করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমনের মধ্যে আসন্ন ঈদুল আযহার জন্য কুরবানীর পশুর হাটে গিয়ে নয় নেটে কিনতে বলছে সরকার। এজন্য ইতোমধ্যে জেলাভিত্তিক অ্যাপ, ফেসবুক পাতা ও বিভিন্ন অনলাইন সাইটের মাধ্যমে গত ২ জুলাই থেকে পশু কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দোসরা জুলাই থেকে গত ১৩ জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৬ টি পশু বিক্রি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ রয়েছে। ঈদ ঘনিয়ে আসার কারণে অনলাইনে পশু বিক্রি বাড়ছে। সেই সাথে অনেকেই করোনা সংক্রমনের কারণে হাটে যেতে ভয় পাচ্ছেন। করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি লকডাউন শিথিল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সেই সাথে রাজধানীতে পশুর হাট না বসাবার আহ্বান জানিয়েছে।
গত বছর থেকে শুরু হওয়া অনলাইনে পশু ক্রয় বিক্রয়ের শুরু হলেও এবার এ বাজার জনপ্রিয় হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ গত বছরের তুলনায় এরইমধ্যে দ্বিগুণের বেশি পশু বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ পশু কোরবানি করা হয়। সেই লক্ষ্য পুরনেই জেলাভিত্তিক অ্যাপ, ফেসবুক পেজ এবং সাইট মিলে মোট ১৭৭৮ টি অনলাইন মাধ্যমে পশু বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে এ পর্যন্ত ১২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮৯ টি পশুর ছবি আপলোড করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৪ হাজার এর বেশী পশু বিক্রি হয়েছে। উপজেলা পশুপালন কর্মকর্তার অফিসে কর্মরত কর্মীরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে পশুর ছবি তুলে আনছে এবং অনলাইনে আপলোড করছে। ২০২০ সালে মোট কোরবানির পশু ১ শতাংশও অনলাইনে বিক্রি হয়নি। তবে এ বছর এরইমধ্যে প্রায় ২ শতাংশ পশু অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানা গেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে।
বিক্রেতা, আস্থা ও সেবার মান যদি ধরে রাখা যায় তবে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পশু বিক্রির পরিমাণ আরো বাড়বে। অবশ্যই কথা ঠিক ডিজিটাল মাধ্যমই পশু বিক্রির একমাত্র মাধ্যম নয়, আগামীতেও হবে না। তবে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চলমান সময় ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়বে আশা করা যায়। আগামী ১০ বছর পর হয়তো এ মাধ্যমেই ৮০/৯০ শতাংশ পশু বিক্রি হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ডিজিটাল হাটের এবারের স্লোগান হচ্ছে, "এক ক্লিকে হাট থেকে হাতে।" শুধু কোরবানির পশুর কেনাবেচা নয় বাংলাদেশের কোন প্রান্তে কোন হাট কখন বসবে সেই তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে এই ওয়েবসাইটে। অনলাইনে পশু পছন্দ করে মূল্য পরিশোধ করলেই বিক্রেতা আপনার ঠিকানায় পশু পৌঁছে দিবে। তবে পশু পৌঁছাবার প্রক্রিয়ায় পথে পথে চাঁদাবাজি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগও উঠেছে চাঁদা না দিলে গাড়ি থেকে পশু নামিয়ে নেয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি প্রতিরোধে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। অবশ্য পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছে। আমরা মনে করি শুধু কাগজী উদ্যোগে নয়, বাস্তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
শুধু পশু পরিবহন নির্বিঘœ নয়, সাথে বিক্রেতার চলাচলও অবাধ করতে হবে। যাতে তারা তাদের টাকা পয়সা নিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে।