ভবিষ্যত সুখ ও একটু সাচ্ছন্দের আশায় অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালী যাবার সময় লিবিয়ার ভুমধ্যসাগরে হিটস্টকে আরও পাঁচ যুবকের প্রাণ গেলো মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শংকরদী গ্রামের আজিজুল সিকদারের ছেলে সাগর সিকদার, হোসেনপুর গ্রামের আজিজ শেখের ছেলে জিন্নাত শেখ, উল্লাবাড়ি গ্রামের বিজেন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সাধন মল্লিক ও পার্শ্ববর্তী মুকসুদপুর উপজেলার তপারকান্দি গ্রামের ফজলু মুন্সীর ছেলে সজিব মুন্সী। একই বোর্টে থাকা ভাগ্যক্রমে বেচে যাওয়া হৃদয় শেখ মোবাইল ফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত পাঁচ জনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়- ভবিষ্যত নিশ্চিত সুখের অবলম্বন আদরের সন্তানকে হারিয়ে পরিবারজুড়ে চলছে শুধুই শোকের মাতম। অন্যদিকে সন্তানের সাথে সাথে ৭-১০ লক্ষ টাকা গচ্চা যাবার বেদনাও একেবারেই কম নয়। শোকাহত পরিবারের সান্তনা দিতে পাড়া প্রতিবেশরাও ভিড় করছে এসব বাড়ীতে। এই ঘটনায় দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
শোকাহত পরিবার ঘনিষ্ট স্বজনর জানায়, তিন মাস আগে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে মাদারীপুরের রাজৈর ও মুকসুদপুরের অনেকেই লিবিয়ায় আটকা পড়ে। গত ১৯ জুলাই লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দালালরা ইতালীর উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে বাধ্য করে। পরে মাঝপথে নষ্ট হয়ে যায় ট্রলারটি। এতে প্রচন্ড রোদে হিটস্টকে প্রাণ হারায় ওই পাঁচজন। ইতোপুর্বে একই ঘটনায় ঘোষালকান্দি গ্রামের হৃদয় কাজীরও হৃদয় বিদারক মৃত্যু খবর আসে।
রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট ঘোষালকান্দি গ্রামের অদুত মিয়ার ছেলে একই বোর্টে থাকা ভাগ্যক্রমে বেচে যাওয়া হৃদয় মিয়া পরিবারদের ফোন করে জানায়, প্রথমে হৃদয় কাজী আমার কোলেই পানি পানি করতে করতে মারা গেছে আর সাগর সিকদার, জিন্নাত শেখ, সজিব মুন্সী, সাধন মল্লিক এরা নিখোঁজ থাকার পর খোজখবর নিয়ে তাদেরও মৃত্যুর নিশ্চিত খবর পাই।
ভুমধ্যসাগরে মৃত্যু মুকসুদপুর উপজেলার তপারকান্দি গ্রামের জিন্নাত শেখের মা হালিমা বেগম কান্নাজরিত কন্ঠে বলেন, উপজেলা সত্যবর্তী গ্রামের দালাল রেজাউল শেখ ও শহিদুল মোল্লা আমার ছেলেকে ইতালী পৌছে দিবে বলে কয়েক দফায় ১১লক্ষ টাকা নিয়েছে। তার পর আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। আমি দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেন কারো মায়ের বুক খালি না হয়।
নিহত সজিব মুন্সীর মা সহানা বেগম জানান, আমার ছেলে সজিবের সাথে সর্বশেষ আমার সাথে ১৮ জুলাই ফোনে কথা হয়েছে। তখন আমার ছেলে আমাকে বলছিল মা আমার জন্য দোয়া করো আমাকে এখন আমাকে গেম ঘরে নিবে। এর পর আর কথা হয়নি। কয়েক দফায় সত্যবর্তী গ্রামের দালাল শাহিন সরদার আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরও আমার ছেলে মৃত্যুর খবর শুনতে হলো।
ভুক্তভোগি ও এলাকাবাসী জানায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের মানবপাচারচক্রের সদস্য ইলিয়াছ ফকির, টুটুল ফকির এবং রাজৈর উপজেলার সত্যবর্তী গ্রামের শাহিন সরদার, রেজাউল শেখ, শহিদুল মোল্লা, ইলিয়াছ শেখ ও শ্রীরামপুর লিটন মোল্লা ইতালী যাবার স্বপ্ন দেখিয়ে নিহতের পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফা আদায় করে সাড়ে ৭ লাখ থেকে ১১লাখ টাকা পর্যন্ত। ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করে দিলেও শেষরক্ষা হয়নি এসব পরিবারের। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। হৃদয়ের সাথে ওই ঘটনায় রাজৈর উপজেলার আহত১৫/ ১৭ যুবক গুরুতর অবস্থায় তিউনেশিয়ার স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন অসহায় পরিবারগুলো।
রাজৈর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।