চলমান করোনা মহামারী তা-বের মধ্যেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। বিগত কয়েক দিন ধরেই রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে রাজধানীর সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালের কোথাও রোগীর ঠাঁই নেই। হাসপাতালের ওয়ার্ড, কেবিন এমনকি সরকারি হাসপাতালের বারান্দাও এখন রোগীতে বোঝাই। তারপরও প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে রোগীরা ভর্তি হতে এসে সিট পাচ্ছে না। আর চোখের পড়ার মতো চিৎিসার আশায় নতুন রোগীর স্বজনদের উৎকণ্ঠা আহাজারি। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ইতিমধ্যে রেকর্ড ভেঙেছে। বিরাজমান পরিস্থিতিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে বলে শঙ্কিত। আর চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাই মাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ বছর আর কোনো মাসে এতো রোগী পাওয়া যায়নি। শুধু জুলাই মাসেই এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮শ’। তার মধ্যে ঢাকারই ৯৯ শতাংশ।
সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩শ’ রোগী ভর্তি রয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে এবং ছাড়া পেয়েছে ৮০১ জন। তার আগে চলতি বছরের জুন মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ২৭১ জনের, যা বছরে মোট শনাক্তের ৬৯ শতাংশ। গত বছরের জুন মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ২০ জনের। ওই হিসাবে গত বছরের জুন মাসের তুলনায় এবারের জুন মাসে রোগী বেড়েছে সাড়ে ১৩ গুণ। ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪০৫ জন। বিগত ২০১৯ সালেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ প্রাণ হারায়। যদিও সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে ওই বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বারান্দা থেকে শুরু করে সর্বত্রই রোগী। কোথাও সিট খালি নেই। হাসপাতালে প্রতিদিন যতো রোগী আসে তার বেশির ভাগই করোনা ও ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে আসছে। রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোরও একই অবস্থা। ডেঙ্গু আর করোনা রোগীর চাপে হাসপাতালের কোথাও সিট কিংবা কেবিন খালি নেই।
এদিকে ডেঙ্গুর বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ জানান, চলমান অবস্থায় মনে হচ্ছে পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকে যাচ্ছি। করোনার মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশের সক্ষমতা আছে। সিটি করপোরেশন যদি আরেকটু মনোযোগী হয় এবং নগরবাসীও সচেতন হন তবে এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। প্রতি বছর এমন সময়ে যেহেতু ডেঙ্গু দেখা দেয় তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত সচেতন থাকা। এ সময়ের আগেই তার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া। তবেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক প্রফেসর ড. আবুল কালাম আযাদ জানান, এখন প্রতিদিন যতো রোগী আসে তার প্রায় ৯০ ভাগই করোনা এবং ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে আসে। তার মধ্যে সব বয়সের মানুষই রয়েছে।