করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে,এবছর আমের বাজার সঠিক যাচ্ছে না বলে আমচাষীরা অভিযোগ তুলেছেন। এর ভেতরে,রাজশাহীর সর্ববৃহৎ পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে আম কুরিয়ার সার্ভিসে কিংবা আত্ময়ীদের জন্য পাঠাতে আসলে, মহাসড়কে পথে পথে খাজনা আদায়ের নামে চাঁদাবাজির হচ্ছে।
ভূক্তভোগিরা বলছেন, হাট ইজারদারের কর্থিত লোকজন আম ক্রেতা-বিক্রেতা নিকট হতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি যারা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দিয়ে আত্বীয়দের জন্য আম নিয়ে যাতায়াত করতে গেলেও তাদের নিকট থেকে জোরপূর্বক খাজনার নামে টাকা আদায় করছে। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে,ইজারাদারা বিভিন্ন ভাবে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। শনিবার বিকালে সরেজমিনে জেলার সর্ববৃহৎ আম আড়ত পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বানেশ্বর-শিবপুর মহাসড়কের কলা হাটের নিকট একদল যুবক আম বহনকারী বিভিন্ন রকম যানবাহন থামাতে দেখা গেছে। যুবকদের হাতে বানেশ্বর হাটের ৫০ টাকার খাজনা আদায়ের রশিদ রয়েছে। এরপর খাজনার নামে গাড়িগুলো হতে আমের কাঠুন প্রতি ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। কেউ খাজনার রশিদ চাইলে, গাড়ি প্রতি একটিমাত্র রশিদ দিচ্ছেন। এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্ক লাগতে দেখা যাচ্ছে। বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে আসা আবুল কাশেম নামের এক ভ্যানচালক বলেন, আমি বানেশ্বর বাজারে কুরিয়ার করতে এক ভ্যান আম নিয়ে এসেছি। আমার সঙ্গে আমের মালিক নেই। অথচ বাজারে যাওয়ার আগে আমার নিকট প্রতি কাঠুনে ৫০ টাকা করে খাজনা চাচ্ছেন। আমি তাদের ১০০ টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা সেটা নিবে না। আমি আমের মালিককে ফোন করেছি। তিনি টাকা নিয়ে আসলে কুরিয়ারে আম নিয়ে যাব।
আবু বক্কর সিদ্দিক নামের অপর একজন আম বিক্রেতা বলেন, আমাদের তিনজন মিলে একটি গ্রুপ আছে। আমরা অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রি করে থাকি। প্রতিদিন বিভিন্ন বাগানে ঘুরে আম কিনে কাঠুন করি। তারপর কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে থাকি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো জন্য,বেশীরভাগ কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসগুলো বানেশ্বরে রয়েছে। সেখানে আমের কাঠুন নিয়ে যেতে হয় আমাদের। আজ (১২ই জুন) ৬ কাঠুন আম পাঠাতে এসে ২৫০ টাকা খাজনা দিতে হয়েছে। অথচ তারা রসিদ দিয়েছে মাত্র ৫০ টাকার। আমরা এখানে আম কেনাবেচে করি না। তারা প্রতিদিন আমাদের নিকট হতে জোরপূর্বক খাজনার নামে টাকা আদায় করছে। বিষয়টি হাট ইজারদারকে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শামীম হোসেন নামের এক ভ্যানচালকের অভিযোগ, পুঠিয়া থেকে ভ্যান করে দুইকাঠুন আম রাজশাহী শহরে আত্মীয়র বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাকে বলা হয়ে ছিল। কিন্তু ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের বানেশ্বর এলাকায় আসামাত্র কিছু লোকজন গাড়ি থামায়ে ১০০ টাকা দাবি করছে। তারা বলছে, এটা নাকি নিয়ম, হাটের ওপর দিয়ে আম নিয়ে গেলে টাকা দিতে হবে। পরে অনেক দরকষাকষির পর ৫০ টাকা দিয়ে ঝমেলা দূর করেছি। জুয়েল নামের একজন বানেশ্বর হাটের খাজনা আদায়কারী বলেন, আমের মৌসুমের জন্য আমরা ৫০ লাখ টাকায় সাব লীজ নিয়েছি। যার কারণে, আম নিয়ে যেই আসুক আমরা কাঠুন প্রতি খাজনা আদায় করছি। খাজনা আদায় করার জন্য বানেশ্বর বাজারের চারিদিকে লোকজন রাখা হয়েছে। শরিফ নামের অপর একজন খাজনা আদায়কারি বলেন, ইজারদারের নির্দেশেই আমরা মহাসড়কের ওপর আমের খাজনা নিচ্ছি। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিকট থেকে খাজনা নেওয়ার নিয়ম আছে, কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে ইজারদারের কাছে গিয়ে করেন। আমরা খাজনা আদায় করতে এসেছি কাউকে জবাব দিতে নয়।
আম ব্যবসায়ি রাজ্জাক হোসেন বলেন, জেলার এই বৃহৎ আম আড়তে এবার খাজনা আদায়ে নামে চলছে জুলুম। হাট কমিটির লোকজন ক্রেতা-বিক্রতা উভয়ের নিকট থেকে জোর করে মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। যা বিগত বছরগুলো তুলনায় অনেক বেশি। এখানে ইজারদার শুধু নামে মাত্র আছেন। পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন একটি সিন্ডিকেট চক্র। মোজাম্মেল হোসেন নামের আমচাষী বলেন, রাজশাহী জেলার অনেক স্থান আছে। যেখানে আমের ওপর নির্ভর করে আমচাষীরা সারা বছরের আয় করে থাকেন। ওই টাকা ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে,এবছর আমের বাজার সঠিক যাচ্ছে না।
বানেশ্বর হাটের ইজারদার ওছমান আলী বলেন, আম বাজারে বাহিরে খাজনা আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। হাটের ভেতরে কাঠুন প্রতি ৫ টাকা করে ক্রেতাদের নিকট হতে খাজনা আদায় করতে পড়বে। বানেশ্বর বাজারে আম কুরিয়ার সার্ভিসে করতে আসলে,কোনো টাকা দেওয়া লাগবে না। যদি কেউ নিয়ে থাকে সেটা নিয়ম বর্হিভূত।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ বলেন, মহাসড়কে আমের গাড়ি থামিয়ে যারা খাজনা নিচ্ছে তারা চাঁদাবাজ। নিয়ম অনুসারে আমচাষি বা বিক্রেতার নিকট থেকে কোনো খাজনা আদায়ের বিধান নেই। যদি চাঁদা আদায় করে থাকে, তাদের আটক করে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন হবে।