অবকাঠামো, শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও নানামুখী উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের দক্ষিণে শরণখোলা সরকারি ডিগ্রী কলেজ। কর্মউদ্দোগী আদর্শবান অধ্যক্ষের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় তৈরি হয়েছে শিক্ষার সুষ্ঠু মনোরম পরিবেশ। ৫ টি বিষয় অনার্স কোর্স চালু হওয়ায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ছে। অধ্যক্ষ কলেজ অফিস কক্ষে লিখেছেন আমি ও আমার অফিস দূর্ণীতি মুক্ত। এতে করে সততায় তিনি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের নজির রেখেছেন।
কলেজ সুত্র জানায়, অবহেলিত এ জনপদে উচ্চ শিক্ষার আলো ছড়াতে ৯ নং সাব সেক্টরের সেকেন্ড ইন কমান্ড প্রয়াত শামসুল আলম তালুকদার ১৯৭৮ সালে রায়েন্দা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গোলপাতার নির্মিত একটি ঘরে অধ্যক্ষ, ৪ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী নিয়ে শরণখোলা মহাবিদ্যালয় নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৯ সালে স্থান পরিবর্তন করে রাজৈর গ্রামে প্রায় ৮ একর জমির সিমানা নির্ধারন করে আবারও সুন্দরবনের গোলপাতা দিয়ে ঘর তৈরী করা হয়। ১৯৭৯ -১৯৮০ শিক্ষাবর্ষে বানিজ্য ও মানবিক শাখা নিয়ে এ মহাবিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৯ সালের ১ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা বোর্ড যশোর কতৃক প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮১ সালে প্রথম বারের মতো ১০৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৯১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক বিএ ও বিএসএস কোর্সের অধিভুক্ত লাভ করে। সেই থেকে কলেজটির নাম করন করা হয় শরণখোলা ডিগ্রি কলেজ।
কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাবেক সাধারন সম্পাদক সহকারি অধ্যাপক সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ২০১২ সালের ১ জুলাই নতুন অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন মোঃ নুরুল আলম ফকির। তিনি গত ৯ বছরে ম্যাজিকের মতো কলেজে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার মধ্যে ৪ তলা ভবন নির্মান, অত্যাধুনিক ডিজাইনের কলেজ গেট ও সুন্দর শহীদ মিনার নির্মাণ। এ ছাড়া পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, সাবেক প্রতিমন্ত্রীর নামে ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন অডিটরিয়াম ও আধুনিক লাইব্রেরী। যেখানে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের জন্য সহ¯্রাধিক বই রয়েছে। বঙ্গবন্ধু কর্ণার, মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাসহ মুক্তিযোদ্ধা কর্নার, ক্যাম্পাসে পাকা মসজিদ নির্মাণ, ডিভাইডার সড়ক, ভিআইপি গেস্ট হাউজ নির্মাণ, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সোলার লাইট, শিক্ষকদের ব্যাচেলর আবাসস্থল, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- করেছেন। যা চোঁখে পড়ার মত। অধ্যক্ষ কলেজ অফিস কক্ষে লিখেছেন আমি ও আমার অফিস দূর্ণীতি মুক্ত। এতে করে সততায় তিনি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের নজির রেখেছেন।
কলেজ শিক্ষক পরিষদেও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মোঃ শহিদুল ইসলাম শরিফ বলেন, বাগেরহাট-৪ শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জ আসনের সংসদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন এমপির পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট কলেজটি সরকারি করনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ কলেজে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে ৫ টি বিষয় সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, ব্যবস্থাপনা ও হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে ৫টি বিভাগীয় প্রধানের আলাদা কক্ষ সেমিনার রয়েছে। এ ছাড়া এইচএসসি, (সাধারণ ও বিএম শাখা), স্মাতক (পাস ও সম্মান) এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসি (মানবিক) স্নাতক, বিএ, বিএসএস শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে। ডিজিটাল প্রজেক্টর ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লাসসমূহ পরিচালনা করা হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। এর মধ্যে ৬০% ছাত্রী রয়েছে।
শরণখোলা উপজেলার জিলবুনিয়া গ্রামের ভ্যান চালক আলতাফ হোসেন বলেন, আমার ২ মেয়ে শরণখোলা সরকাররি ডিগ্রী কলেজে পড়ে। বড় মেয়ে সুমি অনার্সে ৩য় বর্ষে পড়ছে। এ কলেজে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা থাকায় আমার মেয়েদের নিশ্চিন্তে পড়াতে পারছি। বাহিরে পড়াতে যে খরচ তা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি আরো বলেন আমার মত গরিব পরিবারের কত মেয়েরা এখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
কলেজ পরিদর্শণকালে অধ্যক্ষ মোঃ নুরুল আলম ফকির এফএনএসকে বলেন, কলেজটি নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। আমি সংশ্লিষ্টদের সবাইকে নিয়ে কলেজের সমস্যা চিহ্নিত করি। পরে সকলের সহযোগিতায় পর্যায়ক্রমে গত ৯ বছরে কলেজ ফান্ড থেকে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এছাড়াও সরকারি অর্থায়নে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ৪ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার ৯৫% ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৭৫লাখ টাকার উন্নয়নমূলক কাজ প্রকৃয়াধীন রয়েছে। তিনি আরো বলেন শিক্ষার্থীদের আদর্শবান ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনে বিভিন্ন দেয়ালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানসহ বিভিন্ন জ্ঞাণী ও মনিষি ব্যাক্তিত্বদের বাণী দিয়ে সাজানো হয়েছে। যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী মেধা মননে একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। অনেক দূর থেকে শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে কলেজে এসে ক্লাস করতে হয়। গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সু-শিক্ষার জন্য কলেজে ১০০ জন ছাত্রী এবং ১০০ জন ছাত্র থাকার জন্য আবসিক হল নির্মাণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।