বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ঈদগাঁও উপজেলা শাখা কর্তৃক পরিচালিত গণস্বাক্ষর কার্যক্রমে এলাকার সর্বস্তরের প্রতিনিধি ও গণমানুষ সম্পৃক্ত হয়েছেন। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন ঝিলংজা মৌজার হিমছড়ি বনাঞ্চলের শুকনোছড়ির ৭০০ একর বনভূমি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রশাসনিক একাডেমিকে লীজ দেয়ার প্রতিবাদে এসব স্বাক্ষর গ্রহণ করা হচ্ছে। সর্বস্তরের লোকজন এ কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে পরিবেশ আন্দোলনের চলমান এ কর্মসূচির প্রতি ঐক্য ও সংহতি প্রকাশ করেছেন। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ পদক্ষেপ সংরক্ষিত বনভূমির জীববৈচিত্র্য ও হাতির অভয়ারণ্য রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। পরিবেশ আন্দোলন ঈদগাঁও উপজেলা শাখার সহকারি অর্থ সম্পাদক আবু ছালেহ জানান, মহামান্য হাইকোর্ট লীজের উপর স্থগিতাদেশ দিলেও লীজ বাতিলের দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
বাপা ঈদগাঁও উপজেলা শাখার সহকারি সাংগঠনিক সম্পাদক, রত্নগর্ভা রিজিয়া আহমদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, মানুষের প্রয়োজনে আল্লাহ তাআলা এ অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবীটা তৈরি করেছেন। যার একটি অংশ হচ্ছে লাল সবুজের আমাদের এ বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা হচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এখানেই অবস্থিত। প্রতি বছর দেশি-বিদেশি লক্ষ লক্ষ পর্যটকের পদভারে মুখরিত থাকে সৈকত শহর কক্সবাজার। কক্সবাজারে স্বাগতম পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ মেরিন ড্রাইভ রোড। শহরের কলাতলী ডলফিন মোড় থেকে শুরু হয় সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ পর্যন্ত পৌঁছেছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সড়কটি। সাগর পাড় ঘেঁষে দৃষ্টিনন্দন এ সড়ক তৈরি করা হয়েছে। সড়কের পাশেই আলোচিত শুকনোছড়ি। যাতে রয়েছে হাজারো জীববৈচিত্র্যের সমাহার। রয়েছে পশু পাখি ও হাতির অভয়ারণ্য। সৌন্দর্যে ভরপুর এ এলাকা কেন্দ্রিক পর্যটন নির্ভর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে তা কক্সবাজারের উন্নয়নে মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে।
পরিবেশ আন্দোলন ঈদগাঁও উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, মানুষের প্রয়োজনে পরিবেশ ও প্রতিবেশের রক্ষায় সকলের এগিয়ে আসা দরকার। দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদেরকে পরিবেশ সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। এলাকার স্বার্থের ব্যাপারে কখনো আপসকামিতা চলে না। বাপা শুকনো ছড়ির বনাঞ্চল রক্ষায় যে উদ্যোগ নিয়েছে সত্যি তা প্রশংসার দাবিদার। দৈনিক কক্সবাজার বার্তা ও কোহেলিয়া টিভির স্থানীয় প্রতিনিধি মিছবাহ উদ্দিন জানান, পরিবেশ রক্ষায় পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ সমূহেও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থে আমরা নিজেরাই পরিবেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হই। যা কখনো উচিত নয়। পরিবেশ রক্ষা করা সকলেরই দরকার। সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে হলে পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই।
ঈদগাঁও ব্যবসায়ী নুরুল হুদা জানান, পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার গুরুত্ব অত্যধিক। পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হলে আমাদেরকেই এর ভুক্তভোগী হতে হবে।
মেম্বার প্রার্থী মোঃ আলমগীর বলেন, পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের সচেতনতার বিকল্প নেই। নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেককেই পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। মধ্যম মাইজ পাড়ার ডাক্তার ওসমান গনি জানান, পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিকে সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা কখনো পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি করতে পারি না। যেখানে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চলবে বাপার নেতৃত্বে সেখানে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিত্ব ইমরান উদ্দিন জানান, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতিকর যে প্রভাব তার দেও ঢেউ বাংলাদেশে অনেক আগেই লেগেছে। এখন আমরা যদি বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মাধ্যমে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমে লিপ্ত হই ভবিষ্যতে এর দায়ভার আমাদেরকেই গ্রহণ করতে হবে। দৈনিক অগ্নি শিখার প্রতিনিধি নাসির উদ্দিন পিন্টু বলেন, তাদের পরিচালিত গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কার্যক্রমে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক সাড়া দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন। নাসির আলপনা এর স্বত্বাধিকারী, পরিবেশ আন্দোলন নেতা নাসির উদ্দিন জানান, প্রভাবশালী মহলের দুর্লোভের কারণে পরিবেশের নানা উপাদান ক্রমান্বয়ে নিঃশ্বাস হচ্ছে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষায় অপরিহার্য। জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নুরুল আলম জানান, আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করার কারণে এর বিরূপ প্রভাব আমাদের উপর এসে পড়ছে। কেউ আমরা এ প্রভাব থেকে পরিত্রাণ পাবো না। জালালাবাদ ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ শরীফ বলেন, পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকে আমাদের সকলকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। কোন কিছুতেই পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না। ইউনিয়ন ব্যাংক ঈদগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, পারিপার্শ্বিকতার উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ঈদগাঁও উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আলহাজ্ব ছব্বির আহমদ এম, এ জানান, পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে পৃথিবীর কোন দেশই উন্নয়ন করতে পারেনি জাতীয় উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা ও সামগ্রিক পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সু-শাসনের জন্য নাগরিক- সুজন ঈদগাঁও থানা শাখার অর্থ সম্পাদক আবু তৈয়ব চৌধুরী জানান, ব্যক্তিগত সচেতনতা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সচেতনতার মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব। ঈদগাঁও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সম্পাদক ও মালিক পরিষদের সদস্য শাহেদ কামাল বলেন, পরিবেশের ক্ষতি মানে গণমানুষের ক্ষতি। এ থেকে আমাদের নিভৃত্য থাকা উচিত। ঈদগাহ অর রশিদ আহমদ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, জাতীয় সম্পর্কে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর সুরক্ষার দায়িত্ব সরকার ও সর্বস্তরের জনগণের। ঈদগাঁও প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেফাইল উদ্দিন জানান, স্থানীয় নদনদী ও খাল-বিলের দখল ও দূষণ রোধে এগিয়ে আসতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নিয়মিত ড্রেজিংয়ের কাজ করতে হবে। নদ নদী ও খালের পানির স্বাভাবিক গতি নিশ্চিত করতে হবে। ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসান তারেক বলেন, মৃতপ্রায় ঈদগাঁও খালের বিভিন্ন পয়েন্টে একের পর এক দখল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালি। গুটিকয়েক ব্যক্তির স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ খালটি নষ্ট করতে দিতে পারি না। ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ আলম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রভাবের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি সাধন হয় এমন যে কোন উদ্যোগ থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত।
দুই বাংলা অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি ইলি বলেন, চতুর্দিকে যেভাবে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে তাতে শঙ্কা জাগে যে ভবিষ্যতে এখানে বসবাস করা যাবে কিনা। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ঈদগাঁও উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি এম, শফিউল আলম আজাদ জানান, পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন করে আমরা নিজেদের উপর কুড়াল মারছি। প্রকৃতিকে নষ্ট করার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। প্রাকৃতিক ভারসাম্য হীনতা আমাদেরকে ভবিষ্যতে অন্ধকারের দিকে ধাবিত।