নওগাঁ জেলায় অবস্থিত এশিয়ার প্রাচীন ও বৃহত্তম সমবায় সমিতি নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি: এর অস্থিত্ব প্রায় বিলীনের পথে। গাঁজা মহলের সেই স্বর্নালী দিনগুলি এখন শুধুই যেন এক স্মৃতি। ঠিক মতো দেখভাল করার অভাবে পড়ে রয়েছে সমিতির কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সুযোগ সন্ধানীরা সেই সম্পদের অনেকটাই গ্রাস করে ফেলেছে। মিলবেনা আগের সেই হিসাবের খাতা। স্বেচ্ছাচারিতা, ষড়যন্ত্র এবং ব্যক্তি স্বার্থান্বেষীদের দ্বারা গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির গৌরবময় দিনগুলি যেন ধাবিত হচ্ছে ইতিহাসের পাতার দিকে। প্রাচীনকালে ভারত বর্ষে বন্য পরিবেশে গাঁজার উৎপাদন হতো। বাংলায় কোন সময় গাঁজার চাষ শুরু হয় তা জানা না গেলেও যশোর কালেক্টরের ১৮০৯ সালের এক প্রতিবেদনে পাওয়া যায় সে সময় যশোরের রামচন্দ্রপুর ও তারগুনিয়ায় ব্যাপকভাবে গাঁজার চাষ হতো। ওই সময় যশোরের পতিত জমিতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মন গাঁজা উৎপাদন হতো বলে জানা যায়। ১৮৭৩ সালের ৩০ এপ্রিলের কলিকাতা গেজেটের এক প্রতিবেদনে জানা যায় এই গাঁজা উৎপাদনের সঠিক পরিসংখান তৈরীর জন্য বৃটিশ সরকার হেমচন্দ্র সরকারকে ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে নিয়োগ দেন। এর পর নীল চাষের বিকল্প হিসাবে (অন্যমতে গাঁজা চাষের বিকল্প হিসাবে নীলচাষ শুরু করা হয়) তৎকালীন বৃটিশ সরকার সারা বাংলায় পরীক্ষা মূলক গাঁজার চাষ শুরু করে। এ সময় দেখা যায় নওগাঁর মুরাদপুরে সর্বোৎকৃষ্ট গাঁজা উৎপাদন হয়। ১৮৭৭ সালে নওগাঁকে মহকুমায় রূপান্তরিত করা হয়। কৃষিজাত বিভিন্ন ফসল থেকে গাঁজা উৎপাদন অধিক লাভজনক হওয়ায় গাঁজার চাষ নওগাঁ মহকুমার মহাদেবপুর, বদলগাছী ও আদমদীঘি থানার মধ্যে ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করে।তখন ওই এলাকা গুলোকে গাঁজামহল বলা হতো। তখন মহাদেবপুর থানা পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় এবং আদমদীঘি থানা বগুড়া জেলার অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীতে মহাদেবপুর থানা নওগাঁর অন্তর্গত থাকলেও আদমদীঘি থানা বগুড়ার অধীনে চলে যায়।একমাত্র গাঁজা মহলের শাসন কার্যের সুবিধার্থে ওই দুটি থানাকে নওগাঁ মহকুমায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৭৬ সালে গাঁজা উৎপাদনের জন্য লাইসেন্স প্রথার প্রবর্তন করা হয়। লাইসেন্সে উল্লিখিত জমি ছাড়া গাঁজা উৎপাদন করতে পারতোনা কোন কৃষক। এ নিয়ম ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। ১৯১৭ সালে গাঁজা কালটিভেটরস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি: রেজিষ্ট্রী হওয়ার পর নওগাঁর কীর্ত্তিপুর, মুরাদপুর ও গোবিন্দপুর এই তিনটি সার্কেলে (২০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত) গাঁজা উৎপাদনের স্থান নির্ধারিত হয়। ১৯০৭ সালে নওগাঁ গাঁজা কালটিভেটরস সমিতি লি: নামে একটি বৃহত্তম ও প্রাচীনতম সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। সমিতির জম্মলগ্নে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৮ জন ছিল। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি নামকরণ করা হয়। সমিতি রেজিষ্ট্রী করার সময় নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী এলাকাকে কীর্ত্তিপুর, গোবিন্দপুর ও মুরাদপুরকে সার্কেল নির্ধারন করা হয় । জানা যায়, তৎকালীন মন্ত্রী সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী সি,আই,ই ১৯১৯ সালে নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির ভবনের উদ্বোধন করেন। উৎপাদিত গাঁজা এলাকা হিসাবে নিজ নিজ নামে গুদামজাত করলেও কৃষক ওই গাঁজা সমবায় সমিতির মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত গাঁজা বিক্রয় করতো। দেশ বিভাগের পুর্বে এশিয়া মহাদেশে এত বড় সমবায় প্রতিষ্ঠান ছিলনা। সে সময় বাংলা, আসাম, উড়িষ্যা, উত্তর প্রদেশ ও সুদুর চেন্নাইয়ে গাঁজা রপ্তানী করা হতো। গাঁজা তখন ইংল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হতো। ১৯১৮ সাল হতে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পুর্ব পর্যন্ত প্রতি বৎসরে গড়ে প্রায় ৫৫ হাজার মন গাঁজা উৎপন্ন করা হতো। সরকারের রাজস্ব আয় হতো প্রায় ৬৬ লাখ টাকা। শুধুমাত্র গাঁজা উৎপাদন বৃহৎ সমবায় সমিতির জন্য ১৯১৬ সালে সমবায় বিভাগের বিভাগীয় দপ্তর রাজশাহীর পরিবর্তে নওগাঁয় স্থাপিত হয়। খান বাহাদুর আতাউর রহমান জয়েন্ট রেজিষ্টার হিসাবে প্রথম দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এর পর খান বাহাদুর কবির উদ্দিন আহম্মদ জয়েন্ট রেজিষ্ট্রার হয়ে আসেন। তার সময় গাঁজা অফিসের প্রধান বিল্ডিং এর উত্তর পুর্ব দিকে প্রায় আড়াই একর জমির উপর ১৯২৯ সালে সমবায় বিভাগের বিভাগীয় অফিস এবং তার দোতলা বাসভবন নির্মান করা হয়। এই গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির প্রধান অফিস বিল্ডিংসহ সমিতির নিজস্ব স্বয়ঃসম্পত্তির মধ্যে ৪০ একর জমি, ৪০টি ভবন. ৭টি দীঘি, ১টি লেক, ১১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ, ১টি মন্দির, রাস্তা, ৪টি গোডাউন, বিভিন্ন ছোট ছোট ব্রীজ, ১টি সরাইখানা, কোÑঅপরেটিভ ক্লাব, লাইব্রেরী ১টি, মিটিং গ্রাউন্ড (যা পরবর্তীতে টেনিস গ্রাউন্ড), হাসপাতাল ৩টি, দাতব্য চিকিৎসালয়, ১টি পশু চিকিৎসালয়, ১টি হিমাগার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ সমিতির বহু স্থাবর সম্পত্তি নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই গাঁজা সমিতির প্রধান অফিস ভবন কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ের আদলে তৈরী করা হয়। সুদুর নেপাল থেকে শালকাঠ এনে অফিস ভবনটি নির্মান করা হয়েছিল। তাছাড়া এক্সাইজ সুপারিনটেনডেন্টের জন্য দোতলা বাসভবন ও ডেপুটি চেয়ারম্যানের জন্য দোতলা ভবন তখনকার দিনে নওগাঁ শহরের শ্রীবৃদ্ধি করে। এছাড়াও জানা যায় ভারতের আসামে এবং কলকাতায় ও ঢাকায় নওগাঁ গাঁজা সমবায় সমিতির সম্পত্তি আছে। দেশ বিভাগের সময়কালীন কলকাতাস্থ বেঙ্গল সমবায় ব্যাংকে সমিতির গচ্ছিত ৫ (পাঁচ) লক্ষাধিক টাকা অনাদায়ী রয়ে গেছে এখনো। গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির অবদান অপরিসীম। একমাত্র গাঁজা চাষের জন্যই নওগাঁ শহরের এত দ্রুত উন্নতি সাধন করা সম্ভব হয়েছিল। সমিতির কর্মচারিদের বসবাসের জন্য ব্যারাক নির্মান করা হয়েছিল। ৪০টি ছোট ছোট বাসভবন গুলো ছিল দর্শনীয়। সারিবদ্ধ বাসভবনের সামনে কালো পাথরের সুরকি বিছানো রাস্তা ছিল। ওই এলাকাকে সে সময় টাউন শীপ বলে মনে হতো। জনসেবায় যেভাবে গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি: এগিয়ে ছিল ১৯০৭ সালে নওগাঁ ছোট যমুনা নদীর উপর লিটন সেতু নির্মানের ব্যাপারে গাঁজা সমিতি বেশ কিছু অর্থ দান করে। ১৯৪৩ সালে তৎকালিন মহকুমা প্রশাসক আখতার হামিদ খান নওগাঁয় দুভির্ক্ষ মোকাবেলায় সমিতির তহবিল হতে প্রায় ২ লাখ টাকার চাল কিনে রাখেন। ফলে নওগাঁয় মৃত্যুর হার ছিল অনেক কম। গরীব কৃষকদের জন্য প্রথম সমবায় সমিতি গড়ে তোলা হয় এবং এই সমিতিগুলোকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য সমবায় কো অপারেটিভ ব্যাংক স্থাপন করা হয়। তদানিন্তন মি: জে,এম,ই,এস,কিউ,এন,এ রায় বাহাদুর নওগাঁ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গাঁজা সমিতির ১৮১৮ সালের রেজুলিউশন বহি অনুযায়ী দেখা যায় ১৯২২ সালে নওগাঁ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনারী সমবায় সমিতি থেকে বিভিন্ন সময় ৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋন গ্রহন করেছিল। দেশ বিভাগের পুর্বে নওগাঁয় কোন ব্যাংক ছিলনা। তখন কলকাতার ষ্টেট ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের সমস্ত লেনদেন পরিচালনা করা হতো। সেই সময় এই গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি নওগাঁ এলাকাবাসীদের জন্য ব্যাংকের লেনদেনের কাজ পরিচালনা করতো। এই সমিতির অফিসের প্রধান ভবনের একটি ঘর ষ্ট্রং রুম (ট্রেজারি) হিসাবে ব্যবহার করা হতো। নওগাঁ মহকুমার বিভিন্ন অফিস আদালত এবং প্রতিষ্ঠানের টাকা এখানে রাখা হতো। নওগাঁ কোÑঅপারেটিভ সমবায় ব্যাংক ছাড়া জেলা বোর্ড ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই গাঁজা সমবায় সমিতি হতে টাকা ঋন নিত। তখন ভবনটিতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনে সশস্ত্র পাহাড়া ছিল। এখানে ঘন্টা ছিল, যার সংকেত ধ্বনি নওগাঁ শহরবাসীকে সচেতন করে রাখতো। শিক্ষা বিস্তারে নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি: এর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। সমবায় সমিতি কর্তৃক ১৯১৬ সালে চাকলা এবং ১৯২১ সালে কীর্ত্তিপুর ও চকআতিথা এবং ১৯৩৬ সালে গাঁজামহল নামে পাহাড়পুর হাইস্কুল স্থাপন করা হয়। তৎকালিন গাঁজা সমিতির প্রবীণ ডিরেক্টর খান বাহাদুর বছির উদ্দিনের চেষ্টায় নওগাঁ গাঁজা সোসাইটি ১.৮০ একর জমি দান করেন নওগাঁ বি এম সি কলেজের জন্য। পুর্বে কলেজটি মাদ্রাসা ছিল। পরবর্তীতে এই গাঁজা উৎপাদনকারী সমিতির এই প্রবীণ ডিরেক্টর খান বাহাদুর বছির উদ্দিনের নাম অনুসারে সংক্ষেপন বিএমসি (বছির উদ্দিন মেমোরিয়াল কোঅপারেটিভ) কলেজ নামকরণ করা হয়। এছাড়া গাঁজা মহলের ১১টি স্কুল ও বর্তমানে নওগাঁয় আরও ৬/৭ টি কলেজ ও স্কুলসহ সর্বমোট ১৭/১৮টি বিদ্যালয়, ৪/৫টি মাদ্রাসা রয়েছে এবং প্রায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ শিার্থীকে প্রতি বৎসর ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হতো। ১৯১৭Ñ১৮ সালে গাঁজা সোসাইটি কর্তৃক ৩টি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপিত হয়। সেখানে একজন ডাক্তার , ১জন কম্পাউন্ডার, ১ জন পাহাড়াদার, ১ জন পিয়ন ও ১ জন সুইপারের বেতনসহ সারা বছরের ঔষধ সমিতি কর্তৃক সরবরাহ করা হতো। শুধুমাত্র মসজিদের জন্য চারটি ও মন্দিরের জন্য একটিসহ পাঁচটি বাড়ি মসজিদ ও মন্দিরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই সময় ৮৫জন কর্মচারীর বেতন বাবদ ব্যয় হতো প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এক হিসেব অনুযায়ী দেখা যায় সরকার গাঁজা খাত থেকে প্রায় গড়ে ১ কোটি ৩ লাখ ১৫ হাজার ৬শ’ টাকা আয় করেছিল। বর্তমানে নওগাঁর গাঁজা ভিটেগুলোতে কৃষকরা মৌসুমী ফসল ও সবজি চাষ করছে। ১৯৮৭ থেকে ২০০৬ সাল এই দীর্ঘ সময়ে জীবন জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জন বেছে নিয়েছে বিভিন্ন পেশা। সম্প্রতি নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি: তাদের সম্পত্তির বিভিন্ন স্থানে মার্কেটসহ ভবন নির্মাণ শুরু করেছে। অনেকেই জবর দখল করে রেখেছে বেশকিছু জায়গা ও ভবণ। কিন্তু এই সমিতির প্রকৃত সমবায়ীরা তাদের নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। অথচ নওগাঁ যখন ১৯৮৪ সালের ১লা মে নওগাঁ মহকুমা জেলায় রুপান্তরিত হয় তখন সরকারী অফিস আদালত গুলো গাঁজা ভবন গুলিতেই অফিস স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। পরর্বতীতে সরকারী ভবন নির্মাণ হলে অফিস গুলো স্থানান্তর করা হয়। পরিত্যক্ত ফাঁকা ভবনগুলি অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ে। চলে যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের দখলে । গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি: যে বিশাল সম্পদ রয়েছে তা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার মাধ্যমে সমবায়ীদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। গাঁজা চাষকে কেন্দ্র করে নওগাঁ শহরে রুপান্তরিত হয়। শহরের প্রাচীন ভবন বলতে নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি: এর ভবনগুলোকে চিহ্নিত করা হয়। বহু উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে এখনো কোনভাবে টিকে আছে সমিতিটি। এই সমিতির কার্যক্রমে অভিযোগের শেষ নেই। আদালতে অগুনতি পাল্টা পাল্টি মামলা রয়েছে। বহু রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সমিতির বাসভবন গুলি নামমাত্র ভাড়ায় নিজেদের আয়ত্বে রেখেছেন। ১৯৭৪ সালে জেনেভা কনভেনশনে মাদকদ্রব্য বিরোধী চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ১০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৮৪ সালের মধ্যে গাঁজা চাষ বন্ধের শর্ত ছিল। শর্ত মোতাবেক ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে গাঁজা চাষ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম ও বৃহত্তম সমবায় প্রতিষ্ঠান নওগাঁ গাঁজা উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি: এর ৭ হাজার সমবায়ী পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে চরম বিপাকে পড়ে। বংশ পরম্পরায় চলে আসা প্রায় ২শ’ বছরের প্রাচীন পেশার মানুষগুলোর সামনে ছিলনা কোন কাজের নির্দেশনা। কাঁশার থালায় হাতের কব্জি ডুবিয়ে দুধভাত খাওয়ায় অভ্যস্ত মানুষগুলি দিন দিন কষ্টে জীবন যাপন করতে শুরু করেছে। ধান, সরিষা, সবজি তাদের কাছে তখন নতুন ফসল হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু গাঁজা চাষ আর ফসল চাষের মধ্যে বিস্তর ফারাক। বিশ্বে আবার চাহিদা শুরু হয়েছে গাঁজার। কারণ গাঁজার ওষুধি অপরিসীম গুনাগুন। সাম্প্রতিক কালে একের পর এক দেশে গাঁজাকে বৈধ ঘোষান করা হচ্ছে। খবরে জানা গেছে বৃটিশ পার্লামেন্ট গাঁজা থেকে মরফিন উৎপাদরে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এবং বৃটিশ সরকার বাংলাদেশের গাঁজা উৎপাদনে উৎসাহ দেখিয়েছেন। এ ছাড়াও থাইল্যান্ডে গাঁজার বৈধতা দেওয়া হয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে। বাংলাদেশে বৈধভাবে গাঁজা চাষ ও বিপননের অনুমতি প্রদ্রান করা হলে এই অর্থকারি ফসল থেকে লদ্ধ আয়ের দ্বারা বাংরাদেশ পৃথীবির মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসাবে মাথা উঁচু করে দাড়াবে।