কুমিল্লার একটি পূজাম-পে কোরআন পাওয়ার জের ধরে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামগতি পৌরসভার জমিদারহাট বাজার সংলগ্ন শ্রী শ্রী রামঠাকুরাঙ্গন মন্দির ও পূজা ম-পে একদল দুর্বৃত্ত এ হামলা চালান। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ, শর্টগানের ৫৪ রাউন্ড গুলি ও তিন রাউন্ড টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় পুলিশের তিন ও আনসারের চার সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে রামগতি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ২৫০ জনকে আসামি করা হয়।
জানা গেছে, কুমিল্লার একটি পূজাম-পে কোরআন পাওয়ার ঘটনায় বুধবার রাতে রামগতি উপজেলার জমিদারহাট বাজারে স্থানীয়রা একটি বিক্ষোভ মিছিল বরে করে। মিছিলটি বাজার সংলগ্ন শ্রী শ্রী রামঠাকুরাঙ্গন মন্দির ও পূজা ম-পের সামনে গেলে মিছিলের মধ্য থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করা হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা মন্দিরের সামনের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মন্দিরের দক্ষিণ পাশের একটি টিনের গেইট ভেঙে ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় মন্দিরের পাশে দু’টি টিউবওয়েল ভেঙে ফেলার পাশাপাশি রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম-পটি পরিদর্শনে যাওয়ায় হামলার সময় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাসনাত খাঁন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান ও পৌর মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন মন্দিরের ভিতরে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় পুলিশ হামলাকারীদের লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় পুলিশ শর্টগানের ৫৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে এবং তিন রাউন্ড টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে দুই ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তারা জানান, হামলাকারীদের ইটের আঘাতে রামগতি থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রাজ্জাক, গাড়ী চালক মো. শাজাহান, কনস্টেবল অমর চাকমা, ম-পে কর্তব্যরত চার আনসার সদস্য এবং যুবলীগ নেতা মো. হাদিস, ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির ও মুশফিকুর রহমান আহত হন। এ ছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাসে বিক্ষোভকারী অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ ও পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
শ্রী শ্রী রামঠাকুরাঙ্গন মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক মৃনাল কান্তি পাল বলেন, ধর্মীয় অবমাননা কোনো ধর্মই সমর্থন করেন না। কুমিল্লার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। কিন্তু সেই ঘটনার জের ধরে আমাদের মন্দিরে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, মানুষের জানমাল এবং মন্দির রক্ষায় পুলিশ প্রথমে হামলাকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। কিন্তু এতে তারা নিবৃত্ত না হওয়ায় শর্টগানের গুলি ছোঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাসনাত খাঁন জানান, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে উপজেলার পূজাম-পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।