মৌসুমের ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতের ফলে সিলেট ও মৌলভীবাজারে খাসি পানের জুম গুলোতে এ বছর পান চাষে বাম্পার ফলন হলেও বাজারে পানের মুল্য পড়ে যাওয়ায় নায্যমুল্য পাচ্ছেন না পান চাষিরা। প্রতি কুড়ি পান (২৮৮০টি পানে এক কুড়ি) বিক্রয় হচ্ছে ৪শ থেকে ৫ শত টাকা। তাদের উৎপাদন খরচ সাড়ে ৩শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা। দেশ ছাড়িয়ে বর্হি:বিশ্ব বিশেষ করে পাকিস্তান,থাইল্যান্ড, লন্ডন, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে এ পান রপ্তানি করে বছরে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা আয় হলেও খাঁসিয়াদের জীবন-যাপনসহ পান চাষের উন্নয়নে সরকারী-বেসরকারী তেমন কোন উদ্্েযাগ না থাকায় এর উৎপাদন দিনদিন ব্যাহত হচ্ছে।এছাড়াও খাঁসিয়াদের জীবন-যাপন এবং পান চাষের সংস্কৃতিটি পাহাড় ঘিরে গড়ে ওঠার কারনে যাতায়াত ব্যাবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। সিলেট ও মৌলভীবাজারে প্রায় ১২১ টি খাসি বসতির অধিকাংশ এলাকার রাস্তা ঘাট যেমন খারাপ তেমনি চিকিৎসা ব্যাবস্থাও অত্যন্ত নাজুক।
মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলার বনাঞ্চলকে ঘিরে প্রায় ৬৮টি খাসি বসতি রয়েছে। খাসি বসতি এলাকাকে তারা পুঞ্জি এবং পুঞ্জি-প্রধানকে মন্ত্রী বলেন। পুঞ্জির প্রত্যেকটি খাসি পরিবারের রয়েছে আলাধা আলাধা জুম(পান চাষ এলাকা)। আয়তন অনুসারে প্রতিটি জুমে রয়েছে দুই হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার পর্যন্ত গাছ। এছারাও পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষন পাহারের চূড়ায় সবুজ শ্যামল অপরূপ খাসি পান পুঞ্জি।
সরকারের কাছ থেকে ভুমি লিজ নিয়ে বংশ পরামপরায় খাসি-রা দেশের পাহারী বনাঞ্চল এলাকায় বসবাস এবং খাসি পান চাষ করে আসছেন। দেশে ও বিদেশে খাসি পানের আলাদা কদর থাকলেও এ পানে রয়েছে বহুবিদ গুন। যেমন হজম শক্তি বৃদ্ধি, কাটা-ছেড়ায় রক্ত বন্ধ করাসহ বিভিন্ন ঔষধী গুন রয়েছে খাসি পানে। লন্ডন, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান রত সিলেট বিভাগের অধিকাংশ মানুষ চা, নাস্তা ও ভাত খাওয়ার পর এ পানের রসনায় তৃপ্ত হন।
এ পান থেকে বছরে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হলেও খাসিয়াদের জীবন মান উন্নয়নে কোন পরিবর্তন আসেনি। অধিকাংশ পুঞ্জিতে যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকায় যোগাযোগসহ পান পরিবহনে পোহাতে হয় সীমাহীন দূর্ভোগ। একই সাথে রয়েছে ভুমি জটিলতা। এসকল সমস্যার সমাধানসহ পান চাষের উন্নয়নে আর্থিক সহায়তাসহ সরকারের হাত সম্প্রসারিত হলে তাদের জীবন মানের উন্নতির সাথে সাথে প্রসারিত হবে অর্থকরি এ খাসিয়া পান শিল্প। তাছাড়া আকৃষ্ট হবে দেশী বিদেশী পর্যটকরা।