কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে সম্প্রতি দেশের ১৬ জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর, পূজামন্ডপ, মন্দিরে হামলার ঘটনায় ৮৫টি মামলায় ২৩ হাজার ৯১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামি ও গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্র লীগের নেতা-কর্মী যেমন রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক পরিচয় নেই, এমন অনেকে মামলার আসামি ও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে প্রায় ২৪ হাজার আসামির বেশির ভাগই অজ্ঞাতনামা বলে মামলার এজাহার পর্যালোচনায় দেখা গেছে। এদিকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া ঘটনার পেছনে মুল নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ হবার আগেই সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছে অব্যাহত ভাবে। অন্যদিকে গত ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে গণ অনশন ও গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। তারা দূর্গোৎসবের সময় মন্দির, পূজাম-প ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে। কারণ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার সময় স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রশাসনিক তদন্ত কতটা সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে, তা সন্দেহের বাইরে নয়।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক ক্ষমতায় থাকার সময় কক্সবাজারের রামুতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরে এবং পাবনার সাঁথিয়ায় সংঘটিত ঘটনায় কেউ শাস্তি পায় নি। সবশেষ সুনামগঞ্জের শাল্লার ঘটনায়ও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সবাই জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অতীতে সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত সহিংসতার কোনো বিচার হয় নি। সুষ্ঠ নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়ায় স্বাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে আসামিরা বেঁচে গেছেন, কোনো শাস্তি তাদের পেতে হয় নি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যা লঘুদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা-সহিংসতার ঘটনা তদন্তে আওয়ামী লীগ সরকার একটি কমিশন গঠন করেছিল। কমিশন ঘটনার তদন্ত, পর্যবেক্ষণ সুপারিশসহ সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। দু:খজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত সে সব সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন হয় নি। তবে এবারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ,প্রতিমা ও পূজামন্ডব ভাংচুরের ঘটনায় আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ঘটনার সাথে যেই জড়িত থাক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। হোক সে বিএনপি বা ছাত্রলীগ ছাত্রদলের যে কেউ। এবং ঘটনাগুলোর বিচার হবে দ্রুত বিচার আইনে। এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কতটা আশ্বস্থ হয়েছে, তা বলতে পারবো না। তবে আমরা চাই কোনো প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীকে অযথা হয়রানির শিকার না করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষিকে সনাক্ত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি। সেই সাথে দেশে এমন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিচর্চা করা, যেখানে ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে প্রত্যেকে নির্ভয়ে নিজের মত প্রকাশ করতে পারবেন। দেশের সংবিধান এ অধিকার সব নাগরিককে দিয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে এমন সহিংস ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এ থেকে পরিত্রাণ চায় জনগণ। শুধু আসামির সংখ্যা বাড়িয়ে জটিলতা না বাড়িয়ে প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করাই সময়ের দাবি।