করোনার মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে যাচ্ছে এমন খবরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিক্রির দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আর ইউনিফর্ম বানানোর জন্য শিক্ষা নগরী খ্যাত রাজশাহীর টেইলার্সের দোকানগুলোতে কর্মব্যস্ততা এমন পরিমাণে বেড়েছে যেন দম ফেলারও সময় পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দোকানগুলোতে তাকালে মনে হবে যেন ঈদের আমেজ লেগেছে। গত দুই দিন রাজশাহী মহানগরীতে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
গার্মেন্টেসের কর্মরত দর্জিরা জানাচ্ছেন, এমন পরিস্থিতিতে স্কুল খোলার খবরে ইউনিফর্ম ও টেইলার্সের দোকানে উপচে পড়া ভিড় থাকাটাই স্বাভাবিক। ঈদের সময় যেমন ভিড় থাকে এখন ঠিক ওই রকম। গত কয়েকদিন থেকে প্রচুর অর্ডার আসছে ও রেডিমেট ড্রেস বিক্রি বেড়েছে অনেক বেশি।
রাজশাহীর চাঁদনী চক সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিফর্মের দোকানগুলোতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড়ে পা রাখা দায়। সেখানকার ফয়সল গার্মেন্টের ম্যনেজার আব্দুল মালেক জানান, স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষনার পর থেকেই প্রতিদিন সবমিলে প্রায় হাজার খানেক রেডিমেট ইউনিফর্ম বিক্রি হচ্ছে, নতুনভাবে অর্ডারও পাচ্ছি। দীর্ঘদিন পর মনে হচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আগে এমন ছিলো না।
পাশেই তাদের জুতার দোকান। সেখানেও রয়েছে উপচে পড়া ভিড়। এক ছোট শিক্ষার্থীর পায়ে জুতা পরিয়ে দিচ্ছিলেন কর্মচারি জুয়েল। তিনি জানান, দেখছেন না, এখন কথা বলার সময় নেই। দেখছেন তো অনেক সিরিয়াল।
আরেক কর্মচারি আকাশ জানান, স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষনার সাথে সাথে অভিভাবকরা আসতে শুরু করেছে। আমাদের মোকামেও কর্মরত দর্জিরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় কয়েকজন অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ দেড় বছরে অনেকের ইউফর্মগুলোত দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কমে গেছে। কারো কারো ইউনিফর্ম ঘর মোছার ন্যাকড়া বা ফার্নিচার মোছার কাপড়ে পরিণত হয়েছে। আবার কিছু ইউনিফর্ম ইঁদুরে কেটে নষ্ট করে ফেলেছে।
এ সময় দুই ছেলের জন্য রেডিমেট স্কুল ড্রেস কিনতে আসা সিরিয়ালে অপেক্ষারত শিক্ষক আতিকুর রহমান জানান, বাচ্চাদের যে ড্রেস ছিলো সেগুলো গত দেড় বছরে ছোট হয়ে গেছে। তাই নতুনভাবে তাদের নিয়ে ড্রেস কিনতে এসেছি।
রাজশাহী পলেটেকনিক ইউনিস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফয়সাল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সময় পর কলেজে যাবো। আগেও যে ড্রেস ছিলো তা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ড্রেস কিনতে এসেছি। এখানে রেডিমেট ড্রেস পাওয়া যায়। পাশেই শিক্ষার্থীদের জুতার দোকান সেখানেও উপচে পড়া ভিড়। রোমেনা আফরোজ নামের এক অভিভাবক জানান, বাচ্চার জন্য ড্রেস কেনা শেষ, এখন জুতা নিচ্ছি। এমন ভিড় এর আগে কখনো দেখিনি। মনে হচ্ছে ঈদের মার্কেটে এসেছি।
মিজানুর রহমান নামের আরেকজন অভিভাবক জানান, প্রায় ২০ মিনিট আগে এসেছি এখন সিরিয়ালে আছি। দেখছেন তো কি অবস্থা। বাচ্চার জুতা কিনতে হবে। স্কুলের জন্য যে জুতা ছিলো দীর্ঘ সময়ে তা কিছুটা ছোট হয়ে গেছে। মেহেদী হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী জানান, গতকাল স্কুলের ড্রেস নিয়েছি। কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে জুতা নিতে পারিনি, তাই আজ জুতা নিতে এসেছি। স্কুলে নতুন জুতা পড়ে যাবো। পাশেই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য মায়ের দোয়া গার্মেন্টসহ আরো কিছু গার্মেন্টেসে উপচে পড়া ভিড় লক্ষা করা গেছে।
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী দেওয়ান জানায়, অনেক দিন পরে স্কুল যাব, ভেবেই মজা লাগছে। দীর্ঘদিন পর সব বন্ধুর সাথে দেখা হবে। আনন্দ করবো আমরা। তাই প্রস্তুতি হিসেবে এখন জ্যামিতি বক্স ও স্কেল কিনছি। এর পর কিছু বই ও গাইড কিনবো।
সমবায় সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে বিক্রি বেড়েছে। ছেলে-মেয়েরা নিজে ও তাদের অভিবাবকদের সাথে কাগজ, কলম, প্যানসিল, জ্যামিতি বক্সসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন। অনেক দিন পরে ব্যবসা জমে উঠছে। আশাকরছি, কষ্টের দিন খুব শিঘ্রই শেষ হবে।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সকল কাজ শেষ করার লক্ষ্যে একটানা কাজ করছেন তারা।