দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের জন্য অধিগৃহিত বাড়ি-ঘর ও গাছপালার ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ ছ‘আনি পাড়ার ৬ রাখাইন পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আজ দুপুরে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন তার কার্যালয়ে এসব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রায় ৯১ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
এ সময় পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিএম সরফরাজ, জেলা ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা আল এমরানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ ৬ রাখাইন পরিবারের মধ্যে মোট ৯১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইয়াংসি মাতুববর পেয়েছেন ১২.৪১ লাখ টাকা, চিংদামো রাখাইন ১৯.৯২ লাখ টাকা, মংমাচিন রাখাইন ২৬.৪৫ লাখ টাকা, লাবঅং মাতুববর ৭.৬৫ লাখ, মংচো রাখাইন ৬.৫১ লাখ ও লাচিংমো পেয়েছেন ১৮.৪৫ লাখ টাকা।
ক্ষতিপূরনের টাকা গ্রহন করে ছ‘আনি পাড়ার মাতুব্বর চিংদামো রাখাইন বলেন, তারা তাদের বসতবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন এবং তারা কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের রাখাইন অধ্যুষিত ছোটবালিয়াতলী এলাকায় পুর্নবাসন হতে চান যাতে তারা নিজেদের কৃষ্টি ও ধর্মীয় রীতি-নীতি ষুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানান, পায়রা বন্দরের অনুকূলে ছ‘আনি পাড়ার জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে এবং পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব রাখাইন পরিবারের যথাযথ পূনর্বাসন করবে।
আপাতত এ ৬ টি পরিবারকে কলাপাড়া উপজেলা শহরের ভাড়া বাড়িতে রাখা হবে এবং পরবর্থীতে তাদের চাহিদামাফিক পূনর্বাসন সাইট নির্মিাণ শেষে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, জেলার কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে ছ‘আনিপাড়া গ্রামটির গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৭৮৪ সালে। তখন কয়েকশক পরিবারের বাস ছিল এখানে। কালের বিবর্তনে এখন মাত্র ৬ টি পরিবার অবশিষ্ট আছে। ১৮ জন পুরুষ, ১০ জন নারী আর ২ জন শিশুসহ মোট বাসিন্দা ৩০ জন। পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কাজের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন গোটা গ্রামটি অর্থাৎ সাড়ে ৫ একর জমি অধিগ্রহন করে। গ্রামের রয়েছে একটি রাখাইন মন্দির আর এ মন্দিরের সেবাইত হিসেবে রয়েছে এ ৬ পরিবারের লোকজন। রাখাইন রীতি অনুযায়ী এসব সেবাইতরা জমির মালিক নয়। এরা পাবেন শুধুমাত্র জমির ওপর স্থাপিত অস্থাবর সম্পত্তি ঘর-বাড়ি, গাছপালা। জেলা প্রশাসন এ ৬ পরিবারের অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য বাবদ ৯১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পরিমোধ করলো।
১৯৪৮ সালে পটুয়াখালীতে ১৪৪টি ও বরগুনায় ৯৩টি রাখাইনপাড়া ছিল, বর্তমানে সেখানে যথাক্রমে ২৬টি ও ১৩টি পাড়া টিকে আছে।
পায়রা বন্দরের রাখাইনদের জমি অধিগ্রহনের প্রতিবাদে সেখানকার ৫০টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করে আসছিল। অবশেষে নবাগত জেলা প্রশাসক এবং এলএও শাখা কর্মকর্তার ঐকান্তিক প্রচেস্টায় ক্ষতিপুরনের টাকা পরিশোধের সূচনা করা হলো।