পাবনার হিমায়েতপুর মানসিক হাসপাতাল ক্যাম্পাসে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র’র স্মৃতি বিজড়িত বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্রের ভগ্নপ্রায় স্থাপনা প্রকাশ্য ভেঙ্গে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। অথচ এতোবড় নিরাপত্তা বলয় থেকে কে বা কারা লোডার রড, এ্যাংগেল, দরজা জানালা খুলে নিলেও কিছুই জানেন না মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলো যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই হেমায়েতপুর সৎসঙ্গ আশ্রম কর্তৃপক্ষ বারবার সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাবী জানিয়ে আসলেও কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
ঠাকুরের বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্র ভাঙ্গার বিষয়ে কেউই কোন দায়িত্ব নিচ্ছেন না। চিঠি চালাচালিতেই থমকে আছে আশ্রম কর্তৃপক্ষ। প্রকাশ্য অবকাঠামো ভেঙ্গে মূল্যবান সম্পদ নিয়ে যাওয়া এবং গরু বিচরণের স্থান বানানো হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানে না মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্টো তারা পাবনার গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে ভেঙ্গে ফেলা হতে পারে বলে দাবী করছেন।
এ বিষয়ে পাবনার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালের অভ্যন্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র’র স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার কোন দিকনির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমাদের ভেঙ্গে ফেলার কোন ক্ষমতাও নেই। তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি, এটি সংরক্ষেনের জন্য একটি নীতিগত সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আর পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল বাসার বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতাল স্মৃতি বিজড়িত এই স্থাপনাটি ভাঙ্গার বিষয়ে কিছুই জানে না। এটি ভেঙ্গে ফেলার কোন নির্দেশানও আমার কাছে আসেনি। হাসপাতালের সামনে এ ধরণের ঘটনাটি ঘটছে অথচ কর্তৃপক্ষ কিছুই জানেন না এমন প্রশ্নে পরিচালক বলেন, এটি দেখভালের জন্য আমার যথেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মি নেই। কে বা কারা ভেঙ্গেছে সেটিও আমরা জানিনা।
এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, এ ঘটনাটি আমি ভালো ভাবে জানিনা। বিষয়টি জেনে তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে দাবী করেন তিনি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পাবনার হেমায়েতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৯ সালে তিনি হেমায়েতপুরে অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। সৎসঙ্গের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি গড়ে তোলেন সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়, সৎসঙ্গ মেকানিক্যাল ও ইলেট্রিক্যাল ওয়ার্কসপ, সৎসঙ্গ প্রেস ও পাবলিকেশন হাউস, সৎসঙ্গ কুঠির বিভাগ, সৎসঙ্গ ব্যাংক, পূর্তকার্য বিভাগ, বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৬ সালে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র স্বাস্থ্যগত কারনে বায়ু পরিবর্তনের জন্য স্বপরিবারে ভারতে যান। রেখে যান বিশাল কর্মযজ্ঞ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হলে নানাবিধ জটিলতার কারনে ঠাকুর আর তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে ফিরে আসেননি।
তথ্যমতে, শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মস্থান, তাঁর বাসগৃহ, মাতৃমন্দির, স্মৃতিমন্দির (শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মাতৃদেবীর সাধনমন্দির), নিভৃত নিবাস (শ্রীশ্রীঠাকুরের সাধনগৃহ) ফিলানথ্রপী অফিসসহ কিছু স্মৃতি বিজড়িত ভবন ও স্থান হিমাইতপুর সৎসঙ্গকে প্রত্যাপর্ণের জন্য ১৯৬১ সাল থেকে সৎসঙ্গ হিমাইতপুর, পাবনা-এর পক্ষ থেকে সরকার প্রধানগণের নিকট আবেদন করা হয়। বহুবার আবেদন নিবেদন করার পর শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মস্থানসহ কিছু স্মৃতি বিজড়িত ভবন ও স্থান হিমাইতপুর সৎসঙ্গকে প্রদানের জন্য পাবনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুপারিশ প্রেরণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সৎসঙ্গ আশ্রমের সভাপতি ড. রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতসহ সারা বিশ্বময় প্রায় কয়েক কোটি ভক্ত রয়েছে। যারা আজও প্রদ্ধা হিমাইতপুরের পূণ্যভুমির উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করে থাকেন। প্রতিবছর দুটি উৎসব হয় যেখানে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ভক্তরা পূণ্যভুমিতে পূণ্যলাভের আশায় আগমন করেন।
সৎসঙ্গর সম্পাদক রঞ্জন সাহা বলেন, মানসিক হাসপাতালের অভ্যন্তরে যেসব স্মৃতি রয়েছে তা মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। এইসব স্থাপনা মানসিক হাসপাতালের কার্যক্রমকে কখনো কোন বাঁধার সৃষ্টি করেনি। তিনি বলেন, সৎসঙ্গ কর্তৃপক্ষ বহুবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার প্রধানের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যাতে করে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-এর ফেলে যাওয়া ভবনগুলোকে প্রতœতাত্বিক বিভাগের আওতায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় নি।
একাধিক ভক্তের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ষড়যন্ত্র করে ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলো কৌশলে ভেঙ্গে ফেলে স্মৃতি চিহ্ন মুছে দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। যা আমাদের ঠাকুর ভক্তকূলে আঘাত হেনেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সরকারের কাছে জোড়ালো আহবান জানাচ্ছি অবিলম্বে ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলো পুরাকীতি বিভাগের আওতায় এনে সংরক্ষণের প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।