টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হলো ভবিষ্যত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত একগুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রা। জাতিসংঘ লক্ষ্যগুলো প্রণয়ন করেছে এবং “টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা” হিসেবে লক্ষ্যগুলোকে প্রচার করেছে। এতে মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ও ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এসডিজির পরিসর নিঃসন্দেহে অনেক বড়। এটি অর্জনের জন্য আমাদের অনেক বেশি কাজ করতে হবে। এটা কেবল সরকারের একার পক্ষে সম্ভব হবে না। এর সঙ্গে সবাইকে যুক্ত হতে হবে। এ কাজের সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রয়োজন। প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা অনেক এগিয়েছি। সরকার নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে। কারণ, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদের বাদ দিয়ে এসডিজি তো দূরের কথা, কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের সঙ্গেই নারীর সম্পৃক্ততা আছে। আগের দিনে পুরুষের স্বাস্থ্য বেশি গুরুত্ব পেত। পরিবারেও পুরুষরা পেতো বাড়তি যতœ। কিন্তু এই ধারণা এখন পাল্টে গেছে। মানুষ বুঝতে শুরু করেছে যে, নারী সুস্থ না হলে পরিবার বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সন্তান সুস্থ থাকবে না। খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হবে না। আরও অনেক বিষয়ে জটিলতা তৈরি হবে। তাই নারীর সুস্থতাকে এখন গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। এই সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।
এসডিজিতে নারীর অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। নারী উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে নারী উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ, নারীর অনুন্নয়নের জন্য অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ দায়ী।
এবারের লক্ষ্যমাত্রাগুলো খুব দর্শনভিত্তিক। এর মধ্যে বলা আছে মানুষের স্বাধীনতা, সাম্য ও মানবাধিকারের কথা। এতে দেশ ও দেশের অভ্যন্তরে মানুষে মানুষে সাম্য, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও সহমর্মিতার কথা বলা আছে। কাউকে বাদ না দিয়ে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে।
কারোর সহায়তায় নয়, নিজের শক্তিতে এসডিজির কাজগুলো করতে হবে। দারিদ্র্যের বিষয়টি সব সময় গুরুত্ব পেয়েছে। এমডিজিতে এটা ছিল। এসডিজিতেও আছে। তবে এবার অতিদারিদ্র্যসহ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের কথা বলা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে অতিদারিদ্র্য নির্মূল করতে হবে। অক্সফামের গবেষণায় চরমভাবে বৈষম্যের বিষয় এসেছে। পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ এখন ১ শতাংশ মানুষের কাছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশ মানুষের কাছে তাদের ৪০ শতাংশ সম্পদ আছে। বাংলাদেশে বৈষম্য অবশ্য এত প্রকট নয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অবশ্য বেশ ভালোই এগোচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এ ক্ষেত্রে শীর্ষে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, বিশ্বের সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ পেয়েছেন। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁকে এই পুরস্কারটি প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জেফরি স্যাকস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন অব দ্য ডে’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণকে এটি উৎসর্গ করছেন। তাঁর এই প্রাপ্তি আমাদের সকলের জন্য আনন্দের। তাঁর এই প্রাপ্তি বাংলাদেশের এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথকে আরও গতিশীল করুক-- এটাই প্রত্যাশা।