বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। বয়সকে হাতের মুঠোয় বন্দি করে রাখতে সবাই চায়। তবে প্রকৃতির নিয়মের সঙ্গে সঙ্গে বয়স বাড়তে থাকে। কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনিও অনেক দিন আপনার বয়স ধরে রাখতে পারবেন। শরীরচর্চা তো করবেনই সেই সাথে কী খাবেন আর কী খাবেন না তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে।
তেল-মশলা:
মুরগী স্বাস্থ্যকর খাবার। কিন্তু সেটি যদি বেশি তেল, মশলা দিয়ে কষিয়ে রান্না করা হয় তাহলে জিভে পানি আসবে ঠিকই কিন্তু অতিরিক্ত এই মশলার কারণে আপনার ত্বকে কালচে দাগ, র্যাশ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া তেল মশলার কারণে হজমের সমস্যা থেকে অ্যাসিডিটির সমস্যা প্রকট হতে পারে। এর ফলে অনিদ্রা রোগ শরীরের বাসা বাঁধতে পারে। সঙ্গে আছে ওজন বৃদ্ধি এবং গ্যাস্ট্রিক। এসব কারণে দ্রুত বুড়িয়ে যাবেন আপনি।
মদ্যপান এবং ধূমপান:
অ্যালকোহল হার্ট কিংবা লিভার তো বটেই ত্বকের পক্ষেও খুব ক্ষতিকর। এই অ্যালকোহল আপনাকে বুড়ো করে দেওয়ার পিছনে সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। অ্যালকোহল সেবনের ফলে ত্বকের বলিরেখা বাড়তে থাকে, ত্বক ক্রমশ কুঁচকে যায়। চোখের নীচে কালো কালি জমতে থাকে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ক্রমশ মুখ বুড়িয়ে যায়।
ধূমপান স্বাস্থ্যের যে ক্ষতিকর তা সবাই জানে। কিন্তু জেনেও বেশিরভাগ মানুষ ভুল করে। অথচ ধূমপান করলে মুখের বলিরেখা ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে। ত্বকের কোষ গঠন বন্ধ হযে গিয়ে ত্বককে নিষ্প্রভ করে তোলে। ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। হয় না।
এনার্জি ড্রিঙ্কস:
এনার্জি ড্রিঙ্কস পান করলে সাময়িক শক্তি পাওয়া গেলেও বয়সের ছাপ তাড়াতাড়ি চলে আসে। এনার্জি ড্রিঙ্কে উচ্চমাত্রায় সুগার থাকে। এতে থাকা অ্যাসিড দ্রুত দাঁত ক্ষয় করে এবং দাগ ফেলে। এতে থাকা সোডিয়াম উপাদান শরীরের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়।
চিনি:
মিষ্টি খেতে অনেকেই ভালোবাসেন। এমনকি চায়ের মধ্যে বেশ কয়েক চামচ চিনি দিয়ে খাওয়ার অভ্যাসও অনেকের আছে। কিন্তু এই চিনি ত্বক এবং স্বাস্থ্য উভয়েরই খুব ক্ষতি করে। ত্বককে তারুণ্য এবং গ্ল্যামারাস করে তুলতে কোলোজেন এবং ইলাস্টিনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ চিনির মধ্যে থাকা গ্লুকোজ এই কোলোজেন এবং ইলাস্টিনকে কমিয়ে দেয়। ফলে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়।
লবণ:
খাবারে অত্যধিক লবণ যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ তেমনই ত্বকের পক্ষে। অতিরিক্ত লবণও ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। রক্ত চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে। যার প্রভাব পড়ে মুখের ত্বকে। শুধু রান্না করা খাবারই নয় চিপস্, চানাচুর, দোকানের ভাজাভুজিতেও থাকে প্রচুর পরিমাণে লবণ।
ফাস্ট ফুড:
সুস্বাদু ফাস্ট ফুড খেতে সকলেরই ভালো লাগে। বিনা পরিশ্রমে ঝটপট দোকান থেকে খাবার তো খেয়ে নিলেন, কিন্তু তাতে যে ত্বক এবং চুলের ক্ষতি করলেন সেই হিসেব কেউ রাখেন না। ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণে লবণ এবং তেল থাকে যেগুলি স্বাস্থ্য এবং ত্বক উভয়ের পক্ষে ক্ষতিকর।
ফ্রোজেন এবং প্রসেসড্ ফুড:
আজকাল মানুষ সব সময় দৌড়ের ওপরে থঅকে। তাই ফ্রোজেন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু এইসব খাবার অভ্যাসে পরিণত করলে পেশির ভয়ানক ক্ষতি হয়। তাছাড়া এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পানি পিপাসা বৃদ্ধি পায় আর এতে কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, মুখ এবং গলা ফোলার সমস্যা দেখা দেয়। প্রক্রিয়াজাত মাংস খেতে সুস্বাদু হলেও, এতে যে নাইট্রেট থাকে তার ফলে খাদ্যনালী, পাকস্থলি, অগ্ন্যাশয় এবং অন্ত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর এসব রোগে আক্রান্ত হলে বয়স এমনিতেই বেড়ে যায়।
পোড়া মাংস:
কাবাব, বারবিকিউ, স্টেক, গ্রিল করা মাংসের ওপরে একটা পোড়া অংশ থাকে। পোড়া মাংস খেলে শরীরে হাইড্রোকার্বনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে শরীরে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন বেড়ে যায় এবং ত্বকের কোলাজেন ভেঙে ফেলে। এজন্য কাবাব খাওয়ার আগে চেষ্টা করুন পোড়া অংশটি ফেলে দিলে ভালো হয়।
ক্যাফেইন:
ক্লান্তি কাটাতে কফি খাওয়ার প্রবণতা আজকাল খুব বেড়ে গেছে। তাৎক্ষণিক শক্তি পেতে, কাজের সময় ঘুম তাড়াতে অনেকেই ঘন ঘন কফি পান করেন। কিন্তু কফিতে থাকা ক্যাফেইন ত্বককে শুষ্ক করে দেয়। অতিরিক্ত কফি নির্ভরতায় ত্বক শুষ্ক হয়ে বুড়িয়ে যেতে পারে। কফি খান তবে তা যেনো অতিরিক্ত না হয়।