করোনাভাইরাস সংক্রমণে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল-কলেজ খোলা হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ঘরে বন্দি অবস্থায় থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বয়ে গেছে আনন্দের ঢেউ। ক্যাম্পাসগুলোতে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আশঙ্কাও। করোনা ভাইরাসের মহামারী এখনও চলমান। এ কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোলে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার বিকল্প নেই। এরইমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কডিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়গুলো ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে সব শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপকযন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের সব প্রবেশমুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে সে বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অবহিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবক প্রবেশের সময় সরকার দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিতে এখন হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত মেরামত, বৈদ্যুতিক মেরামত এবং পানি সংযোগজনিত মেরামত সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এতৎসংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই এসব বিধি-নিষেধ মানার ব্যাপারে আন্তরিক। তবে সব জায়গায় তা শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে প্রবেশের আগে গেটে ভিড় জমছে। এতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়লে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার বন্ধের সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। করোনার প্রকোপ কমে এলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। কাজেই মশক নিধনের বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার আগের মতো প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে উঠুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শিশু-কিশোররা ফের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়–ক- এমনটা কখনোই কাম্য নয়। আমরা চাই না, দীর্ঘ দেড় বছর পর খোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় বন্ধ হওযার উপক্রম হোক।