দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুতেই কমছে না। আইন করে মহাসড়কে শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে ডিভাইডার। এর পরও সড়ক দুর্ঘটনা থেমে নেই। কত পরিবার যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। আবার এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকা-ও বলা যায়। গত কয়েকদিনে বেশ কিছু সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত পঁচিশ থেকে ত্রিশজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ফেনীতে পাঁচজন, পাবনার ঈশ্বরদীতে তিনজন, বাগেরহাটের ফকিরহাটে দুজন, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে একজন এবং যশোরে একজন নিহত হয়েছে। গত শনিবার ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাটে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে একটি বাসের পেছনের অংশ ভেঙে ঘটনাস্থলেই পাঁচজনসহ সাতজন নিহত হয়েছে। এছাড়া গত রোববার দুর্ঘটনায় আরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
এসব সড়ক দুর্ঘটনার পেছন অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক, মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনগণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতির কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। চালকদের মাদকাসক্তিও সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধে চালকদের ডোপ টেস্ট করানোর ব্যাপারে গত বছর থেকেই কথা হচ্ছে। চালকদের সেই ডোপ টেস্ট কত দূর? এর বাইরে বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। যেসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারাও উদাসীন। ফলে এসব দুর্ঘটনাকে অনেকেই দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকা-ই বলে থাকেন।
সড়কের এই নিরাপত্তাহীনতা কি চলতেই থাকবে? আমরা কোনোমতেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য চালক ছাড়া কারো হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া যাবে না। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপোশ করা যাবে না। সড়কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। অনিয়মকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সড়কে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে সেগুলোকে এখন দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকা- বলেও উল্লেখ করা যায়। তাই সড়ক দুর্ঘটনার নামে হত্যাকা- রোধে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব মহাসড়কে বড় গাড়ি চলে সেগুলোতে ছোট ছোট ধীর গতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি। কেননা সড়কে ঘটা প্রাণহানির বেশিরভাগই এসব ছোট যানবাহনের চালক-যাত্রীদের। তাই এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।