সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গম আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। চলতি মাসে শেষ হতে চলা ২০২০-২১ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে প্রায় দেড় লাখ টন গম আমদানি করা হয়েছে। আমদানীকৃত এসব গমের বাজারমূল্য ৪০০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা বলছেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় দেশীয় বাজারে কৃষিপণ্যটির চাহিদা বেশি। ফলে আগের অর্থবছরের তুলনায় আমদানি দুই হাজার গুণেরও বেশি বেড়েছে। ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত সিনিয়র রাজস্ব কর্মকর্তা আকবার আলী জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৭ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময় বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছিল মাত্র ৬৫ টন। ১৪ লাখ টাকায় এসব গম আমদানি করা হয়। গত অর্থবছর কভিডজনিত লকডাউন ও বিধিনিষেধের কারণে আমদানি কমে গিয়েছিল। তবে এ বছর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় আমদানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাতক্ষীরা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী হারু ঘোষ জানান, তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সপ্তাহে ৪০-৫০ ট্রাক গম আমদানি করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তার সিঅ্যান্ডএফের মাধ্যমে গম আমদানি করে। তবে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গম আমদানি বেড়েছে বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরার পাইকারি গম বিক্রির সবচেয়ে বড় মোকাম পাটকেলঘাটা বাজার। এখানকার গম ব্যবসায়ী ও আটা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুকন্দ ফ্লাওয়ারের স্বত্বাধিকারী গোবিন্দ সাধু জানান, প্রতি মাসে তার প্রতিষ্ঠানে গমের চাহিদা রয়েছে ১৭০-১৮০ টন। বর্তমানে আমদানীকৃত প্রতি টন গম পাইকারি দামে ২৬ হাজার থেকে ২৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। গোবিন্দ সাধু বলেন, স্থানীয়ভাবে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয়, তা দিয়ে জেলার চাহিদা মেটে না। ফলে ব্যবসায়ীরা আমদানীকৃত গম সংগ্রহ করে চাহিদা মেটান। ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, দেশীয় বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জেলা ও জেলার বাইরের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় গম আনছেন। ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্ব থাকা কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আমীর মামুন জানান, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছর বন্দর দিয়ে গম আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। তবে কৃষিপণ্যটি আমদানিতে সরকারের কোনো রাজস্ব আসে না। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছিল স্বল্প পরিমাণে। এ সময় মাত্র ৬৫ টন গম আমদানি করা হয়। এদিকে সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় গম উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ১৫০ টন। আবাদ হয়েছিল ৯০০ হেক্টর জমিতে। জেলার তালা উপজেলার খলিষাখালী গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের জানান, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে গম আবাদ করে প্রায় ৩০ মণ উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, গম সল্প সময়ের একটি লাভজনক ফসল। কিন্তু এ জেলার কৃষকরা গম চাষে কম আগ্রহী। তার পরও চলতি মৌসুমে ৯০০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে, যা পাঁচ বছরের ব্যবধানে ৪০ শতাংশ বেশি। ২০১৬ সালেও জেলায় গম চাষ হয় ৫৫০ হেক্টর জমিতে।