খুলনার পাইকগাছায় নিম্ন চাপের প্রভাবে কয়েক দিন টানা ভারী বৃষ্টিতে বিস্তির্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আমন ধান, সবজি ক্ষেত, মৎস্য লীজ ঘের, নার্সারী, পুকুর, রাস্তা ও বসতবাড়ী তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি ও রাড়–লী অপেক্ষকৃত উঁচু হলেও বাকী ৭টি ইউনিয়ন নিচু। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায়। তবে গত চার দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে উঁচু এলাকাও তলিয়ে গেছে। উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। কয়েক’শ কাঁচা ও আঁধাপাকা ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির উঠানে পানিতে তলিয়ে থাকায় সাধারণ মানুষ বিড়াম্বনায় পড়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে শ্রমজীবী মানুষরা কাজ করতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়ে আর্থিক অনাটনের মধ্যে পড়েছে। উপজেলার সদর ইউনিয়ন গদাইপুর কয়েক’শ নার্সারী ক্ষেত পানিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবজি ক্ষেত ও আমন ধান ঝড়ো হাওয়ায় পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় জাল দিয়ে ভেসে যাওয়া মাছ ধরতে দেখা যায়। এ দিকে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারে আমন ক্ষেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর দুপুর থেকে ঝড়ো হাওয়ায় খামারের আধা পাঁকা ৩৭ একর জমির ধান ক্ষেত লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে। খামার সূত্রে জানাগেছে, চলতি আমন মৌসুমে খামারে বিনা ২৩ জাতের ২৫ একর ও ব্রি-ধান ৩৭ জাতের ১২ একর সর্বমোট ৩৭ একর জমির ধান পানিতে পড়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে রয়েছে। তাছাড়া ব্রি ধান ৩০ জাতের ১৪ একরে সবে মাত্র থোড় এসেছে ও ব্রি ধান ৭৮ জাতের ৭ একরে কুশি বের হচ্ছে। এবস্থায় ঝড়ো হাওয়ায় ধানের পরাগায়ন না হলে ধান চিটা হয়ে যেতে পারে। খামারে সর্বমোট ৫৮ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। ৪টি জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। তাছাড়া ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে ধানের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। বোয়ালিয়া ব্রিজ রোডের ফার্মের পাশে পিচের রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিতে নার্সারী, সবজি ক্ষেত ও ধানের ক্ষতি হয়েছে। রাড়ুলী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, বৃষ্টিতে অনেক কাঁচা ঘর পড়ে গেছে ও তার বাড়ির উঠানে হাটু পানি হয়েছে। রান্না ঘরের কাঁচা উনানে পানি ভরে থাকায় রান্না করতে পারছে না। এক কথায় বৃষ্টির কারনে এ ক দিন মানুষ ঠিক মতো কর্মস্থলে যেতে পারেনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে এলাকা প্লাবিত হয়ে আমন ধান ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই প্লাবিত এলাকা পানি সরে গেলে আমন ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। উপজেলার সিনিয়র সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ জানান, কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে নিম্ন এলাকার প্লাবিত হয়েছে। তবে মৎস্য ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. হারুন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়ায় চলতি মৌসুমে আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খামারের প্রায় ৩৭ একর জমির পাঁকা ধান ঝড়ে পড়ে পানিতে ডুবে থাকায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।