প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় সিডরের ১৪তম দিবস আজ। ২০০৭ সালের এই দিনে সিডরের আঘাতে শরণখোলায় গৃহহীন হয়ে পড়ে অধিকাংশ পরিবার। সিডরের পর থেকে বিভিন্ন সময় সরকারি এবং এনজিওর মাধ্যমে হাজার হাজার ত্রাণের ঘর দেওয়া হলেও স্বামী পরিত্যাক্তা হতদরিদ্র শাহিনুর ও হতদরিদ্র মাসুরা বেগমের ভাগ্যে জোটেনি মাথা গোজার ঠাই সরকারি বা বেসরকারি ত্রাণের ঘর। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের কাছে বার বার আবেদন নিবেদন করেও তাদের লাভ হয়নি। তাদের বসবাসযোগ্য ঘর না থাকায় তারা এখন আশ্রয় নিয়েছে অন্যের ঘরে। নানা কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামের মৃত কাসেম হাওলাদারের মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা হতদরিদ্র শাহিনুর এ প্রতিনিধিকে জানায় স্বামী ছগির হাওলাদার দুই কন্যা এক পুত্র সন্তানসহ তাকে ৮ বছর পূর্বে পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে বাগেরহাটে থাকে। শাহিনুর হতদরিদ্র পিতার বাড়িতে কোনভাবে নামমাত্র ঘর তুলে ছেলে মেয়েদের নিয়ে অসহায়ত্ব জীবন যাপন করতো। ওই ঘরটিও গত ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। তারপরেও কোনভাবে ঘরের চালে পলিথিন দিয়ে বসবাস করে আসছিল। পরবর্তীতে প্রবল বর্ষণে টিকতে না পেরে পার্শ্ববর্তী বোনের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।
অপরদিকে একই গ্রামের হতদরিদ্র আঃ রহিম হাওলাদারের স্ত্রী মাসুরা বেগম জানায়, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ খুব কষ্টে দিন কাটছে। নামমাত্র থাকা জমিটুকুতে একটি টিনের ঘর থাকলেও ঘরটি সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কোনভাবে ধার দেনা করে ঘরটি বসবাসযোগ্য করা হলেও ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ঘরের উপর গাছ পড়ে বিধ্বস্থ হয়। তার মধ্যেও খোলা আকাশের নীচে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনভাবে বসবাস করতেন। বিধ্বস্ত ঘরটি ২বছর পূর্বে একেবারেই ভেঙ্গে চুড়ে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর থেকে বৃষ্টি ও নিরাপত্তাসহ নানা কারণে কখনো বোন, ভাই ও মেয়ের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে দিন কাটছে।
তারা আরো জানায়, শরণখোলায় সিডরের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা হাজার হাজার ঘর দিলেও আমরা ঘর পাইনি। যাদের ঘর আছে, টাকা আছে তারাও ঘর পেয়েছে। তারা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে বহুবার আবেদন নিবেদন করেও ঘর পায়নি বলে অভিযোগ করেন। তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
শরণখোলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার খাতুনে জান্নাত বলেন, মুজিব বর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। সবাই ঘর পাবে বলে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে জমি নাই ঘর নাই এমন ‘ক’ শ্রেণির ১১০৩ পরিবারের একটি তালিকা করা হয়েছে তাদের ঘর দেয়া হচ্ছে। জমি আছে ঘর নাই এমন ‘খ’ শ্রেণির পরিবারকে পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে ঘর দেয়া হবে।