একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অন্যজন সহকারী ডেন্টাল সার্জন এই দুইজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নাগেশ্বরী উপজেলার জনসংখ্যা ৪লাখ ২ হাজার ১শ ১ জন। যাদের বেশির ভাগ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এ বিশাল জনসংখ্যার চিকিৎসা সেবার বিপরীতে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যার চিকিৎসক সংখ্যা মাত্র দুইজন। এদের একজন প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত থাকেন আরেকজন দাতের শল্য চিকিৎসক। বলতে গেলে সাধারণ রোগীদের জন্য কোন চিকিৎসক নেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। এমন চিকিৎসক সংকট এবং দূরাবস্থায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
৩১ শয্যা বিশিষ্ঠ্য নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন অসংখ্য মানুষ। নিয়মিত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন বরাদ্দকৃত শয্যার চেয়ে বেশি রোগী। চিকিৎসক সংকটে এসব চিকিৎসা প্রত্যাশিদের সঠিক চিকিৎসা পাওয়াই দূরূহ হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। রোগীর চাপ সামলাতে বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পদায়নকৃত চিকিৎসক এবং ইউনিয়ন সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সংযুক্তি করণ করে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কমপ্লেক্সটির চিকিৎসা ব্যবস্থা।
শুধু চিকিৎসক নয় সংকট রয়েছে টেকনোলজিষ্ট ও জনবলের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যানুযায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৯জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও পদায়ন রয়েছে ২জনের। শূণ্য রয়েছে ৭টি পদ। শূণ্য পদগুলোর মধ্যে রয়েছে জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেসথেসিয়া, আবাসিক মেডিকেল অফিসার। সিনিয়র স্টাফ নার্সের ২৫টি পদেরমধ্যে শূণ্য রয়েছে ৫টি পদ। শূণ্য রয়েছে সহকারী নার্সের পদ। স্বাস্থ্য সহকারী ৬০টি পদের ২১টি শূণ্য। ফার্মাসিষ্টের ১পদ শূণ্য। ২টি পদ শূণ্য রয়েছে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ল্যাবের। একটি দিয়ে কোন মতে চলছে প্যাথলজি বিভাগ। নেই রেডিওলোজিষ্ট, স্টোর কিপার, ক্যাশিয়ার, কুক। এছাড়া শূণ্য রয়েছে ওয়ার্ডবয়ের ২টি পরিছন্নতা কর্মীর ২টি পদ।
রেডিওলোজিষ্টের অভাবে ২০১৮ সালে দেয়া আধুনিক এক্স-রে মেশিনটি অদ্যবধি চালু করা সম্ভব হয়নি। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেটি। এদিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্ন টেষ্ট বাইরে থেকে করে নিয়ে আসতে হয় বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। এছাড়া চিকিৎসক সংকট থাকায় কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা মিলছে না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে।
পেটের ব্যথা নিয়ে পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া পৌর এলাকার সিয়াম বাবু (২) এর পিতা ফারুক হোসেন জানান, ছেলের চিকিৎসার জন্য ভর্তি করিয়েছেন। চারদিনে দুইবার ডাক্তারের দেখা পেয়েছেন তিনি। এখানে ৪দিনের চিকিৎসায় ছেলের কোন উন্নতি হয়নি। কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তার। এছাড়া ওষুধ থেকে শুরু করে সবকিছুই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে তার। মধ্যকুমরপুর এলাকার তাহের আলীর ছেলে মফিজুল ইসলাম (৩৫), বালাটারী এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে সোরহাব আলী (৫০) শারিরীক বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ভর্তি হলেও শুক্রবার (১লা অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত কোন ডাক্তারের দেখা পাননি। তারা জানান, ভর্তি হওয়ার পর থেকে কোন ডাক্তার আসেননি। একরকম বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছেন তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদায়নকৃত চিকিৎসক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সংযুক্ত করে বর্তমানে চিকিৎসা সেবা চালানো হচ্ছে। জনবল সংকট উত্তরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে শূণ্য পদের তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জেলা সিভিল সার্জন বরাবর চাহিদা দেয়া আছে। শূণ্য পদে পদায়ন হলে এ সংকট কেটে যাবে।