করোনাভাইরাসের মহামারি যখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় তখন মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা পালন করতে হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে কয়েকদিন ধরেই রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর থেকে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা চলছে। ঈদ মানে আনন্দ হলেও ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই নিরানন্দের সুর ধ্বনিত হতে দেখা যায়, যার অবসান হওয়া জরুরি। বস্তুত ঈদের আগে যানবাহনের টিকিট সংকট, সড়ক ও লঞ্চ দুর্ঘটনা, ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়া, সড়কের দুর্দশাসহ নানা কারণে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। এগুলোর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে করোনার প্রকোপ। ইতোমধ্যে দেশের বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারাও গেছেন। এ অবস্থায় উৎসবের রঙ ফিকে হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপরও ঈদুল আজহার উৎসব-আনন্দ সামনে রেখে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বিভিন্ন পথের যাত্রী হয়ে বাড়ি অভিমুখে যাত্রা করেছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। তবে পথ নিষ্কণ্টক না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। জানা গেছে, মহাসড়কগুলোয় যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়া, গাড়ি বিকল হওয়া, দুর্ঘটনা, ভাঙাচোরা সড়কে গাড়ির গতি কমে যাওয়াসহ অন্যান্য কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদে জনদুর্ভোগ কোনোমতেই কাম্য নয়। পথ যাতে নিষ্কণ্টক হয়, মানুষ যাতে বিনাক্লেশে বাড়ি পৌঁছতে পারে-এর উপায় খোঁজা জরুরি বলে মনে করি আমরা।
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ-পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই ১৫ থেকে ২৩ জুলাই সকাল পর্যন্ত লকডাউন তথা বিধিনিষেধ শিথিল করায় মানুষ ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, তা বলাই বাহুল্য। তবে উদ্বেগজনক হলো, ঘরমুখো অনেক মানুষের মুখেই মাস্ক নেই; উপরন্তু সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতাও হচ্ছে উপেক্ষিত। এর ফলে করোনা সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে পারে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি এবং পরবর্তী সময়ে তা রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সরকার কঠোর লকডাউনের পথ বেছে নিয়েছিল। রাস্তাঘাটে মানুষ ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছিল। এখন ঈদ উপলক্ষে সবকিছু ‘উন্মুক্ত’ করে দেওয়ায় রাজধানীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। গ্রামে বসবাসরত মানুষ সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বরাবরই উদাসীন থেকেছেন; উপরন্তু জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শও উপেক্ষা করেছেন।
এ অবস্থায় আসন্ন ঈদে মানুষ দল বেঁধে ঢাকা থেকে গ্রামমুখী হওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কুরবানির পশু কিনতে হাটবাজারে ভিড় করলে সংক্রমণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। এ অবস্থায় প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা। মানুষকে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রোধের পরিকল্পনাগুলো স্মার্ট, বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া উচিত। এ সংকটকালে দেশের মানুষ যাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন ও নিয়মশৃঙ্খলা মেনে ঈদ উদযাপন করে, এ ব্যাপারে তাদের বাধ্য করা উচিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি যে রূপ ধারণ করেছে, তাতে অনেক কিছুই শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। বিশেষত ঈদ উপযাপনকালে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা না হলে দেশে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে, যা মোটেই কাম্য নয়। পাশাপাশি প্রত্যেককেই সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।