বাংলাদেশ এখন শত ভাগ বিদ্যুৎতায়নের পথে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশের ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎতের সুবিধা পেত। সাড়ে ১২ বছরের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। এসময়ে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন ৩ কোটি ১ লাখ গ্রাহক। এতে সব মিলিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা হয়েছে ৪ কোটি ৯ লাখ। ২ লাখ ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে সেচ সংযোগ এখন ৪ লাখ ৪৬ হাজার। ফলে বেড়েছে কৃষিজ উৎপাদনও। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৬ সালে নেওয়া ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ প্রকল্পের’ কারণে আজ সারা দেশ বিদ্যুৎতের আলোয় উদ্ভাসিত। ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছানোর লক্ষ্য এ প্রকল্প। এটি গতিশীল করতে বাড়ি বাড়ি ভ্যান নিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ড ( আরইবি) চালু করে ’আলোর ফেরিওয়ালা’ কর্মসূচি। বাড়ি বাড়ি ফেরি করে ওরা ২১ লাখ সংযোগ দিয়েছে।
শুধু সমতল ভূমির শহর-বন্দর-গ্রাম নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন জনপদেও পৌছে গেছে বিদ্যুৎতের সংযোগ। দেশে প্রথমবারের মতো সাগরের তলদেশে ১৫ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের নভেম্বরে। দ্বীপজেলা ভোলার বিচ্ছিন্ন ১১টি চরেও বিদ্যুৎতের লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। ৬টি চরে ৯ হাজার পরিবারকে ইতোমধ্যে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ সরকার সময়ের চাহিদা উপলব্ধি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করতে থাকে। গত ১২ সেপ্টেম্বরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৭৯ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। দেশে এখন এই ৫টি সহ মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৪৬টি। শেখ হাসিনা সরকারের গত তিন মেয়াদের মধ্যেই নতুন করে নির্মিত হয়েছে ১১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরির লক্ষ্য সরকারের। ক্যাপটিভ (শিল্পের নিজস্ব উৎপাদন বিদ্যুৎ) ও প্রায় ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম ইতোমধ্যে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদান করছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ ইউনিট (কিলোওয়াট ঘন্টা) থেকে বেড়ে এখন ৫৬০ ইউনিট।
এদিকে মহেশখালীর দ্বীপ ইউনিয়ন মাতার বাড়িতে ১ হাজার ৬০০ একর জমিতে গড়ে উঠছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। এ প্রকল্পের মতোই আরো কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উৎপাদনের আসবে। এর মধ্যে পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে। কাজ চলছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বরগুনার তালতলার একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। বাগেরহাটের রামপালে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের কাজ এগিয়ে চলছে ; যা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। জ¦ালানি সাশ্রয়ী ,সহনীয় মূল্য ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা সরকার করলেও গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ বার। পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ আর খুচরা পর্যায়ে ৮৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ দাম বেড়েছে। তবু বিদ্যুৎ খাতে আয়-ব্যায়ের ঘাড়তি মেটানো যাচ্ছেনা। বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও কম দামে ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। উৎপাদন বাড়লে খরচ কমার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে ব্যায়ের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সফল হয়েছে। কিন্তু সহনীয় মূল্যে বিদ্যুৎ নিশ্চত করাও সরকারের কল্যাণ কর্মসূচির মধ্যে পড়ে। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ জরুরি। সাথে ভোক্তাদের উচিত বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া।