দেওয়ার কথা ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো জৈব সার। কিন্তু দেয়া হল ছাইভষ্ম,বালিমাটি মিশ্রিত নিম্নমানের কথিত ভার্মি কম্পোস্ট সার। এ জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিস ৩৫ হাজার কেজি ভেজাল কেঁচো সার বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছে।
কৃষকদের সাথে এ জঘন্য জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়েছে 'সুশীলন' নামের একটি এনজিও। যদিও ইতোমধ্যে তিনটি ক্যাম্পের ৯ হাজার রোহিঙ্গা উপকারভোগীদের মাঝে এধরনের ছাইভষ্ম বিতরন সম্পন্ন করেছে এনজিওটি। উখিয়ার স্হানীয় ৭ হাজার কৃষকের মাঝে বরাদ্দকৃত আরো ৩৫ হাজার কেজি কেঁচো সার বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে উখিয়া কৃষি অফিস। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠন 'হেলভেটার্স ইন্টারন্যাশনাল' এর অনুদানে এসব জৈবসার বিনামূল্যে বিতরনের কাজ করছে এনজিও সুশীলন।
উখিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, কোন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই এনজিওগুলো খুবই নিম্নমানের ও পরিবেশের ক্ষতিকর বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিতরণ করছে। সরকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকের নিকট থেকে এসব পণ্য সামগ্রী রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরনের পূর্বে মান যাচাইয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু এনজিও গুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অগোচরে বিদেশী অনুদানের অর্থে যাচ্ছেতাই করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক এনজিওগুলোর নিয়ন্ত্রণহীন কর্মকা-ে স্হানীয় পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, দেখা গেছে ছাইভষ্ম, বালিমাটির মিশ্রণ করে ৫ কেজির প্যাকেটজাত করা কেঁচো সার রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এসব ভেজাল ও নিম্নমানের কথিত সারের রংয়ের উজ্জ্বলতা আনতে মিশ্রন ঘটানো হয়েছে ময়লাযুক্ত মাটি ও ধানের তুষের ছাই।এসব ভেজাল ছাইভষ্ম দিয়ে এখানকার মাটির উর্বরতা নষ্ট করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে।
এনজিও সুশীলনের 'এনহ্যাচমেন্ট ফর সোস্যাল লাইভলিহুড' প্রকল্পের সমন্বয়কারী আশরাফুল আলম বলেন, বিদেশি একটি এনজিও'র অর্থায়নে ৯ হাজার রোহিঙ্গা ও ৭ হাজার স্হানীয় কৃষক এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। গত সপ্তাহে ৯ হাজার রোহিঙ্গাদের মাঝে আলোচিত কেঁচো সার বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। সারের গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ উঠায় বিতরণকৃত সারগুলো ব্যবহার না করতে উপকারভোগী রোহিঙ্গাদের নিষেধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মনোনীত স্হানীয় ৭ হাজার কৃষকের মাঝে এ সার বিতরণ স্থগিত করা হয়েছে। আমাদের তালিকাভুক্ত ভেন্ডর উখিয়া সদরের এসকে অটো রাইস মিল তারা কোন জায়গা থেকে এ সার সংগ্রহ করেছে তা জানাতে বলা হয়েছে। এসব পণ্য বিতরণের পূর্বে মান যাচাইয়ের কোন ব্যবস্হা তারা নেয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, স্হানীয় বাজারে প্রতি কেজি কেঁচো সার ১৫- ১৭ টাকায় বিক্রি হলেও এনজিওটি ভে-রের সঙ্গে আঁতাত করে প্রতি কেজি ২৫ টাকা হারে ক্রয় করছে। এতে ঐ এনজিওর সংশ্লিষ্টদের সাথে ভে-রের আর্থিক অনৈতিক লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে। অথচ এসব আর্থিক অনিয়মের কথা সুশীলনের ঐ কর্মকর্তা অস্বীকার করেন।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট এর নামে বিতরণকৃত ছাই মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দেখা গেছে ওখানে এক শতাংশও ভার্মি কম্পোস্টের উপস্থিতি নেই। এগুলো বিতরণের পূর্বে এনজিওটি আমাদের অবহিত করেনি। কারা উপকারভোগী তাও জানি না।
তিনি বলেন, এসব ভেজাল কৃষিজ সারে গাছের চারা তো উঠবেই না, বরং ভূমির মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হউক ওরা রোহিঙ্গা, তাদের আমরা মানবিক আশ্রয় দিয়েছি। তাই বলে ওদের সাথে অমানবিক আচরণ কোনভাবে কাম্য নয়।
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সুশীলন নামক এনজিওকে অবিলম্বে বিতরণকৃত ভার্মি কম্পোস্ট সারের মানদ- ও ক্রয় সংক্রান্ত প্রমাণ নিয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে এসব কেঁচো সার সংগ্রহ ও বিতরণ করা হয়েছে তার অনেক তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে তিনি জানান।