কারণে-অকারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। বাজারে প্রায় সবধরণের ভোগ্যপণ্যের দামই চড়া। বাজার নিয়ন্ত্রনের চেষ্টাস্বরূপ সরকার কিছু কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দিচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে আশাব্যাঞ্জক। তবে মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তা কতটুকু কার্যকর হয় তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। সম্প্রতি বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশে প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী এখন থেকে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকায় বিক্রি হবে। শুক্রবার থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকে এ দাম নির্ধারণ করা হয়। বৈঠক শেষে অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, চিনির দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৮০ টাকায় পৌঁছেছিল। সেটা কেজিতে ৫ টাকা দাম কমানো হয়েছে। এখন থেকে প্রতিকেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হবে। কয়েকটি পণ্যের আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে গত দুই-তিন মাসে ব্যবসায়ীরা চিনির দাম বাড়িয়েছে। এর আগে দাম ছিল ৭০ টাকার নিচে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চিনির নতুন দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, খুচরা বাজারে খোলা চিনি ৮০ টাকা এবং প্রতি কেজি প্যাকেট চিনির দাম ৮০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রথমবারের মতো চিনির সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দিল সরকার। বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সূত্রে জানা গেছে, সরকার চলতি মৌসুমে ছয়টি চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ১ মার্চ পর্যন্ত বাকি নয়টি চিনিকলে মোট উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৬৪৮ দশমিক ৬০ টন চিনি। এ ছাড়া আগের মজুদ ছিল ৫৬ হাজার ৩০ দশমিক ৯১ টন। ১ মার্চ পর্যন্ত ফ্রি সেল, ডিলার ও সরকারি সংস্থার কাছে চিনি বিক্রি করা হয়েছে মোট ৪৮ হাজার ৮৮৩ টন। সব মিলিয়ে সংস্থাটির কাছে বর্তমানে চিনি মজুদ আছে মাত্র ৪৮ হাজার ৭৯৬ দশমিক ৪ টন। এর মধ্যে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও মিলস রেশনের জন্য সংরক্ষিত আছে ১০ হাজার ৭৯৮ টন চিনি। সব মিলিয়ে চিনি শিল্প কর্পোরেশনের বিক্রয় যোগ্য মজুদ নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৯৯৮ টনে। যা সার্বিকভাবে দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিএসএফআইসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে চিনির চাহিদা গড়ে ১৫-১৭ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি মিল ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানিকৃত চিনিসহ দেড় থেকে আড়াই লাখ টন চিনি সরবরাহ করে বিএসএফআইসি। কিন্তু ছয়টি সরকারি মিল বন্ধ থাকার পাশাপাশি আমদানি না হওয়ায় দেশে চিনির চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া বিএসএফআইসির নিজস্ব প্রায় চার হাজার ডিলারের কাছে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের পাইকারি ও খোলা বাজারে দাম বাড়ছে।
এই অবস্থায় চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়া খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এখন নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হলেই হয়। আমাদের ব্যবসায়ীদের আইন মানার প্রবণতা কম দেখা যায়। অতি-মুনাফার লোভে সিন্ডিকেট তৈরি করে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরবরাহের মিথ্যা ঘাটতি দেখিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি নতুন কিছু নয়। আমরা চাই, চিনির ক্ষেত্রে যেন এমনটা না হয়। ব্যবসায়ীরা যেন নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করে সে জন্য নজরদারিও করতে হবে। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দিতে হবে যেন নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কেউ বেচতে না পারে। খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বেশি হয় পাইকারিতে দাম বাড়লে। তাই সরবরাহকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরে রাখা প্রয়োজন।