নীলফামারীর সৈয়দপুরে নদী খননের মাধ্যমে একদিকে যেমন যৌবন ফিরে পেয়েছে অপর দিকে সৈয়দপুর, জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জের নদীগুলো খননে পাল্টে গেছে নদীর চিরচেনা রূপ। দীর্ঘদিন থেকে অযতœ অবহেলায় পড়ে থাকা নদীগুলো পুনঃখননের ফলে ফিরে পেয়েছে তার স্বাভাবিক গতি ও হারানো যৌবন। নদী খননের পূর্র্বে নদীগুলোর অবস্থা ছিল জরাজীর্ণ। দীর্ঘদিন থেকে নদীর অধিকাংশ জমি এবং নদীর কিনারা কেটে ভরাট করে সেখানে চাষাবাদ করে আসছিলো এক শ্রেনী পেশার মানুষ। নদীর ভেতর চাষাবাদের কারণে নদীর গভীরতা ও প্রশস্থতা হারিয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহমান গতিপথে বৃষ্টির পানি উজান হতে ভাটিতে যেতে বাধাগ্রস্ত হতো। ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিতো জ¦লাবদ্ধতা। সামান্য পানিতে নি¤œাঞ্চল হতো প¬াবিত। ব্যাপক হারে ক্ষতির সম্মুখীন হতো কৃষকেরা। নদী খননের ফলে শুধু কৃষিতেই নয়, প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলের দেশীয় মৎস্যচাষের উপরেও। নদী খননের মাধ্যমে চিন্তামুক্ত কৃষক পরিবার ও মৎস্যজীবীরা। জীবিকার খোঁজ পেয়েছে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহিত এসব নদী ও খাল খননের মাধ্যমে বেড়েছে সেচ সুবিধা, শষ্য উৎপাদন এবং বর্ষা মৌসুমে ত্বরান্বিত হয়েছে পানি নিষ্কাশন, নদীতে বেড়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ, অস্তিত্ব ফিরে পেয়েছে জীব বৈচিত্র। সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকারের প্রত্যক্ষ নজরদারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছে এসব নদী খননের কাজ।
জলঢাকা উপজেলার ধাইজান নদীর তীরবর্তী সুবিধাভোগী কৃষক লিয়াকত আলী বলেন, নদী খননের কারণে বন্যার পানি থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আগে অল্প পানিতে আমাদের আবাদি জমি ডুবে যেত। এখন নদী খননের কারণে আর ডুবে যাবে না। পানিতে নদীতে চলে যাবে। এলাকার জেলে সম্প্রাদায়ের কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, নদী খননের কারণে এ বছর নদীতে দেশি মাছ পাওয়া গেছে। এতে করে আমাদের আয় রোজগার বেড়েছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের মৎস্যচাষী আবদুর রহমান বলেন, প্রায় প্রতি মৌসুমে বর্ষাকাল আসলে আমরা ভয়ে ভয়ে থাকি। কারণ একটু অতি বৃষ্টি হলেই পুকুর প্লাবিত হয়ে যেত। এ বছর নদী খননের মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হবে।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট বড় নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধানে খনন করা হয়েছে ধাইজান, চাড়ালকাটা, খড়খড়িয়া নদী ও পচা নালা খালসহ মোট ১৩৩ কি.মি নদী খননে ব্যায় হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা। নদীর পাড় সংরক্ষনে লাগানো হয়েছে ৪০ হাজার গাছ। সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকারের প্রত্যক্ষ নজরদারীর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের নদী খননের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে একটি নদী ও ২টি খাল খনন করা হছে। ঝিনাই করতোয়া ৩৫ কিলোমিটার নদী খননে ব্যায় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৫ লক্ষ, খড়খড়ীয়া শাখা খালের ১৫ কিলোমিটার নদী খননে ব্যায় ধরা হয়েছে ৩কোটি ৫০ লাখ ও বাঙ্গালীপুর জলকরের ২ কিলোমিটার খননে ব্যায় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। নদীর পাড় সংরক্ষনে ২হাজার গাছ রোপন করা হবে।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকার বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নদী খননের কাজের মাধ্যমে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষরা উপকৃত হয়েছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতৃক গৃহিত ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট বড় নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের বাস্তবায়ন সফলতা পেয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায়ও।
তিন আরো বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে একটি নদী ও ২টি খাল খনন করা হচ্ছে এবং কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে আগামী অক্টোবরের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।