মৌলভীবাজার জেলায় আয়ুর্বেদীয় ভেষজ গাছপালা থেকে বছরে কয়েক কোটি টাকার আয়ুর্বেদী ঔষধের কাঁচামাল পাওয়ার বিপুল স¤ভাবনা রয়েছে। যার ফলে এইসব ঔষধের কাঁচামাল আমদানীর উপর চাপ কমবে এবং রপ্তানী করে বিপুল পরিমানের বৈদেশীক মুদ্রা আয় সম্ভব।
বর্তমানে দেশের আয়ুর্বেদীয় ভেষজ ৫ হাজার বৃক্ষ মানুষের শারিরীক রোগ-বিয়োগের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই দেশে ঔষধি গাছ রোপনে মানুষের আগ্রহ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছর জেলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারিত হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ঔষধি গাছের বাগান। কোন আয়ুর্বেদীয় প্রতিষ্টান ব্যতীত মালিকরা এসব ঔষধি গাছের ছাল, শিকড়, ফল ইত্যাদি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করবেন না বলে জানান। কারণ আর্য়ুবেদী প্রতিষ্টান এইসব উপকরণ দিয়ে আয়ুর্বেদী ঔষধ তৈরী করেন। যা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে মানুষের কল্যানে আসে।
একটা সময় ছিল আমাদের দেশের অধিকাংশ গ্রামের মানুষই তাদের অসুখে বিসুখে গ্রাম্য বনাজী ঔষধই ব্যবহার করতেন। তবে ব্যাপক হারে এলোপ্যাথিক ঔষধের আর্বিভাব ও নতুন প্রজন্মের নিকট ভেষজ বৃক্ষ সম্পর্কে ধারনা না থাকার কারনে আমাদের দেশে এতদিন তা তেমন প্রসারিত হয়নি। কিন্তু সময়ের আবর্তনে বিলুপ্ত প্রায় ঔষধী বৃক্ষ চাষে নতুন প্রজন্ম ক্রমশ উৎসাহী হয়ে উঠছে। মৌলভীবজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সড়ক ও জনপথ রাস্তার পাশে ৪ কিলোমিটার সামাজিক বনায়নে ঔষধি বৃক্ষ কয়েকটি গ্রামের মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে সেই আদি যুগে। আর ঔষধী বৃক্ষের কারনে সে রাস্তার নামই হয়ে গেছে ঔষধী রাস্তা। যা রুপ নিয়েছে দেশের একটি মডেল ঔষধী সড়ক হিসেবে।
১৯৯২-৯৩ সালে সড়ক ও জনপথ, বন বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপকারভোগী এই চার পক্ষীয় অংশিদ্বারিত্বে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা সহ কমলগঞ্জ উপজেলার ফূলবাড়ী থেকে ভানুগাছ ধলই নদীর পুরাতন ব্রীজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় ৫ হাজার অর্জুন বৃক্ষ রোপন করা হয়। বর্তমানে সারা দেশে বন বিভাগ স্থানীয়দের অংশদিয়ে পাটনারব্যাজ বনায়ন করছে। যা অল্প সময়ে বড় হয় আর প্রচুর পরিমানে লাভবান হওয়া যায়। প্রায় ২৫ বছর আগে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া বন থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। লাভজনক কাঠের কোন প্রজাতি রোপন না করে পুরো এলাকায় রাস্তার দু পাশে তিন লাইন করে ৬ লাইনে প্রায় ৭ হাজার ভেষজবৃক্ষের চারা রোপন করা হয়। এসব বৃক্ষের শতভাগই এখন বেঁচে আছে। এমনকি বিগত ২৫ বছরে চুরি হয়নি একটি গাছও।
তবে এই গাছ গুলোর প্রাপ্ত বয়স্কতা ও প্রকল্পের মেয়াদ আরো ৫/৬ বছর আগে পূর্ণ হলেও এগুলো তারা কাটছেন না। কারন এই গাছ গুলো থেকে প্রতিদিন আশেপাশের ১০/১২টি গ্রামের মানুষ ছাল নিয়ে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এবং সকালে সে পানি পান করেন। যা তাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। গ্রামবাসীর ও বিশেজ্ঞদের মতে, অর্জুন বৃক্ষ মানুষের হৃদরোগ, রক্তের নিন্ম চাপ, রক্ত আমাশয়, হজম শক্তি, চর্ম ও হাপানীসহ ১৫টি রোগের উপশম হিসেবে কাজ করে।
এ বিষয়টি মাথায় রেখে লাভের আসায় সামাজিক বনায়ন করেও গাছগুলোর রোপনকারীরা তা বিক্রি করছেন না। তবে কোন আর্য়োবেদী কোম্পানী যদি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ গুলো নিতে চায় তাহলে বিক্রি করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক বনকর্মকর্তা বলেন, ২৫ বছর ধরে এই গাছ গুলো শ্রীমঙ্গল ভানুগাচ সড়কে রয়েছে। গাছ গুলো চুরিও হয়নি। পাশাপাশি এ গাছ গুলোর চামড়া (ছাল) কেটে নিয়ে এর রস পান করে থাকেন এ এলাকার মানুষ। এটি আয়ুর্বেদী ঔষধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিঃসন্দেহে এ থেকে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকার ভেষজ কাঁচামাল পাওয়া যাবে।
তবে অনেকেরই মতে এই ঔষধী সামাজিক বনায়নটি বাংলাদেশের একটি অনুকরনীয় যা একদিকে যেমন সৃষ্টি করেছে ছায়া বৃক্ষ ও বনাঞ্চল। অন্যদিকে পাওয়া গেছে ভেষজ ঔষদের কাচাঁমাল। এভাবে অংশিধারীত্ব ভিত্তিক সারা দেশে সরকারি ভূমিতে ভেষজ ঔষধের বনায়ন করা হলে দেশ হবে ভেষজ ঔষধে সমৃদ্ধ পাশাপাশি তা বিক্রি করে লাভবান হওয়া যাবে অর্থনৈতিক ভাবে।