দেশের উত্তর অঞ্চলের এবং বাংলাদেশের একমাত্র কয়লা খনি বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কর্মকর্তাদের ও শ্রমিক মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে নানা রকম মত বিরোধ থাকায় শ্রমিকরা কর্মকর্তাদের কাছে হয়রানী হচ্ছেন। দেশী শ্রমিকরা খনি থেকে বেরিয়ে আসায় বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা উৎপাদন গত ২ শে জুলাই থেকে বন্ধ হয়েছে। গত ২৫ জুলাই রোববার সকাল থেকে শ্রমিকদের খনিতে কাজে যোগ দিতে দেয়নি সিএমসি’র চীনা শ্রমিকরা। দেশী শ্রমিকরা সারাদিন খনির উপরে অবস্থান করে। অবশেষে বিকাল ৪ ঘটিকায় একসাথে ৫ শত শ্রমিক বেরিয়ে আসে। এতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা উৎপাদন পুরোদমে বন্ধ হয়ে যায়।
খনি শ্রমিক মোঃ রবিউল ইসলাম সংবাদিক কে জানান, খনি থেকে শ্রমিকদের বিভিন্ন অজুহাতে দীর্ঘদিন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। উৎপাদন বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেয় না ঐ চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খনি শ্রমিকরা দীর্ঘ ৯ মাস ধরে খনির ভিতরে অবস্থান করে আসছে। এতে অনেকে কোনরকম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না, আবার অনেকে বেতনও পাচ্ছে না ঠিকমত। ২০২০ ইং সালে খনিতে ন্যায আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকের বিরুদ্ধে খনি কর্তৃপক্ষ মামলা দিয়ে হয়রানি ও করছেন। কিন্তু এর পরও খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসির এক্সএমসি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী শ্রমিকদের আবারও হোম কোয়ারেন্টানে থাকার নির্দেশ দেন। এতে খনি শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ৫ শত শ্রমিক খনির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে। আরও অভিযোগ করে খনি নেতা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, শ্রমিকরা বাহিরে না আসতে পারলেও, খনির কর্মকর্তারা, চীনা নাগরিকরা প্রতিনিয়ত খনির বাইরে যাতায়াত করেছে। এর ফলে খনির ২৬ জন শ্রমিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মোঃ কামরুজ্জামান খান সংবাদিককে জানান, কাজ ছেড়ে যাওয়া শ্রমিকরা সবাই চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক। খনির ১৩১০ ফেইজ হতে কয়লা উত্তোলনের জন্য গত ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট চীনা কোম্পানি সিএমসির এক্সএমসি সাথে ৪ বছরের চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি মোতাবেক চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। চুক্তির মেয়াদ চলতি বছর ১০ আগস্ট শেষ হবে। কিন্তু ওই ফেইজে এখনও দেড় লাখ মেঃ টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। নতুন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকবে। তিনি আরও বলেন, নতুন চুক্তি হলে ১৩১০ ফেইজ থেকে কয়লা উত্তোলনের পর নতুন ফেইজ ১৩০৬ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু করা হবে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তোলিত কয়লা দিয়ে উৎপাদন হচ্ছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ। দীর্ঘদিন কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকলে হুমকীর মুখে পড়তে পারে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিক নেতা মোঃ রবিউল ইসলাম রবি জানান, খনি কর্তৃপক্ষ সকল শ্রমিকদেরকে খনিতে ফিরে নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে পূর্বের ন্যায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবেন অপরদিকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু থাকবে। এজন্য খনি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন সকল শ্রমিককে ফিরে নিয়ে কাজে যোগদান করাতে।