করোনা সংক্রমনের কারণে রাজানীতির মাঠেও এক আঘোষিত ভ্যাকেশন চলছে। রাজপথে কোনো কর্মসুচি নেই, ওয়েভিনার আর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনীতির পালাগানে ব্যস্ত। পরস্পর বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায় নি। তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবর করোনা মহামারির মধ্যেও শোনা গেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মাসে সংঘর্ষ ঘটেছে ১৫৮টি আর ২১ জেলায় নিহত হয়েছে ৩২ জন। করোনার কারণে সাংগঠনিক তৎপরতা কম হলেও ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সংঘর্ষ চলছে লাগামহীনভাবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ১৯ মাসে দেশে রাজনৈতিক হানাহানির ঘটনা ঘটেছে ৪৩৯ টি। এর মধ্যে আওয়ামীলীগ এবং সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাত ১৫৮ টি। এর মধ্যে ২০২০ সালে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা ছিল ৮৯ টি। আর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে এমন ঘটনা ৬৯ টি। এসব অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ২১ জেলায় নিহত হন ৩২ জন। তাদের মধ্যে বড় অংশ দলীয় নেতা-কর্মী। এছাড়া সরকারি দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে সাধারন মানুষও নিহত হয়েছেন। ঘটনা বিশ্লেষনে দেখা গেছে, এলাকায় ও দলের আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা, পছন্দ মতো কমিটি গঠন, সরকারি উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রন, বালু মহল নিয়ন্ত্রন এসব সংঘাতের কারন।
দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকায় দলের মধ্যে অনেকেই মৌসুমী পাখি হিসেবে ঢুকেছেন। নিজেদের যথাযথ জায়গা করতে গ্রুপিং লবিং করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এসব নিয়ন্ত্রনে দলের কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক কমিটির কর্তা ব্যক্তিরা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ফলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ঠেকানো যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত মিটিয়ে দলকে শক্তিশালী করে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব নির্দেশনা ও পরামর্শ দেন। তিনি বলেছেন, যে সব জেলায় দ্বন্দ্ব-সংঘাত আছে, সেসব জেলার ইউনিয়ন, উপজেলা কমিটির জন্য অপেক্ষা না করে আগে জেলা কমিটি গঠন করতে হবে। নতুন কমিটিতে প্রয়োজনে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িত নেতাদের বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় যে সব নেতা নিজ নিজ এলাকায় বিভেদে জড়িয়েছেন তাদের মিলে মিশে চলতে বলেন।
দলীয় ও জাতীয় স্বার্থে সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত দুর করা প্রয়োজন। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ব্যক্তির স্বার্থ সংরক্ষন করলেও দল দূর্বল হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরে নির্বাচনের আগে দুর করতে চান পারস্পরিক অবিশ^াস, দ্বন্দ্ব-সংঘাত। কিন্তু তিনি একা চাইলে হবে না, এজন্য সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বকেও সচেতন হতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থ ভুলে দলীয় ও জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।