করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিশ্ব আতঙ্কিত। প্রতিদিনই দেশে দেশে নানা তথ্যের সূত্রপাত ঘটছে। জীবন মরণের খেলায় মত্ত করোনাভাইরাস কে পরাজিত করে জীবনের গান গাইলেও শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। এমন এক গবেষণা প্রতিবেদন গত ১৫ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে। ইক্লিনিক্যাল মেডিসিন সাময়িকিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যাদের দীর্ঘদিন করোনার সংক্রমণ থাকে তাদের দেহের দশটি অঙ্গ-প্রতঙ্গের দু'শতাধিক প্রভাব দেখা গেছে। বিশ্বের ৫৭ টি দেশের ৩৭৬২ জন রোগীর ওপর অনলাইনে এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এতে দেহের ১০ অঙ্গ- প্রত্যঙ্গে ২০৩ প্রভাব দেখা গেছে। এরমধ্যে ৬৭ টি লক্ষণের ওপর নজর রাখা হয়েছিল সাত মাস।
দীর্ঘমেয়াদী করোনা আক্রান্ত নিয়ে প্রচুর আলোচনা হলেও এই জনগোষ্ঠীর ওপর প্রক্রিয়াগত অনুসন্ধানী গবেষণা একেবারে নাই বললেই চলে। এর লক্ষণগুলোর ব্যপ্তি সময়ের সাথে সাথে লক্ষণগুলোর বিস্তার, তীব্রতা, প্রত্যাশিত ক্লিনিক্যাল কোর্স, দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব এবং প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য ফিরে পাওয়ার সময় নিয়ে তুলনামূলক কমই জানা গেছে। তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের নিউরো বিজ্ঞানী অ্যাথেনা আকরাসি এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন সবচেয়ে সাধারণ যে প্রভাব গুলো দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে- অবসাদ, কাজের শেষে অসস্তি অর্থাৎ শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের পর লক্ষণগুলোর অবনতি এবং ভুলে যাওয়া, যাকে প্রায়ই কুয়াশাচ্ছন্ন মস্তিষ্ক বলা হয়। এর বাইরে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে দৃষ্টিবিভ্রম, কম্পন, চুলকানি, ঋতু¯্রাব অনিয়ম, যৌন অক্ষমতা, হৃদপি-ে ধড়ফড়ানি, প্রসাবের বেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা, স্মৃতিভ্রষ্টতা, ঝাপসা দৃষ্টি, ডায়রিয়া ও কানে শো শো শব্দ শোনা। বস্তুত করোনা এমনই এক ভাইরাস যা দুনিয়াকে গুডবাই জানাতে বাধ্য করে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলে জীব মৃত অবস্থায় থাকতে হয়। রোগের নানা প্রভাবে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কাজেই করোনাভাইরাস খুব ভয়ঙ্কর। যাকে ধরবে তার জীবনের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে।। বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাস নিয়ে কেউ সচেতন নয়। সরকার লাগাতার সর্বাত্মক লকডাউন দিলেও মানুষকে ঘরে আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে এবং ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছেন সরকার। যদিও লকডাউন শিথিল করায় করোনা জাতীয় পরামর্শক কমিটি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এদিকে লকডাউনে মানুষ ঈদ করতে ছুটছে ঝাঁক বেঁধে, শপিংমলে বাড়ছে জটলা। পথে-ঘাটে যান ও জনজট দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা খুবই আতংকিত। তারা বলছে, এমনি প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণের রেকর্ড হচ্ছে৷ ঈদের পর কি ভয়াবহ অবস্থা হবে, তা কল্পনা করা যাচ্ছে না। আক্রান্ত ও মৃত্যুর ভয়াবহতায় দেশের সব হাসপাতালগুলো তাদের চিকিৎসা সহায়তায় সক্ষমতা হারিয়েছে রোগীর চাপের কারণে। সাথে আছে অক্সিজেন সংকট।
কাজেই ঈদের খুশিতে মেতে নিজেদের জীবন বিপন্ন করা উচিত নয়। জীবনে বেঁচে থাকলে আনন্দ করার জন্য বহু ঈদ পাবেন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নিজেকে ঘরে বন্দি রেখে আক্রান্তদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে জীবন বাঁচাতে, জীবন চালাতে তৎপর হওয়া উচিত। কারণ জীবন হারাবেন না। বাঁচলে নানা উপসর্গে নিজেকে আক্রান্ত করবেন না। কাজেই সাবধান।