বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গা আশ্রয়ের চার বছর অতিবাহিত হয়েছে গত বুধবার (২৫ আগস্ট)। রোহিঙ্গারা শীঘ্রই দেশে ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। স্হানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গারা এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের রাজনৈতিক ও মানবিক ব্যর্থতায় উদ্বিগ্ন।
চার বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রিত রোহিঙ্গারা প্রশাসনের কড়াকড়িতে বড় ধরনের কোন সমাবেশ ও কর্মসূচি পালন করতে পারে নি। বুধবার সকাল থেকে নেহায়েত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এনজিও কর্মীসহ বহিরাগত তেমন কাউকে ক্যাম্পে ঢুকতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে রোহিঙ্গারা বিচ্ছিন্নভাবে ক্যাম্পের অলিগলিতে, মসজিদ, মাদ্রাসায় ক্ষুদ্র পরিসরে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল করার খবর পাওয়া গেছে। গ্লোবাল রোহিঙ্গা ফোরামের ক্যাম্প সমম্বয়ক মাষ্টার নুরুল আলম বলেন, প্রশাসনের নির্দেশ থাকায় আমাদের পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচি পালন করা হয়নি। তিনি বলেন,রোহিঙ্গা ইস্যুর সম্মানজনক সমাধানে আন্তর্জাতিক মহল রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ। এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে উদ্বিগ্ন।
রোহিঙ্গা রিফিউজি কাউন্সিলের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশ কঠিন দুর্যোগ মূহুর্তে আমাদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি আমাদের আশ্রয় না দিত হয়ত পৃথিবী থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব সংকটে পড়তো। তাই আমরা বাংলাদেশের আইন মেনে থাকতে বাধ্য।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এ- হিউম্যানের সভাপতি মুহিবুল্লাহ বলেন, কার্যতঃ বর্তমানে মিয়ানমারে কোন সরকার নেই। সামরিক জান্তা গত ফেব্রুয়ারী থেকে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে আছে। মিয়ানমারে গঠিত হয়েছে ন্যাশনাল ইউনিটি গর্ভনমেন্ট বা এনইউজি। সর্বদলীয় এ সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের চুক্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে এমইউজি সরকার নাকি সামরিক জান্তা মিয়ানমার পরিচালনা করবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। যদি সেপ্টেম্বরে এনইউজি সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীন হয় তাহলে অক্টোবরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে যাওয়া শুরু করবে। রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক জান্তার পরিচালিত গণহত্যার প্রতি এনইউজি সরকার নিঃশর্তে সমর্থন জানিয়েছেন এবং রোহিঙ্গাদের নায্য দাবীর প্রতিও সমর্থন দিয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুর সম্মানজনক সমাধানে আন্তর্জাতিক মহল রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ বলেও তিনি জানান।
এদিকে রোহিঙ্গা আশ্রয়ের চার বছর অতিবাহিত হলেও তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহল চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে বলে জানান উখিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক তৌহিদুল আলম তহিদ। তিনি বলেন, প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানসহ তাদের নুন্যতম মৌলিক চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ যে মানবিক দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের লজ্জা পাওয়া উচিত। তিনি দ্রুত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দাবী করেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ও উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে সারাদেশে যেভাবে মাদকের বিস্তৃতি ঘটছে তা চরম ঝুঁকিপূর্ণ। তারা অপহরণ, গুম,খুন,চাঁদাবাজি, স্বর্ণ, মুদ্রা, মানব পাচারের মত জঘন্য সব অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট।
তিন বলেন, সবচেয়ে উৎকন্ঠার বিষয় রোহিঙ্গারা নানা অবৈধ কারবারের সঙ্গে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তারা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নিচ্ছে, বিভিন্ন স্হানে বিয়ে শাদীর মাধ্যমে বাংলাদেশীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, ১৯৭৮,১৯৯০- ৯১,২০১০,২০১২,২০১৬ ও সর্বশেষ ২০১৭ সালে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইতোমধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে, আত্মীয়তা গড়ে তুলছে।
গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন,ওরা আমাদের সমাজে মিশে গিয়ে আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি আয়ত্ত করছে। সবচেয়ে উদ্বেগের, ওদের একটি অংশ সন্ত্রাসী কর্মকা- জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে কোন কারণে প্রত্যাবাসন আরও বিলম্বিত হলে তাদেরকে নির্দিষ্ট কোন এলাকায় স্থানান্তর করে সীমাবদ্ধতার আওতায় রাখার ব্যবস্হা কথা বলেন তিনি।