নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ১ নং পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নে ২০১৯-২০ অর্থবছরে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট-৩ (এজিএসপি-৩) প্রকল্পের আওতায় বিবিজি-পিবিজি টাকায় বাস্তবায়নযোগ্য স্কিমের আওতায় বরাদ্দকৃত অর্থ নয়-ছয়ের খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অভিযোগের তীর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল সরকারের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ছাতনাই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ছাতনাই উচ্চ বিদ্যালয়ে উঁচু-নিচু বেঞ্চ সরবরাহে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু সেই বিদ্যালয়ে কোনো বেঞ্চ সরবরাহ করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. করিম বলেন, বিদ্যালয়ে বেঞ্চ দেওয়ার কথা তিনি জানেনই না।
অন্যদিকে, ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে ইউড্রেন নির্মাণের জন্যও বিপুল পরিমাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এগুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো জায়গায় ইউড্রেন নির্মাণ করা হলেও তা করা হয়েছে দায়সারাভাবে।
এদিকে, কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) মহামারী মোকাবেলায় সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা। এর জন্য এজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ছাতনাই ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার টাকা। তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, দেশে করোনার সবচেয়ে খারাপ সময় চলাকালেও এ ধরণের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। অপরপক্ষে স্বাস্থ্যসচেতনতা, জনস্বাস্থ্য ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ বিষয়ক স্কিমের আওতায় বরাদ্দ করা হয় আরও ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তবে স্বাস্থ্যসেবা উন্নতকল্পে কোনো কাজই করা হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে আশ্রয়হীনদেরকে ঘর প্রদানের আশ^াস দিয়ে অনেক জনের কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা নিয়েছেন তিনি। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন, ওই গ্রামের নবিউল, বুলু সিদ্দিক, আকালু, মুশিয়ার, জিলানী, রেনু বেগমসহ আরও অনেকে। কিন্তু ওই ইউনিয়নে একটি ঘরও কেউ পায়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে বিগত পাঁচ বছরে হাট-বাজার উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকেও কোনো কাজ করা হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল হক সরকারের বিরুদ্ধে ঠাকুরগঞ্জ বাজারের গরুর হাট দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। সে সময় এলাকাবাসী ঠাকুরগঞ্জ বাজারে চেয়ারম্যান কর্তৃক মার্কেট নির্মাণ বন্ধ ও গরু কেনা-বেচার জায়গা পুনরুদ্ধারের দাবিতে প্রতিবাদ সভা করেন। পরে দুই শতাধিক এলাকাবাসীর গণ-স্বাক্ষর করা একটি লিখিত অভিযোগও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করা হয়। তখন চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক সরকার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন তাই প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলে আমার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
বর্তমান অভিযোগগুলোর বিষয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের জন্য যে বেঞ্চ দেয়ার কথা সেগুলো ইউনিয়ন পরিষদে রাখা আছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিয়ে যায়নি। অন্যদিকে বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলনও করা হয়নি আর বাকি কাজগুলো চলমান রয়েছে। আশ্রয়হীনদের ঘর দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়ার বিষয়টিও তিনি মিথ্যা বলে দাবি করেন। চেয়ারম্যান আনোয়ারুল বলেন, সামনে নির্বাচন জন্য তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর প্রয়াসে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।