বাংলাদেশ থেকে বিশে^র বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার নিয়ে ইদানিং সংসদ অধিবেশন বেশ উত্তপ্ত। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি বেশ সোচ্চার। দূর্নীতির মাধমে টাকা আয় করে তা বিদেশে পাচার করে তা নিরাপদ করা হচ্ছে। আন্ডার ইনভয়েস বা ওভার ইনভয়েস করে এসব টাকা পাচার হচ্ছে। অবশ্য এর বাইরে রয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের সুবিধা। তা যথাযথ ব্যবহারও হচ্ছে। আর এর সাথে যুক্ত রয়েছে রাজনীতিক ও আমলারা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)- এর ২০১৯ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে ২০১৫ সালে ৫৯০ কোটি ডলারের সমপরিমান অর্থ পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে (৮৪ টাকা প্রতি ডলার হিসাবে) এ অর্থের পরিমান ৪৯ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। আর ২০১৪ সালে দেশ থেকে ৯১১ কোটি ডলার পাচার হয়েছিল। যার পরিমান গড়ে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। গোপনে এ টাকা পাচারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। দেশ অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাবার কারনে বিরুপ প্রভাব চোখে দেখা যাচ্ছে না। তবে ঘুনে ধরা কাঠোর মতোই নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি।
কোনো অবস্থাতেই দূর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা। বর্তমানে বিশে^র সবচে দূর্নীতিগ্রস্থ দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। বার্লিন ভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত ‘দূনীতির ধারনা সূচক-২০২০ তে দেখা গেছে এ চিত্রে। যা প্রকাশিত হয়েছে গত ২৮ জানুয়ারী। রাজনৈতিক ক্ষমতার ছত্রছায়ায় টাকা পাচার করে কেউ শান্তি পেয়েছে তার উদাহরণ বিরল। পাচারকৃত টাকা সিংঙ্গাপুর থেকে ফিরিয়ে আনার দৃষ্টান্ত রয়েছে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১ হাজার ১৪ জন টাকা পাচারকারীর তালিকা থাকলেও কোন আইনগত প্রদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বা পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। অবশ্য দূর্নীতির দায়ে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের একজন সাংসদ জেল খাটছেন। সংসদ সদস্য পদ শূন্য হলেও টাকা পাচারের ঘটনা বন্ধ হয়নি। এ জাতীয় ঘটনা বিশ^ব্যাপী আমাদের মাথা হেট করলেও আমরা সচেতন হতে পারি নি।
দেশে দূর্নীতি দমন কমিশনে আছে। কিন্তু দূর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের ধরতে তাদের সফলতা নেই। বরং দূর্নীতি গ্রস্থ ব্যক্তিদের দায় মুক্তি দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। অথচ লাভের গুড় যদি পিপড়ায় খায় তবে যে পুঁজিতে সংকট হবে তা কেউ ভাবছি না। দেশে অনেক বড় বড় দূর্নীতির খবর বেরিয়েছে। কিন্তু সেগুলো আইনের আওতায় এনে ক’জনের বিচার হয়েছে তা কেউ জানে না। সম্প্রতি ২০২১-২০২২ সালের বাজেট ঘোষনা করা হয়েছে। দূর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যথাযথ ভাবে বাজেট বাস্তবায়িত হবে কি করে?