রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। দেশের বিভিন্ন জেলায় জ্বালানি তেলের নতুন ফিলিং স্টেশন স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ওই ফিলিং স্টেশনগুলো স্থাপন করবে সংস্থাটির তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি- পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল। ইতিমধ্যে মুজিববর্ষের কর্মসূচির আওতায় সরকারি তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর ৪টি ফিলিং স্টেশন নির্মানাধীন রয়েছে। এখন নিজস্ব অর্থায়নে বিপিসি আরো ফিলিং স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব করেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তরাও মডেল ফিলিং স্টেশনের মানদ- রক্ষা করে নতুন অয়েল পাম্প স্টেশন নির্মাণ করতে পারবে। মূলত তেলে ভেজাল রোধ এবং পরিমাণ ও মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই ওই ফিলিং স্টেশনগুলো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিপিসি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে প্রতি বছরই নতুন গাড়ি এবং সড়ক বাড়ছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নতুন ফিলিং স্টেশন হচ্ছে না। ফলে অনেক স্থানেই বিপজ্জনকভাবে অবৈধ তেলের পাম্প গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি ভেজাল তেলের বেচাকেনাও কমছে না। এমন অবস্থায় নির্দিষ্ট মানদ- রক্ষা করে বিভিন্ন জেলায় মডেল ফিলিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মডেল ফিলিং স্টেশনগুলোতে তেল গ্রহণের সুবিধার বাইরেও আধুনিক রেস্টুরেন্ট, পরিচ্ছন্ন ও মানসম্পন্ন শৌচাগার এবং চালকদের জন্য বিশ্রামাগার থাকবে। বর্তমানে সিংহভাগ ফিলিং স্টেশনেই শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন এবং রেস্টুরেন্ট ও বিশ্রামাগার নেই।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ২ হাজার ২৬০টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। তার মধ্যে চট্টগ্রামে ৩৬৮টি, ঢাকায় ৫৫৮টি, সিলেটে ১৪৪টি, ময়মনসিংহ ১২০টি, বরিশাল ৬৫টি, খুলনাতে ৩৩০টি, রাজশাহীতে ৩২৭টি, রংপুরে ৩৪৮টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। তার মধ্যে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ৮২৪টি, যমুনা অয়েল কোম্পানির ৭৩৫টি এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানির ৭০১টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। আর ৩টি কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়নে ও ব্যবস্থাপনায় সব মিলিয়ে মাত্র ১০টির মতো ফিলিং স্টেশন পরিচালনা করছে। বিগত ২০১৬ সাল থেকে থেকে জ্বালানি তেলের ফিলিং স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন বন্ধ ছিল। তেলের পাম্প ও ফিলিং স্টেশনগুলোর মধ্যে অন্যায্য প্রতিযোগিতা, ভেজাল ও মানহীন তেল বিক্রি, পরিমাণে কম দেয়া এবং অবৈধ পথে তেল সংগ্রহের পপ্রবণতার কারণে নতুন করে পাম্প স্টেশন স্থাপনে এমন অচলাবস্থা বিরাজ করছে। তাছাড়া বিদ্যমান পাম্পগুলোর মালিকদের অনেকেও নতুন ফিলিং স্টেশন নির্মাণের বিপক্ষে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করেছে। গত বছর বিশেষ বিবেচনায় একটি ফিলিং স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। আরো অনেকগুলো ফিলিং স্টেশন নির্মাণের আবেদন মন্ত্রণালয় ও বিপিসিতে জমা রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটেই নতুন অয়েল ফিলিং স্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জ্বালানি বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় বিপিসির পক্ষ থেকে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানিকে নিজস্ব অর্থায়নে ফিলিং স্টেশন স্থাপন করা জরুরি বলে তাগিদ দিয়েছিল। কারণ বিভিন্ন জায়গায় বিপণন কোম্পানিগুলোর নিজস্ব অর্থায়নে ফিলিং স্টেশন থাকলে জ্বালানি তেলে ভেজাল রোধ করা সম্ভব হবে। বিপণন কোম্পানিগুলো ওই আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবও তাতে সহমত পোষণ করেন।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ মেহদী হাসান জানান, মডেল ফিলিং স্টেশনের মানদ- রক্ষা করে স্টেশন স্থাপন করার জন্য কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় ও সম্ভাব্য জমি দেখছে। বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এ ধরনের ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করতে চাইলে তাদের অনুমোদন দেয়া হবে।