যতিত কোন সম্ভাবনা নয়। আর বাস্তবতা বলছে- বছরের সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। বাস্তবে এটি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকারও কম হবে বলে আমি মনে করি। ঘাটতির-ঋণের এমন বাজেট দিয়ে আবার আমাদের অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি নাকি অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ। দিন যায়, কথা থাকে। আর তাই বলছি- পদ্মা সেতু ২০০৯ সালে শুরু হয়েছে এখন অগ্রগতি ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ। বেড়েছে মেয়াদ ও ব্যয়ও। ১৪টি মেগা প্রকল্পে ২২ শতাংশের মতো বরাদ্দ আছে। মেগা প্রকল্প মানে মেগা অর্থ। সাথে তো বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি থাকবেই। তথাকথিত উন্নয়নের রোল মডেল হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সরকারের তাই নেই বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের প্রতি খুব বেশি নজর নেই। কারণ গরিব মানুষের পক্ষে কথা বলার লোক সংসদে নেই। অথচ এটাই সত্য যে, সাধারণ মানুষের কাছে টাকা গেলে, তারা খরচ করবে এবং অর্থনীতিতে গতি আসবে, সেটি নিশ্চিত। ফলে করমুক্ত আয় সীমা আরও বাড়ানো প্রয়োজন হলেও দৃষ্টি নেই সেদিকে। কেবল লুটপাটের রাস্তা তৈরির চেষ্টায় অগ্রসর হচ্ছে বাজেট নামক পাগলাঘোড়া। দৌড় বাড়ে, কিন্তু লক্ষ্যে পৌছে না।
তার উপর আবার এই বাজেট যে, নারী-যুব-শিক্ষা-শ্রমিক-কৃষকবান্ধব নয়; তা স্পষ্ট করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট পুরোটাই ব্যবসাবান্ধব। তার মানে দাঁড়াচ্ছে- করোনা পরিস্থিতিতে করোনায় আক্রান্তদেরকে নিয়ে যেভাবে হাসপাতালগুলো ব্যবসা করছিলো তা আরো গতিশীল হবে, করোনায় মৃত্যুবরণকারী লাশগুলো নিয়ে এম্বুলেন্স ব্যবসায়ী-কাফন-কফিন ব্যবসায়ীরা যেভাবে ব্যবসা করেছে তা আরো গতি পাবে, গতিশীল হবে বাংলাদেশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো! আহা ধনির অর্থমন্ত্রী! ধনির পক্ষে ভালোই একটা বাজেট দিলেন, তা আবার সংবাদমাধ্যমে স্পষ্টও করনে! এই না হলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার নমুনা!
খুবই দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে যে, জাতির পিতা গণমানুষের মুক্তির কথা বলে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন, অথচ সেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে অর্থনৈতিক পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষকে। কেন এটা করা হচ্ছে? উত্তর একটাই অর্থমন্ত্রী নিজেও একজন ব্যবসায়ী। অতএব, ব্যবসা বান্ধব বাজেটই তাঁর ও তাঁর ব্যবসায়ী বন্ধুদের জন্য শ্রেয়। তাতে গণমানুষের আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলে তারা নেবে, অর্থমন্ত্রীর তাতে কিছু যায় আসে না! হয়তো তাই তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সুযোগ নেবেন। আর সুযোগ নেওয়ার অর্থ হচ্ছে তারা উৎপাদনে যাবেন। উৎপাদনে গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন। এ বছর ভ্যাট ও করে যে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছে-এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজস্ব আহরণ ও বিনিয়োগ বাড়ানো। পুরো অর্থনীতির চালকের সিটে থাকবে বেসরকারি খাত। তাদের সহায়তা আমরা করব। তারা এগিয়ে নিয়ে যাবে অর্থনীতি। এক্ষেত্রে রাজস্ব নীতি বড় ধরনের সহায়তা করতে পারবে। যে কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতিকে সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে রাজস্ব নীতি দিয়ে। কর হার ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ করে রাখা হয়েছে। আমি মনে করি এটি অনেক বেশি, ব্যবসায়ীদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। কোনো এক সময় ছিল সুপার ইনকাম ট্যাক্স। অর্থাৎ যারা বেশি আয় করবেন তারাই বেশি কর দেবেন। কিন্তু উল্টোটা হওয়া উচিত ছিল। যারা সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে আয় করবেন তাদের আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া দরকার ছিল। সেটা কখনো করা হয়নি। এজন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয় দেখে নীতি সহজ করে যেটি সর্বজনীন করার দরকার, সেটি করা হয়েছে। এবার বাজেটে যা পাওয়া গেছে এখানে স্থির থাকব না। আগামীতে আমরা আরও উদার থাকব। ট্যাক্স বলেন, ভ্যাট বলেন, মূসক বলেন সব রেট কমাব। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজস্ব আদায়কে আরও সম্প্রাসরণ করা-এটি মনে রাখতে হবে।
এই স্বাধীনতার ৫০ বছরে ঋণনির্ভর বাজেট। যে বাজেট আমাদের ঋণী করে রাখবে বছরের পর বছর। বর্তমানে যার অংক ৮৫ হাজার হলেও আগামী বাজেট আসতে আসতে তা হবে লক্ষ টাকারও বেশি। সেই সময়ের আগেই জাগতে হবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে। কথা বলতে হবে-আওয়াজ তুলতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চলুন নির্মাণ করি ঋণমুক্ত বাংলাদেশ। সেই প্রত্যাশা থেকে তুলে ধরছি একটি বিষয়; আর তা হলো- ‘এটা হচ্ছে সাগর পাড়ের এলাকা। এখানে সবকিছুই নির্ভর করে মাছের ওপর। মাছ থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য আছে, না থাকলে নেই। জেলেরা সাগর থেকে ট্রলার ভর্তি করে মাছ নিয়ে এলেই জমজমাট থাকে সবকিছু। বেচা-বিক্রি বাড়ে দোকানপাটে। চলে বরফ কল। বিক্রি হয় জাল, সুতা আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। সচল থাকে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা। মাছ ছাড়া যেখানে সবকিছুই অচল সেখানে ১৫ দিন ধরে বন্ধ সাগরে মাছ ধরা। এটা চলবে আরও ৫০ দিন। তার ওপর চলছে লকডাউন। কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছি না। বকেয়া পড়ছে দোকানের ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল।’ কথাগুলো বলছিলেন পাথরঘাটা বন্দর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অরুন কর্মকার। তার চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। এই ছাপ মাফ আনতে পারবে না নিরন্ন মানুষের কষ্টসময় থেকে। কেননা, নির্মম হলেও সত্য যে, তারা কিছু পায়নি, পাচ্ছেনা, পাবেও না প্রণোদনা নামক আলেয়াকে। যে কারণে তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে- ‘সরকার প্রণোদনা-ঋণ অনেক কিছুর কথা বলছে, কিন্তু আমাদের মতো তৃণমূলে কিছুই পৌঁছাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত হয়তো পথে বসতে হবে।’
আমার কৈশোরে সাংবাদিকতার শুরুতে আকতার ফারুক শাহিন ছিলেন নিরন্তর প্রেরণা-অভিভাবক। সংবাদযোদ্ধা হিসেবে বরিশাল বিভাগীয় শহরে তিনি নিবেদিত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে। যাতে করে অন্তত মানুষ ‘শাদাকে শাদা আর কালোকে কালো’ বলার প্রেরণায় অগ্রসর হয়। উপরের যে কথাগুলো দিয়ে এই লেখার সূচনা, সেই লেখাগুলো তাঁরই একটি সংবাদ-এর ভেতর থেকে আপনাদের জন্য নিবেদন করেছি একারণে যে, জাতি কেবল উন্নয়নের রোল মডেল হওয়ার গল্পই শুনছে- গল্পবাক্স হিসেবে ব্যাপক পরিচিত বিটিভিসহ অধিকাংশ ইলেট্রনিক্স মিডিয়ায়। কিন্তু এই গল্পের বাইরের সত্যটাও আপনাদের জানা থাকা প্রয়োজন ইতিহাস হওয়ার স্বার্থে। তো যে কথা বলছিলাম-অভাবে স্বভাব নষ্ট না হলেও জীবন-সংসার নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি মানুষের। কারণ একটাই- কোথাও কোন সুপরিকল্পনা নাই, তার উপর না নীতি-আদর্শ-সততার রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চর্চা। শুধু গাল ভোলানো গল্প আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন খুশি করার চেষ্টা। দেশটা গোল্লায় গেলেও তাঁকে জানানো হচ্ছে- উন্নয়নের রোল মডেল হচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সাথে সরকারের ভেতরে থাকা খন্দকার মোস্তাকদের উত্তরসূরীরা রাষ্ট্রের টাকায় বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে বিবৃতি, বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ আর জাতির জনক কন্যার পক্ষের কিছু সংবাদ-প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যবস্থা করছে, ধরছে জাতি সংঘের বিভিন্ন দপ্তরে-উপদপ্তরে পজিটিভ উক্তি দেয়ার বায়নাও। আর সেসব বিবৃতি-সংবাদ দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুশি হচ্ছেন; ভাবছেন- ‘যাক পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি স্বার্থক।’
কিন্তু আদৌ কি তিনি স্বার্থক? তাঁর রাষ্ট্রিয় দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী-আমলারা স্বার্থক? মোটেই না। স্বার্থক হলে আর ৮৫ হাজার টাকার ঋণের তলায় পড়তো না দেশের প্রতিটি মানুষ। প্রতিদিন উন্নয়নের রোল মডেলের গল্প শোনানো সরকারের ভেতরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে ঋণের বোঝা বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির গল্প, উন্নয়নের গল্প প্রতিদিন আমাদের রাজনৈতিক নেতারা, এমপি-মন্ত্রীরা শোনালেও এটাই সত্য যে, প্রতিটি মানুষের মাথায় ৮৪ হাজার ৭৭০ টাকা ঋণের দায় নেমে এসেছে। কারণ বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু এই অঙ্কের ঋণ রয়েছে। যা গত এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৬৬৩ টাকা। আগামী এক বছরে তা আরও কমপক্ষে ১৩ হাজার ৬০ টাকা বাড়বে। ফলে ওই সময়ে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে প্রায় ৯৮ হাজার টাকা। এ কারণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটেও ব্যয়ের দিক থেকে চার নম্বরে রয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধের খাত। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে মানুষের মাথাপিছু বরাদ্দ ৩৭ হাজার ৩৩৩ টাকা। এ হিসাবে ঋণ মাথাপিছু বরাদ্দের দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর আদায় করতে না পারায় সরকারকে বেশি ঋণের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে।
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি