সরাইলে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে সেই সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফারজানা প্রিয়াংকাকে দেয়া হয়েছে বিদায় সংবর্ধণা। গত বুধবার লকডাউনের শেষ দিন সন্ধ্যার পর অফিসার্স ক্লাবে উপজেলা প্রশাসন করেছিলেন এ আয়োজন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই গিজাগিজি করে আলোচনা সভা ও ফটোসেশন করেছেন ২০ জন কর্মকর্তা কর্মচারি। মাস্ক ছিল মাত্র ৩ জনের মুখে। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের জিজ্ঞাসা স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও মাস্ক ব্যবহার না করার দায়ে আমাদেরকে যিনি জরিমানা করেছেন। আজ তিনিই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। উনাকে বা উনাদেরকে জরিমানা করবে কে? এ ছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ার ছবি গুলো এখন ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। তার মনগড়া সিদ্ধান্তের যাতাকলে নিস্পেষিতরা মুঁছকি হাঁসছেন। অনুসন্ধানে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে সরাইলে যোগদান করেন ফারজানা প্রিয়াংকা। শুরূ থেকেই তার কর্মকা- নিয়ে সমালোচনা ছিল মাঠ পর্যায়ে। দীর্ঘ ২ বছর ৪ মাস সরাইলের কর্মজীবনে তিনি নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। পদাধিকার বলে তিনি ছিলেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব। জায়গা ও উপকারভোগী সিলেকশনের দায়িত্ব ছিল তারই। নোয়াগাঁও ইউনিয়নে নদী সংলগ্ন স্থানে জায়গা সিলেশন করে বেকায়দায় পড়েন তিনি। পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ ওই জায়গাটি বাতিল করে নতুন জায়গা সিলেকশন করেন। উপকারভোগীর তালিকা নিয়েও তৈরী হয়েছে নানা সমস্যা। তার বিরূদ্ধে রয়েছে চেয়ারম্যানদের কিছু না বলেই উপকারভোগীর তালিকা করার অভিযোগ। এক ইউনিয়নের প্রকল্পে অন্য ইউনিয়নের ৪-১২ জন লোককে ঘর দিয়েছেন। কালিকচ্ছের কাবিতারায় রয়েছে সরাইল সদর ও জয়ধরকান্দি গ্রামের লোকজন। শাহজাদাপুরে রয়েছে শাহবাজপুর ইউনিয়নের ১০-১২ জন গৃহহীন। ফলে নিজেদের দীর্ঘদিনের জায়গার মায়া ছেড়ে আসছেন না তারা। এখন পর্যন্ত শাহজাদাপুর, চুন্টা, নোয়াগাঁও ও কালিকচ্ছে প্রায় ৩৩টি ঘরে লোক ওঠেনি। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা বলেন, আমাদের ইউনিয়নে ভূমিহীন অসহায় লোক রেখে অন্য ইউনিয়ন থেকে তিনি (এসিল্যান্ড) কেন লোক দিলেন বুঝলাম না। এখন তো অন্যরা ঘরে ঠিকমত বসবাস করছে না। তিনিই যোগদানের পরই আটকে দিয়েছিলেন জায়গা জমির নাম খারিজের নিস্পত্তির কাজ। অফিসে জমেছিল দেড়/দুই হাজার আবেদন। লোকজন শুধু ঘুরতেন। আর কাঁদতেন। বিভিন্ন জায়গায় নাম খারিজের ফায়সালার জন্য ধরণা দিতেন। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জায়গা জমি ক্রয়-বিক্রয়। সাব-রেজিষ্ট্রির খাতে রাজস্ব আয় কমে গিয়েছিল আশঙ্কাজনক হারে। স্থানীয় দলিল লেখকরা হয়ে পড়েছিল বেকার। ফলে এই বছরের ২৪ ফেব্রƒয়ারি আবেদনকারীরা মিলে নাম খারিজের দাবীতে উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে মানববন্ধন করেছিল। সাধারণ মানুষকে সেইদিন শান্ত করেছিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল। পরে ইউএনও ও এসি ল্যান্ড মিলে মাত্র ৩ দিনে ৭ শত আবেদন নিস্পত্তি করেছিলেন। ভুক্তভোগীরা তখন বলেছিলেন মাত্র ৩ দিনে শতাধিক নিস্পত্তি করতে পারলে দেড় বছর ধরে দেড় হাজার আবেদন কেন ঝুলিয়ে রাখলেন তিনি? কিছু লোকের কান কথায় বিনা নোটিশে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ফেব্রƒয়ারি খাল উদ্ধারের নামে ফয়সাল আহমেদের বাড়ির অনেক গুলো ফল ও কাঠের গাছ কেটে ফেলেন। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। ফয়সাল একই সালের ১৩ নভেম্বর উচ্চ আদালতে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দাবী করে এসিল্যান্ডের বিরূদ্ধে রীট পিটিশন নম্বর-৭১৬৬ দায়ের করেন। এক শ্রেণির দালাল তার নাম বিক্রি করে পুকুর ভরাট করত। ভেকু দিয়ে ফসলি জমি কেটে তৈরী করেছে পুকুর। বিষয় গুলো জানার ফলেও ব্যবস্থা নিতে খুব একটা আগ্রহ দেখাতেন না তিনি। সরাইল সদরে ও অরূয়াইল বাজরে সরকারি দখলকৃত জায়গায় একাধিকবার লাল কালি দিয়ে চিহ্ন দিয়েছেন। ভেঙ্গে উচ্ছেদ করার হুমকিও দিয়েছেন। মাসের পর মাস চলে গেলেও আর খবর নেই। এখনো বহাল তবিয়তে আছেন ওই দখলদাররা। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে তার ব্যবহারে মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না সরাইলের ব্যবসায়িরা। তার বিরূদ্ধে মাঝে মধ্যে লোকজনকে গালমন্দ করার অভিযোগও রয়েছে। আর সেই আলোচিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে দেয়া হয়েছে বিদায়ি সংবর্ধণা। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, তিনি (এসিল্যান্ড) দুই বছর এখানে কাজ করেছেন। তাই বিদায় বেলা ১০-১২ জন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সম্মান দিয়েছি। সকলের মুখেই মাস্ক ছিল। স্থানীয় স¤্রাট ফার্ণিশার্সের মালিক দুলাল। তিনি লকডাউন চলাকালে ১০-১২ জন শ্রমিক দিয়ে কারখানায় কাজ করিয়েছেন। আর এখন তিনি ফেসবুকে বিদায় অনুষ্ঠানের ছবি দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। প্রসঙ্গত: নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্যের সাথে বিদায় সংবর্ধণা অনুষ্ঠানের সংগৃহিত ছবির কোন সঙ্গতি পাওয়া যায়নি।